এই শহরে অনেকেই একা থাকে— কেউ চাকরির প্রয়োজনে, কেউ পড়াশোনার জন্য, কেউবা জীবনের নানা প্রেক্ষাপটে। কিন্তু একা থাকা আর একাকী থাকা এক জিনিস নয়। একা থাকা মানে নিজের সঙ্গে সময় কাটানো, নিজেকে জানার সুযোগ পাওয়া; আর একাকী থাকা মানে হলো ভিতরে শূন্যতা অনুভব করা।
একাকীত্ব আসলে এক ধরনের মানসিক অবস্থা— যেখানে আমরা ভাবি, কেউ আমাদের বোঝে না, কেউ আমাদের পাশে নেই। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। একা থাকার সময়টাকেও আমরা যদি একটু সচেতনভাবে ব্যবহার করি, তবে সেটি হতে পারে আত্ম-উন্নয়ন ও মানসিক প্রশান্তির এক দারুণ সময়।
প্রথমেই যা দরকার, তা হলো নিজের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা। নিজের পছন্দের কাজগুলোতে সময় দেয়া—যেমন বই পড়া, গান শোনা, ডায়েরি লেখা বা রান্না করা। এগুলো শুধু সময় কাটানোর মাধ্যম নয়, বরং নিজের ভেতরের সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তোলে।
দ্বিতীয়ত, রুটিনে শৃঙ্খলা আনো। সারাদিন অগোছালোভাবে সময় কাটালে একাকীত্ব আরও বেড়ে যায়। সকালটা হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি দিয়ে শুরু করা, রাতে ঘুমানোর আগে মোবাইল স্ক্রল না করে নিজের দিনের ভালো দিকগুলো মনে করো।
তৃতীয়ত, যোগাযোগে থাকা। প্রতিদিন কারও সঙ্গে কথা বলা জরুরি— বন্ধু, সহকর্মী, প্রতিবেশী বা এমনকি অনলাইন কমিউনিটির কাউকে। এতে মানসিক ভারসাম্য বজায় থাকে, মনে হবে আপনি পৃথিবীর অংশ।
সবশেষে, মনে রাখা উচিত— নিজের যত্ন নেওয়াটা কোনো বিলাসিতা নয়, প্রয়োজন। একা থাকার সময় যদি নিজেকে ভালোবাসা শেখা যায়, তাহলে বাইরের সম্পর্কও অনেক গভীর হয়।
জীবনের প্রতিটি মানুষই কখনও না কখনও একা হয়। কিন্তু এই একাকীত্বই যদি আমরা আত্ম-অনুসন্ধানের সুযোগ হিসেবে দেখি, তাহলে একা থাকা আর কষ্টের হয় না। বরং সেটি হয়ে ওঠে আত্মবিশ্বাস, শক্তি আর মানসিক পরিপক্বতার পথচলা। নিজের সঙ্গে শান্তি খুঁজে পাওয়া মানুষ কখনও সত্যিই একা থাকে না— তার ভেতরেই থাকে এক নিঃশব্দ আলো, যা জীবনকে করে তোলে পরিপূর্ণ ও সুন্দর।