পর্ব-১
নিমের ক্যারিসম্যাটিক কার্যকারিতা: আজকে সাধারণ আলোচনা দিয়ে শুরু করছি। নিম বা নিম্ব বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশে অতি সুপরিচিত বহুবর্ষজীবি উদ্ভিত। যা বাংলাদেশের সর্বত্র কম বেশি চোখে পড়ে। অবশ্য আগের সময়ের তুলনায় এখন খুব কম দেখা যায়। এই নিম গাছের আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশে। মায়ানমার, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। নিম ছাল, ফুল, ডাল, পাতা ইউনানী আয়ুর্বেদ ঔষধে ব্যবহার হয়। নিম বীজ থেকে তৈল হয় যা চর্মরোগে ব্যবহার হয়। ভেষজ মাত্রায়, ব্যবহারে নিমের কোন অংশে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় নাই। কাঁচা পাতার রস ২৫-৩০ ছারচূর্ণ ৩-৫ গ্রাম ও তেল ২৫-৩০ ফোঁটা খাওয়া যায়। নিমের এক অংশ অন্য অংশের পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়।
উদ্ভিদ আমাদের জীবন রক্ষার্থে অতীব প্রয়োজনীয়। কারণ সবুজের সমারোহ ছাড়া প্রাণীজগতের বেঁচে থাকা একেবারে অসম্ভব। বিশুদ্ধ অক্সিজেন ছাড়া প্রাণী জগত বাঁচতে পারে না। সুতরাং উদ্ভিদ ছাড়া মানুষ বা প্রাণীজগত বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব।
তাহলে আমি বলব এই শংকর যুগের বড় বড় অট্টালিকায় শিক্ষিত সুরম্যল্যাবে প্রশিক্ষিত বিজ্ঞানী, গবেষকদের চাইতে বড় বড় বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ছিলেন আগের যুগের মানুষেগুলো। কারণ তারা আজকের এই ব্যকটেরিয়া ভাইরাস সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন। নইলে তারা কেন বাড়ির দক্ষিণ দিকে জনবহুল জায়গা রাস্তাঘাট, হাটবাজার, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা মাঠে নিম গাছ লাগাতেন। নিম গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিতেন। গ্রামের মানুষেরা বাড়ির উঠানের নিম গাছের তলায় জড়ো হতেন, গ্রামীন ঝগড়া বিবাদ মিটাতেন। মাঠে কাজ করে কৃষকেরা দুপুরে নিম গাছের সুশীতল ছায়ায় গা এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম নিতেন। মুহুর্তে ক্লান্তি চলে যেত। এইজন্য মহান মনীষিরা বলেছেন নিম গাছের প্রকৃতি শীতল।
আমি নিম গাছের আলোচনা শেষ করার আগে আরও কিছু নমুনা বা উদাহরণ পেশ করছি। হয়তো বা বর্তমান প্রজন্ম আমার এই উদাহরণ গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন না। এটা আমি জানার পরেও লিখলাম। কারণ প্রবীণ জ্ঞানীগুনী কিছু মানুষ এখনো আছে।
আগে সন্তান প্রসবের জন্য আলাদা ঘর ছিলো যাকে আমরা আঁতুড় ঘর বলে থাকি। সন্তান সম্ভবা মায়ের সন্তান জন্মের সময় হলে এই আঁতুড় ঘরের দেয়ালে নিম পাতা, নিমের ডাল, খয়ের গাছের ডাল, গুয়ে বাবলার ডাল পাতা দিয়ে রাখা হতো, ঘরের মেঝেতে তিসি, রাইশরিষা, সাদা সরিষা, নিশিন্দা পাতা বিছিয়ে বা ছিটিয়ে রাখা হতো। যেন কোন; অচ্ছুৎ অশরীরি কোন কিছু সদ্যজাত শিশু ও মায়ের কোন অনিষ্ট করতে না পারে। পাঠক লক্ষ্য করছেন, কি স্বচ্ছ ধারণা! এই অচ্ছুৎ, অশরীরি বস্তুটি আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার ব্যকটেরিয়া ভাইরাস। তাহলে ঐ মানুষগুলোকে আমরা বিজ্ঞানী বলতে দ্বীধা থাকার কথা না। তাই বলে আধুনিক বিজ্ঞানকে খাঁটো করছিনা। আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারও বিস্ময়কর।
আগে দেখতাম নিম তলায় সালিশ বসতো, বটতলায় হাট বসতো। বন্দরে, নদীর ঘাটে বটগাছ থাকত। গ্রামের নাম ছিল নিমতলী, বটতলা, বটতলী। এখন দেখি নিমতলী গ্রাম আছে বটে, কিন্তু নিম গাছ নাই। বটতলী হাট আছে বটগাছ নাই।
এখন গবেষনার সময় এসেছে এই নিম, নিশিন্দা, বটগাছের প্রকৃত রহস্য কি? প্রকৃতি কেন আমাদের এই সমস্ত গাছপালা, লতাগুল্ম দান করেছেন। এতটুকু গবেষণা করলে আমাদের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সমাধানে পেয়ে যাব।
আমি এই নিম গাছ নিয়ে ইউনানী, আয়ুর্বেদের মহান বিজ্ঞানী গবেষকদের দেখানো পথে হেঁটে চলেছি, তাতে আমার এখনও কোন ক্লান্তি আসেনি ইনশাআল্লাহ। মৃত্যু পর্যন্ত যেন গবেষণা চালিয়ে যেতে পারি এই দোয়া চাই।
লেখক: বিএ.ডি.ইউ.এম.এস (ঢাকা), ট্রাডিশনাল মেডিসিনের গবেষক, আই.টি.এম, ইউনানী ও ন্যাচারাল মেডিসিনের চিকিৎসক