২১ তারিখের ভূমিকম্পটা খুব ছোট হলেও, তার প্রভাব অনেক শিশুর মনে গভীর দাগ ফেলে গেছে। বড়রা হয়তো দ্রুত ভুলে যায়, কিন্তু শিশুদের ভেতরে ভয় আস্তে আস্তে ঘর বাঁধে। রাতে হঠাৎ উঠে বসা, আঁকড়ে ধরে থাকা, অকারণে কান্না, অথবা চুপচাপ হয়ে যাওয়া— সবই বলে দেয় তাদের মন এখনো কেঁপে আছে।
এ কারণেই অভিভাবকের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই সন্তানের সাথে শান্তভাবে বসে কথা বলা দরকার। কী অনুভব করেছিল, কী দেখে ভয় পেয়েছিল, এখন তার মাথায় কী ভাবনা ঘুরছে— এসব জানার চেষ্টা করলে শিশু নিজেকে নিরাপদ মনে করে। অনেক সময় তারা ভাষায় বোঝাতে পারে না, কিন্তু মনোযোগী উপস্থিতি তাদের মন খুলে বলতে সাহস দেয়।
এরপর আসে আশ্বাস। শিশুকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে ভূমিকম্প চিরস্থায়ী নয়, পৃথিবীর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। পাশে থাকা, সময় দেওয়া, জড়িয়ে ধরা, মাথায় হাত রাখা— এই স্পর্শই তাদের ভেতরের আতঙ্ককে নরম করে দেয়। যখন শিশু মনে করে কেউ তাকে রক্ষা করছে, তখন ভয় ধীরে ধীরে সরে যেতে শুরু করে।
শান্ত থাকার ছোট ব্যায়ামও বেশ কাজে দেয়। বড়দের সাথে ছোটরা ধীরে শ্বাস নেয় আর ছেড়ে দেয়— এভাবে শরীরের টান কমে, মনও শান্ত হয়। এটাকে খেলায় পরিণত করলে শিশুরা আনন্দের সাথেই অংশ নেয়।
দৈনন্দিন রুটিনে ফেরানোও জরুরি। নিয়মিত ঘুম, স্কুল, খাবার, খেলা— যতটা সম্ভব আগের মতো চলতে দিলে শিশু দ্রুত স্বাভাবিকতায় ফিরে আসে। রুটিন নিরাপত্তা দেয়, মনে করিয়ে দেয়— জীবন এখনো ঠিক আছে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে— অনেক সময় ভূমিকম্পের অনেক পরে গিয়ে আতঙ্ক, দুঃস্বপ্ন বা আচরণগত পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। যদি কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে যায় অথচ ভয়ের লক্ষণ কমে না, বরং বাড়তে থাকে— যেমন প্যানিক, অস্থিরতা, নিজেকে বা অন্যকে আঘাতের কথা বলা— তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে।
শিশুকে মানসিকভাবে স্থির করতে সময় লাগে, কিন্তু পাঁচটি জিনিস সবচেয়ে কার্যকর— ভালোবাসা, ধৈর্য, মনোযোগ, সঠিক নির্দেশনা এবং নিরাপত্তা বোধ। কারণ শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় কোনো শক্ত জমিন নয়— তার মা-বাবার উপস্থিতি।