Saturday 22 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিম: মানবসেবায় একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ ঔষধি বৃক্ষ

হাকিম মহাম্মদ আশরাফুল আলম
২২ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৫৫ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৫৮

শেষ পর্ব

গত আলোচনায় আবিষ্কার, উদ্ভাবনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করলাম। আসুন প্রসঙ্গে ফিরে যাই। আমি নিম গাছের লোকায়াতিক ব্যবহার নিয়ে লিখবো ইনশাআল্লাহ।

রূপচর্চায় এখনো নিম হলুদ ট্রাডিশনালী ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষতঃ ভারতীয় উপমহাদেশে নিম, হলুদ রূপচর্চায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। শিশিুদের ত্বকে ফুসকুড়ি চুলকানী হলে মায়েরা নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ বেঁটে গায়ে মাখান। আধা ঘন্টা পর গোসল করান। আরও দেখেছে সদ্যজাত শিশুদের গোসল করানোর জন্য নিম পাতা পনিতে দিয়ে রৌদ্রে রাখতেন। জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছি এভাবে গোসল করালে নকি বাচ্চাদের পুঁইয়ে পায়না অর্থাৎ রিকেট সিয়া হয়না।

বিজ্ঞাপন

আমার মেডিকেল পড়ুয়া মেয়ে দেখি নিমপাতা, কালোকেশি বেঁটে মাথার চুলে লাগিয়েছে। জিজ্ঞাসা করলাম বাবা মাথায় কি লাগিয়েছ? বললো এটা ব্যবহার করলে খুশকি থাকে না, মাথা ঠাণ্ডা থাকে, মস্তিষ্কের অতিরিক্ত পানি নাক দিয়ে বেরিয়ে যায়। আমি বললাম, এটাতো হাকীম কবিরাজদের কথা, তোমাদের বিজ্ঞান এটা সমর্থন করে? মেয়ের জবাব, এটা প্রাকৃতিক সমাধান। এটাতে খুশকি যায়, চুল শক্ত, মজবুত ও কালো হয়, ত্বক হয় মোলায়েম। অল ক্লিয়ারে তা হয়না।

গ্রামের মায়েরা খোশ পাঁচড়া চুলকানীতে নিম পাতা আর হলুদ বেঁটে বড়ি বানিয়ে খায়, এতেই চুলকানী, খোশ পাঁচড়া চলে যায়। ফক্স হলে নিমপাতা, হলুদ বাটা শরীরে লাগান। এতে কালো দাগও যায় আবার গুঁটি দ্রুত শুকায়। আমাদের বিজ্ঞানী গবেষকদের বলব ভাবুন!

নিম শীতল প্রকৃতির উষ্ণতা নিবারক। নিমের সমস্ত অংশে রক্ত পরিষ্কারক ক্রিয়া রয়েছে। এজন্য নিমপাতা ব্যবহারে চুলকানী, খুজলী, পাঁচড়া, দাদ, একজিমা দূরীভূত হয়।

নিম পাতার নির্যাস দিয়ে কুলি করলে মুখ জীবানু মুক্ত হয় ও মাড়ীর ক্ষত দ্রুত সেরে উঠে। নিম পাতার নির্যাস বায়ুনাশক বুকজ্বালা, ত্তিজ্ব, কান ব্যথা ও পিপাসা নিবারক। নিম ফুল ব্যবহারে দাস্ত বন্ধ ও কুষ্ঠরোগ নিরাময় হয়। নিম পাতার এ্যালকোহলিক নির্যাস স্প্রে করলে ঘর মশা-মাছি ও জীবাণুমুক্ত থাকে। মিন তেল সর্বপ্রকার ক্ষতরোগে উপকারী। নিম পাতার ডাঁটা দ্বারা খিলাল করলে মাড়ির রক্ত পুঁজ পড়া বন্ধ হয়। পাতার রস পান করলে বায়ু দূর হয় ও মুত্রনালীর ক্ষত আরোগ্য হয়। নিমের ডাল দ্বারা মেসওয়াক করলে দাঁত পরিষ্কার, মজবুত ও চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি হয়। নিম পাতার নির্যাস প্রসেসিং করে স্প্রে করলে শাক-সবজি, ধান, গম, আম, কাঁঠাল, লিচুর পোকা দমন হয়। এ সমস্ত এলাকায় পোকা-মাকড় পুনরাক্রমণ করে না। নিম পাতার নির্যাস যক্ষা নিবারক। যক্ষা রোগ কিন্তু জীবাণুজ।

