ভাবুন, প্রতিদিন আমরা যেসব খাবার খাই—চিপস, কোল্ড ড্রিংক, বেকারি আইটেম কিংবা প্রক্রিয়াজাত মাংস— তার বেশিরভাগই অজান্তেই আমাদের দেহের ভেতরে তৈরি করছে এক অদৃশ্য বিস্ফোরণ। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়— এই ভুল খাদ্যাভ্যাসই স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ এবং নানা জটিল রোগের প্রধান কারণ।
কেন প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার এত ক্ষতিকর?
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছে, আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি ওমেগা-৩, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। এগুলোর ঘাটতি হলে— খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়ে, ধমনীতে জমে ব্লকেজ, রক্তচাপ অস্বাভাবিক হয়ে যায়- যার শেষ পরিণতি—স্ট্রোক বা হৃদরোগ।
প্যাকেটজাত খাবারে এসব গুণ নেই, বরং থাকে ক্ষতিকর সংরক্ষণকারী পদার্থ, ট্রান্স ফ্যাট, অতিরিক্ত সোডিয়াম ও চিনি, যা শরীরকে দ্রুতই ‘ইনফ্লেমড স্টেটে’ ঠেলে দেয়।
কোন কোন খাবার সবচেয়ে বেশি বিপদ বাড়ায়?
অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, ফ্রোজেন সসেজ, স্যালামি, প্রক্রিয়াজাত মাংস, বেকারি আইটেম, পেস্ট্রি, কোল্ড ড্রিংক ও মিষ্টি পানীয়, অতিরিক্ত লবণযুক্ত প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, সাদা রুটি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট— এসব খাবারে— LDL কোলেস্টেরল বাড়ায়, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে, সোডিয়াম ও চিনি শরীরের পানির ভারসাম্য নষ্ট করে, রক্তচাপ দ্রুত বাড়ায়, স্ট্রোকের মূল ট্রিগার হয়ে উঠে।
পুষ্টিবিদদের মতে— ‘সোডিয়াম শরীরে বাড়লে রক্তচাপও বাড়ে। আর উচ্চ রক্তচাপই স্ট্রোকের প্রধান কারণ।’
সুতরাং দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত—লবণ কম, প্রাকৃতিক পটাশিয়াম বেশি
ভাজাভুজি কম, সবজি ও ফল বেশি, আর সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন— নারকেল পানি, ডাল, পালংশাক, কলা, কুমড়োর বীজ।
কোন তেল ব্যবহার করবেন?
অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন— পরিশোধিত তেল কমাবেন, সরিষার তেল ব্যবহার করবেন। তেল যত কম, তত ভালো। একই সঙ্গে প্রতিদিন ডায়েটে রাখা উচিত— ২টি আখরোট,
১ চা চামচ ফ্ল্যাক্সসিড, সামান্য চিয়া বীজ। এগুলো শরীরে ওমেগা-৩ বাড়ায়, যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে।
পানি, অ্যালকোহল ও লাইফস্টাইল
স্ট্রোক প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, প্রতিদিন হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন, রাত জাগা কমান, স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন।
প্রতিদিনের খাবার কেমন হবে?
বেশি ফল, বেশি শাকসবজি, বীজ ও বাদাম, পর্যাপ্ত পানি, কম তেল, কম প্রক্রিয়াজাত খাবার- এগুলো হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্ক—দুটোকেই সুস্থ রাখে।
পুষ্টিবিদরা বলেন, ‘একবারে বেশি খাওয়া নয়। অল্প অল্প করে বারবার খান। এতে পরিপাকতন্ত্র ঠিক থাকে, শরীরও অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্ত থাকে।’
আজকের খাবারের ভুল অভ্যাস, আগামী দিনের বড় বিপদ তৈরি করতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস শুধু জীবনই বাঁচায় না— এটি আপনার বয়স, মন-মেজাজ, শক্তি, এবং জীবনের মান—সবকিছু বদলে দিতে পারে।