আমাদের সমাজে ‘না’ শব্দটা যেন একধরনের অপরাধবোধ তৈরি করে। ছোটবেলা থেকেই আমরা শিখেছি সবাইকে খুশি রাখতে, সাহায্য করতে, মেনে নিতে। কিন্তু জীবনের পথে এক সময় এসে বুঝি— সবাইকে খুশি করতে গিয়ে আমরা নিজের মনের শান্তিটাই হারিয়ে ফেলি।
আসলে, ‘না’ বলা মানে কাউকে অবহেলা করা নয়; বরং নিজের সীমারেখা স্পষ্ট করা। নিজের সময়, শক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য—সবকিছুরই তো একটা সীমা আছে। কেউ যদি বারবার সেই সীমা অতিক্রম করে, তখন ভদ্রভাবে ‘না’ বলা মানে নিজের প্রতি সম্মান দেখানো।
কিন্তু বাস্তবে এটা সহজ নয়। অনেকেই ভাবেন, না বললে হয়তো সম্পর্ক নষ্ট হবে, কেউ রেগে যাবে, বা তাঁকে স্বার্থপর বলা হবে। অথচ সত্যিটা উল্টো—যে মানুষ নিজেকে সম্মান করতে শেখে, তাকে সবাই একসময় সম্মান করতেই শেখে।
‘না’ বলার দক্ষতা গড়ে তোলা যায় ধীরে ধীরে _
প্রথমে ছোট বিষয় দিয়ে শুরু করুন—যেমন, এমন কোনো আমন্ত্রণ যা আপনার সময় নষ্ট করবে, বা এমন অনুরোধ যা আপনি সত্যিই করতে চান না। ভদ্রভাবে বলুন’এই মুহূর্তে পারছি না’, ‘আমার একটু সময় দরকার’, বা ‘এই কাজটা এখন আমার জন্য সম্ভব নয়।’
এই সহজ বাক্যগুলো আপনাকে অপরাধবোধে ভোগাবে না, বরং মানসিকভাবে দৃঢ় করে তুলবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজের অনুভূতিকে মূল্য দেওয়া _
আপনি ক্লান্ত হলে বিশ্রাম নেওয়া দরকার, আপনার সময় দরকার হলে সেটি কেউ কেড়ে নিতে পারে না। বারবার অন্যের কথা ভেবে নিজের প্রয়োজনকে উপেক্ষা করা মানে নিজেকে অবহেলা করা।
‘না’ বলা আসলে একধরনের আত্মসম্মান। এটা শেখার পর আপনি বুঝবেন, সম্পর্ক টিকে থাকে বোঝাপড়ায়, জোর করে খুশি রাখায় নয়।
যখন আপনি নিজের সীমা ঠিক করে দেবে, তখনই মানসিক শান্তি ফিরে আসবে।
শেষ কথা হলো _
সবকিছু মেনে নেওয়া নয়, কখন ‘না’ বলতে হবে—এটাই জীবনের পরিপক্বতা। মনে রাখবেন, অন্যকে খুশি করার দায়িত্ব আপনার নয়; আপনার প্রথম দায়িত্ব, নিজেকে ভালো রাখা। আর নিজের প্রতি এই ভালোবাসাটাই হলো আত্মসম্মানের সবচেয়ে সুন্দর উপায়।