আয়ুর্বেদ-এর বৈদিক সূত্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে নিম গাছের হাওয়া স্বাস্থ্যপ্রদ। তোমার রস হৃদয় ভূমির দাহ দূর করে। সর্বোপরি যক্ষারোগটি জীবাণুজ। এই সূত্র ধরেই বিভিন্ন প্রতিভাবার ঋষি বৈদ্যগণ রোগ প্রতিকারের কাজে এই নিমকে কাজে লাগিয়েছেন। কি কি রোগে এই নিম ব্যবহার করা যায় তা নিম্নে তুলে ধরা হল-

  • অর্জীনে: যেক্ষেত্রে পাকস্থলীর রস উদর ব্যপী পাক দেয়, মুখে জল আসে সেখানে নিমের ছাল প্রসেসিং করে খেলে সমস্যা চলে যায়।
  • স্বপ্নদোষ: সে যে বয়সেই হোকনা কেন নিমের ছালের রস কাঁচা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে হয়।
  • শর্করা রোগের ফোড়ায়: স্থুলদেহী শরীরের ঘা সারতে চায় না। নিমের আঠা পরিমাণ মাত্রায় দুধে মিশিয়ে খেতে হয়।

যাদের পেশাব বার বার বা পরিমাণে বেশি হয় সাথে আশপাশ চুলকায়, এক্ষেত্রে কাঁচা নিমপাতা ও হলুদ বেঁটে সকালবেলা খালিপেটে খেতে হয়।

যকৃতের ব্যথা, বমি, চোখ ঝাপসা, শুষ্ককাশ, চাপা অম্ল রোগ, রাতকানা, যে ক্ষত কুষ্ঠের রূপ নিচ্ছে, রক্ত দৃষ্টি, অকাল পক্কতা, মুখে বা মাড়ীতে ঘা, লালামেহরোগ, ক্রিমি সহ নিম গাছের আরও কত গুণাগুণ আছে তা হয়তো অজানা রয়েই যাবে। আর জানার জন্য মানুষ চেষ্টা চালাবে। নিম গাছের হাওয়া-বাতাস স্বাস্থ্য প্রদ ও পরিবেশ বান্ধব। স্বাস্থ্যহীন রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে নিম গাছের নীচে প্রতিদিন ৬ ঘন্টা রাখুন। রোগাক্রান্ত ব্যক্তিটি সুস্থ হয়ে উঠবে। নিম গাছ থেকে আরও গবেষণামূলক আলোচনা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। পরিশেষে আমি শুধু এটুকু বলব, প্রতিটি বাড়ির দক্ষিণ দিকে নিক গাছ লাগানঅফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ ও রাস্তার ধারে নিম গাছ লাগান। এ ব্যপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট শাখা এগিয়ে আসবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করে এ বিষয়ে লিখা এখানেই শেষ করলাম।

লেখক: বিএ.ডি.ইউ.এম.এস (ঢাকা), ট্রাডিশনাল মেডিসিনের গবেষক, আই.টি.এম, ইউনানী ও ন‍্যাচারাল মেডিসিনের চিকিৎসক


আরও পড়ুন _

নিম: মানবসেবায় একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ ঔষধি বৃক্ষ, পর্ব-১

নিম: মানবসেবায় একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ ঔষধি বৃক্ষ, পর্ব-২


বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর