আজকের দিনে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আসক্তি হয়তো মোবাইল ফোন। ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথমেই স্ক্রল করা সোশ্যাল মিডিয়া, সারাদিনের কাজের ফাঁকে বারবার ফোন চেক করা, আবার রাতে ঘুমানোর আগে স্ক্রিনের আলোয় চোখ রেখে ক্লান্ত হওয়া—সবটাই যেন এখন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু এই ‘অংশ’টাই আসলে নিঃশব্দে আমাদের মানসিক শান্তি, মনোযোগ, এমনকি সম্পর্কগুলোও কেড়ে নিচ্ছে।
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ মানে এই নিরবচ্ছিন্ন স্ক্রিন-নির্ভরতা থেকে নিজেকে কিছু সময়ের জন্য মুক্ত করা। এর মানে এই নয় যে, ফোন বা ইন্টারনেট পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। বরং দিনটায় কিছু নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে সেই সময়টাতে ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ সবকিছু থেকে নিজেকে একটু দূরে রাখা—এটাই মূল উদ্দেশ্য।
ভেবে দেখুন, শেষ কবে আপনি কোনো বন্ধুর সঙ্গে গল্প করেছেন ফোনে না তাকিয়ে? শেষ কবে নিজের চিন্তার সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন, নাকি প্রতিটি ফাঁকেই স্ক্রল করেছেন রিলস? আমরা বুঝতেও পারি না, প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটিয়ে ফেলি—যা দিয়ে নতুন কিছু শেখা, হাঁটতে যাওয়া, বা সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানো সম্ভব হতো।
ডিজিটাল ডিটক্স শুরু করতে চাইলে একদিনেই বড় পরিবর্তন আনার দরকার নেই। ছোট করে শুরু করুন। যেমন—
সকালে ঘুম থেকে উঠে ৩০ মিনিট ফোন না দেখা
খাবার সময় ফোন দূরে রাখা
প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা “নো স্ক্রিন” সময় নির্ধারণ করা
সপ্তাহে একদিন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নেওয়া
প্রথমে কঠিন লাগবে, কিন্তু ধীরে ধীরে দেখবেন মনটা হালকা হয়ে আসছে, মাথায় স্বচ্ছতা বাড়ছে। এমনকি ঘুমের মানও উন্নত হবে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হবে — আপনি নিজেকে ও আশেপাশের মানুষদের আরও বেশি সময় দিতে পারবেন।
ডিজিটাল যুগে সংযুক্ত থাকা যেমন জরুরি, তেমনি মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন হওয়াও দরকার—নিজেকে পুনরায় চিনে নেওয়ার জন্য। তাই, ফোনটা কিছু সময়ের জন্য রেখে দিন, বাইরের আকাশটা দেখুন, বাতাসটা টের পান, এবং নিজেকে মনে করিয়ে দিন—স্ক্রিনের বাইরেও একটা সুন্দর, জীবন্ত পৃথিবী আছে।