পোশাক বিক্রেতারা যা গোপন করে…
১১ জুলাই ২০১৮ ১৩:০৩
লাইফস্টাইল ডেস্ক।।
পোশাকের দোকানে গিয়ে সেলসম্যানের মিষ্টি ব্যবহার আর কথায় আমরা মুগ্ধ হই। আবার সেখানে এমন কিছু বিষয় থাকে, যা আপনাকে পোশাক কিনতে আকৃষ্ট করে। অথচ আপনি জানেনই না, এইসব কিছুর আড়ালে রয়েছে আসলে কিছু কৌশল, যা অনেক ক্ষেত্রেই সত্য গোপন করে।। আর এ সমস্ত কৌশলই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে। কিন্তু একজন ক্রেতা হিসেবে আপনি যদি তাদের কৌশলগুলো জানেন, তবে অযথা ঠকে যাবার ভয় থাকে না।
চলুন জেনে নিইে সেরকম ১০টি বিষয়, যা আমরা জানি না।
১ ‘ডিসকাউন্ট’ এর নামে বোকা বানানো
‘ওয়াও, ৭০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট! এখনই কিনতে হবে।’ এমনটিই ভাবছেন তো? একটু থামুন! আমরা অনেক সময় ‘ডিসকাউন্ট’ ধাঁধাঁয় পরে যাই। মনে হয়, কম টাকায় অনেক কিছু কেনা যাবে। আসল ব্যাপার হলো, ডিসকাউন্ট দেওয়ার আগেই পোশাকগুলোর দাম অনেক বাড়ানো হয়। আবার হাতে গোনা দুই-একটি পোশাক ৭০% পর্যন্ত ডিসকাউন্টে বিক্রি করে। বাকিগুলো ১০% বা তার কাছাকাছি। তাই পোশাক কিনে জিতেছেন কিনা সেই অংকটা নিজেই একটু মিলিয়ে নিন।
২ একেক ব্রান্ডের পোশাকের মাপ একেক রকম
ব্রান্ডের ধরণভেদে পোশাকের সাইজেও তারতম্য হয়ে থাকে। আপনি যে সাইজের পোশাকটি খুঁজছেন সেটি হয়তো অন্য ব্রান্ডের ক্ষেত্রে আলাদা। কিন্তু একথা বিক্রেতা আপনাকে নাও জানাতে পারে। ফলে সঠিক সাইজের কাপড় নির্বাচনে আপনাকে একটু মুশকিলে পরতে হয় বৈকি!
৩ বিখ্যাত ডিজাইনারের তৈরি পোশাক মানেই ‘মানসম্মত’ নয়
অনেক সময় নামি দামি ফ্যাশন হাউজগুলো বিখ্যাত ডিজাইনারদের নামে পোশাক বের করে। এগুলোর মূল্য সাধারণ পোশাকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হয়ে থাকে। এদের উদ্দেশ্য- ক্রেতাদের কাছ থেকে আরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া। যদিও ফ্যাশন হাউজগুলোর অল্প কিছু পোশাকই কেবল নামকরা ডিজাইনাররা তৈরি করেন, সবগুলো নয়।
৪ উদ্দেশ্যমূলকভাবে পোশাকের এলোমেলো প্রদর্শনী
পোশাক কিনতে গিয়ে সাধারণ একটি ভুল অনেকেই করেন। অনেক সময় দোকানে কিছু কাপড় অগোছালো ও গাদাগাদি করে রাখা থাকে। সেগুলো দেখে ভাবেন, তুলনামূলক সস্তায় বুঝি কাপড়গুলো পাওয়া যাবে! সেক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, ফ্যাশন হাউজগুলো যথেষ্ট লাভ রেখেই কাপড়ের দাম নির্ধারণ করে। ফলে ওই কাপড়গুলোকে সস্তা ভাবলে নিজেই পরবেন শুভঙ্করের ফাঁকিতে।
৫ রং উজ্জ্বল করতে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার
‘১০০% প্রাকৃতিক’ লেবেল দেখে কি ভাবছেন পোশাকগুলো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য শতভাগ নিরাপদ? না, সবসময় কথাটি সত্য নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পোশাকের রং উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় করতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া দোকানের কোন পোশাকে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়েছে তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা না হলে ধরতে পারা যায় না। এ জন্য নতুন কাপড় সবসময় ধুয়ে পরতে হয়। তাতে কিছুটা হলেও ত্বকের ক্ষতি এড়ানো যায়।
৬ সিনথেটিক ও সুতি কাপড়ের মূল্য একই
অনেকেই মনে করেন, সিনথেটিক কাপড়ের দাম সুতি ও উলের চেয়ে বেশি। তাই সিনথেটিক কাপড় কেনার আশা ছেড়ে দেন। ব্যাপারটি মোটেও সঠিক না। বাস্তবে সিনথেটিক, সুতি ও উলের কাপড় একই উপাদানে তৈরি। ফলে দামটাও সমান।
৭ একই ডিজাইন, কিন্তু ‘মানে’ পার্থক্য
অনেক সময় একই কোম্পানি শো-রুম ও খোলা মার্কেটের জন্য একই ডিজাইনের কাপড় তৈরি করে। কিন্তু এই দুই রকমের কাপড়ে মানে আকাশ পাতাল ব্যবধান থাকে। স্বল্প আয়ের মানুষকে টার্গেট করে খোলা মার্কেটে বিক্রির উদ্দেশ্যে কিছু নিম্নমানের কাপড় তৈরি করা হয়। অন্যদিকে শো-রুমের পোশাকগুলো হয় বেশি আরামদায়ক।
৮ চকচক করলেই সোনা হয় না
কাপড়ের আসল সৌন্দর্য এর রঙে। ঝলমলে রং, সুন্দর প্রতিচ্ছবি বা জরির কাজ দেখে পোশাক কেনে সবাই। কিন্তু একবার ধোয়ার পরেই রং উঠে যায়। এর কারণ- নিম্নমানের কাপড়ের ওপর জমকালো কাজ করে চড়া দামে সেই কাপড় বিক্রি করা হয়। ফলে ভালভাবে রং করা হলেও কাপড়ে রং বসে না।
৯ ফ্যাশনে নিত্য নতুন পরিবর্তন
প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহে পোশাক শিল্পে আসছে পরিবর্তন। যার ফলে ফ্যাশন হাউজগুলোর নিত্য নতুন পোশাক আমাদের নজর কাড়তে বাধ্য। তাই সাধ্যের মধ্যে থাকলে কেউ তার পছন্দের পোশাকটি ছেড়ে আসতে চায় না! অনেক সময় সাধ্যের বাইরেও যায় মানুষ। কারন, পরিবর্তিত ফ্যাশনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে তো! এজন্য চড়া দামে চলতি ফ্যাশনের নতুন পোশাকটি কিনতে বাধ্য করে ফ্যাশন হাউজগুলো।
১০ যা পছন্দ করছেন সেটিই সেরা!
আপনার পছন্দের মধ্যে যে পোশাকটির দাম বেশি সেই পোশাক আপনাকে বেশি মানাবে বলে বিক্রেতা আশ্বাস দেয়। একটু পর আপনি আরও দামি পোশাক পছন্দ করলেন, তখন আগের কথার সুর পাল্টিয়ে বিক্রেতা বলে, দ্বিতীয় পোশাকে আপনাকে আরও আকর্ষণীয় লাগবে। শুধু তাই নয়, আপনার পছন্দের পোশাক নাকি দোকানের সবথেকে সেরা পণ্য! এভাবে কথার ফুলঝুড়ি চলতেই থাকে। বিক্রেতার প্রলোভনে ডুবে না গিয়ে নিজের পছন্দ ও প্রয়োজনীয় পোশাক কিনতে পারাই আসল কথা।
সুতরাং, পোশাক কেনার আগে একটু ভাবুন।
সারাবাংলা/টিসি/এসএস