বিয়ে মানে শুধু দুটি মানুষের সম্পর্ক নয়—দুটি পরিবারের আশা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং দীর্ঘ জীবনের একটি যাত্রা। সম্পর্কের শুরুটা যদি হয় বিশ্বাস, নিরাপত্তা আর সুস্থতার ভিত্তিতে, তবে সেই পথচলা আরও মসৃণ হয়। তাই বিশ্বজুড়ে এখন বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা (Pre-marital health check-up) হয়ে উঠছে নতুন এক স্বাস্থ্যে সচেতনতার সংস্কৃতি। আমাদের সমাজেও বিষয়টি ক্রমেই গুরুত্ব পাচ্ছে।
এই পরীক্ষাগুলো মূলত দম্পতির ভবিষ্যৎ জীবনকে আরও নিরাপদ, সুন্দর এবং ঝামেলাহীন করতে সাহায্য করে। কিন্তু কী থাকে এসব পরীক্ষায়? কেনই বা এগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরেই আজকের আমাদের লাইফস্টাইল সফট ফিচার।
বিয়ের আগের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন দরকার?
ভবিষ্যৎ সন্তানের জন্য নিরাপত্তা
অনেক সময় অজান্তেই দু’জনের শরীরে এমন কিছু জিনগত রোগ থাকতে পারে যা বিয়ের পর সন্তানের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যেমন—থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট, সিকেল সেল ডিজিজ, হিমোফিলিয়া ইত্যাদি। বিয়ের আগে রক্তের সাধারণ স্ক্রিনিংই বলে দিতে পারে—দম্পতি জিনগতভাবে ‘compatible’ কি না।
একে অপরের স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা
বিয়ে মানে একে অপরের প্রতি দায়িত্ব নেওয়া। তাই সঙ্গীর স্বাস্থ্য নিয়ে সঠিক তথ্য থাকা প্রয়োজন। ডায়াবেটিস, হরমোনজনিত সমস্যা, থাইরয়েড, রক্তস্বল্পতা—এসব জানা থাকলে পরবর্তী জীবনযাপন পরিকল্পনা করা সহজ হয়।
সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমানো
নির্দিষ্ট কিছু সংক্রামক রোগ—এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি/সি, সিফিলিস—প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসা শুরু করা যায় এবং সঙ্গী ও ভবিষ্যৎ সন্তানের ঝুঁকি অনেক কমে।
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রস্তুতি
বিয়েতে মানসিক প্রস্তুতি খুবই জরুরি। অনেক সময় দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, বিষণ্নতা বা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যা আগে থেকেই থাকে কিন্তু প্রকাশ পায় না। একটি সহজ সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং দম্পতির মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করে, ভুল বোঝাবুঝি কমায় এবং সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকলে পরিকল্পনা করা সহজ
যদি কারও অ্যাজমা, হার্টের সমস্যা বা অটোইমিউন ডিজিজ থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে বিয়ের পর দৈনন্দিন জীবনযাপনের রুটিন তৈরিও সহজ হয়। এতে ভবিষ্যৎ জীবন হয় সুরক্ষিত।
বিয়ের আগেই যে পরীক্ষাগুলো করা ভালো
Complete Blood Count (CBC),
Blood Group & Rh Factor,
Thalassemia Screening,
HIV, VDRL, Hepatitis B & C Screening,
Thyroid Function Test,
Diabetes Screening (Fasting Blood Sugar),
Urine Routine Test,
Female-specific tests: Rubella immunity test, hormonal profile,
Male-specific tests: Semen analysis (প্রয়োজনে) ।
সম্পর্কে বিশ্বাস বাড়ায়
সঙ্গীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা দুজনের মধ্যে স্বস্তি ও বিশ্বাস বাড়ায়। বিয়ের আগের এই পদক্ষেপ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকটাকে আরও পরিণত ও দায়িত্বশীল করে তোলে।
সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে
একসময় এসব পরীক্ষা নিয়ে অনেকেই সংকোচ বোধ করতেন। কিন্তু এখন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে। শহর থেকে গ্রাম—সবখানেই দম্পতিরা নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য এগিয়ে আসছেন। এটাকে বলা যায়— ‘সংসার শুরুর আগে সামান্য প্রস্তুতি, অনেক বড় নিশ্চিন্ততা।’
শেষ কথা
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা মানে অবিশ্বাস নয়, বরং নিজেকে ও সঙ্গীকে সম্মান জানানো। এটি সেই ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা নতুন জীবনকে করে তোলে নিরাপদ, সুখী ও নিশ্চিন্ত।
কারণ, সুস্থতা দিয়ে শুরু হলে সম্পর্কের গল্পও হয় সুন্দর।