Thursday 20 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জীবনসঙ্গী ঠিক করার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল করবেন

ফারহানা নীলা
২০ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:৪৭

বিয়ে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সম্পর্কের শুরুতে আবেগের ঝলকানি যতই উজ্জ্বল হোক, দীর্ঘ পথচলা হয় বাস্তবতা, বোঝাপড়া ও সম্মানের ভিত্তিতে। তাই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দুই পক্ষেরই কিছু বিষয় খোলামেলাভাবে যাচাই করে নেওয়া দরকার—যাতে ভবিষ্যৎ জীবনগাথা হয় স্থির, নিরাপদ ও সুখের।

১. ব্যক্তিত্ব, মূল্যবোধ ও জীবনদর্শন মিলছে কি?

সম্পর্ক টেকে তখনই, যখন দু’জনের মূল্যবোধ ও জীবনদর্শন কাছাকাছি হয়।
– ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ
– জীবনে অগ্রাধিকার
– পরিবার, বাচ্চা, কাজ—এসব বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি
ছোটখাটো পার্থক্য থাকতেই পারে, তবে মৌলিক বিরোধ ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

২. শিক্ষাগত ও পেশাগত স্থিতি

শিক্ষা বা পেশা বিয়ের একমাত্র মানদণ্ড নয়, তবে দু’জনের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। এতে প্রত্যাশা ও বাস্তবতার ব্যবধান কমে।
– স্থায়ী চাকরি আছে কি?
– ক্যারিয়ার গ্রোথ কেমন?
– ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

৩. আর্থিক স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা

বিয়ের পর অর্থ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি দাম্পত্যের সবচেয়ে বড় চাপ সৃষ্টি করে।
– আয়-ব্যয়ের ধারণা
– ঋণ বা আর্থিক দায়
– ভবিষ্যতে সংসার ব্যবস্থাপনা কেমন হবে
– কোন সিদ্ধান্ত যৌথভাবে নেওয়া হবে
এসব বিষয়ে আগেই আলোচনা করলে ঝামেলা অনেকটাই কমে।

৪. পরিবারের পরিবেশ ও সম্পর্কের ধরন

বাংলাদেশি সমাজে বিয়ে মানে শুধু দু’জনের নয়—দুই পরিবারকেও জানা।
– পরিবারে স্বাধীনতা, মূল্যবোধ ও আচরণ কেমন?
– অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ আছে কি?
– পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আচরণ কেমন?

দাম্পত্য সুখের জন্য পারিবারিক পরিবেশ একটি বড় বিষয়।

৫. মানসিক স্বাস্থ্য, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও আচরণ

রাগ নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগের ধরন, সম্পর্কের প্রতি দায়িত্ববোধ–এসব বিষয় বিয়ের পর বোঝা কঠিন হলে সমস্যা বাড়ে।
– সমস্যা হলে কীভাবে সমাধান করেন?
– পুরনো সম্পর্কের অভিজ্ঞতা (প্রয়োজনে)
– কোন ধরনের আচরণে ট্রিগার হয়?
মানসিকভাবে স্থিতিশীল ও পরিণত মানুষই সম্পর্ককে পরিণতভাবে ধরে রাখতে পারে।

৬. লাইফস্টাইল ও শখ মিলছে কি?

শখ বা লাইফস্টাইল পুরোপুরি না মিললেও অন্তত সহনশীলতা থাকা দরকার।
– ভ্রমণ, খাবার, সামাজিকতা
– ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ
– কর্মব্যস্ততার ধরন
এগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে সম্পর্ক আরও সহজ হয়।

৭. স্বাস্থ্যগত তথ্য— স্বচ্ছতা ও আস্থা

গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য তথ্য গোপন নয়, খোলামেলাভাবে জানানো উচিত।
– বড় ধরনের রোগ
– জেনেটিক অসুস্থতার ইতিহাস
– মানসিক বা শারীরিক বিশেষ প্রয়োজন
বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করতে স্বাস্থ্য তথ্য বিনিময় গুরুত্বপূর্ণ।

৮. ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও পরিকল্পনা

দু’জনের লক্ষ্য যদি দুই দিকের দিকে টানে— সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হতে পারে।
– কোথায় বসবাস করবেন
– ক্যারিয়ার প্রাধান্য নেবেন কি না
– সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা
– দীর্ঘমেয়াদে কী স্বপ্ন পূরণ করতে চান
এগুলো মিলিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

৯. সংকট ব্যবস্থাপনা ও সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা

জীবনে সমস্যা আসবেই। তখন সম্পর্ক ধরে রাখে দু’জনের যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা।
সঙ্কট এলে—
– পালিয়ে যান, নাকি মুখোমুখি হন?
– আবেগে উত্তেজিত নাকি ঠাণ্ডা মাথায় ভাবেন?
– আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারেন?

১০. পরস্পরের প্রতি সম্মান ও নিরাপত্তাবোধ

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—দু’জনের কি একে অপরের প্রতি সম্মান আছে?
– মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া
– ব্যক্তিগত জায়গা সম্মান করা
– নিরাপত্তা ও স্বস্তির অনুভূতি
এসব না থাকলে অন্য সব মিলেও সম্পর্ক টেকে না।

শেষ কথা

বিয়ে শুধু সম্পর্ক নয়—একটি দীর্ঘমেয়াদি যাত্রা। তাই অল্প সময়ের পরিচয়, সামাজিক চাপ বা বাহ্যিক আকর্ষণে সিদ্ধান্ত না নিয়ে, বরং বাস্তবতা যাচাই করে, খোলামেলা আলাপ করে, দু’জনের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য মিলিয়ে নেওয়া জরুরি।

ভেবেচিন্তে নেওয়া সিদ্ধান্তই দীর্ঘ দাম্পত্যকে করে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সুন্দর।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি