Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শ্রাবণধারায় ছাদবাগানে সাদা ফুলেদের গান


২৫ জুলাই ২০১৮ ১৬:৩৯

নগরচাষীর কলাম

বর্ষা মানেই সাদা ফুল, বর্ষা মানেই সাদা ঘ্রাণ। বাংলাদেশে বর্ষাকালে বেশীর ভাগ সাদা ফুলগুলো সৌরভময় হয়ে থাকে। ছাদে বা বারান্দায় তেমন কয়টি গাছ থাকলে এই দুই/তিন মাসের জন্য পুরো জায়গাটা সুঘ্রাণে ভরে থাকে। চোখে দেখতেও আরাম লাগে বেশ। বছরের বাদবাকী সময়গুলো সবুজ পাতায় ভরে থাকে তারা। বর্ষার এমন কিছু ফুল নিয়ে আজকের লেখা। তাদেরকে বিশেষ যত্ন নেয়া তেমন লাগে না। নিজস্ব সময়ে তাদের সৌরভময় আগমন মন শান্ত করে তোলে। স্নিগ্ধ করে মন।

বিজ্ঞাপন

বেলী, সবার প্রিয় ফুল। বেলীর সৌরভ পৃথিবীজুড়ে খ্যাত। বেলীকে বিভিন্ন ভাবে পাওয়া যায়। একদম সাধারণ বেলী থেকে ঝুমকো, হাজারী, লতানো এমন অনেক রকমের ফুলের দেখা মিলে আজকাল। বেলীর আরেকটি নাম বনমল্লিকা আর ইংরেজিতে এ্যারাবিয়ান জেসমিন হিসেবে পরিচিত। বেলী ফুল ফাগুন মাস থেকেই দুই একটা করে ফুঁটতে থাকে।

বর্ষায় গাছ ভরে বেলী ফুল দেখা যায়। বেলী ফুল সন্ধ্যায় সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত হয়, পরদিন দুপুরে ঝরতে থাকে। আমি শীতকালে বেলী গাছ ছেঁটে দেই। ছোট্ট একটা চারা থেকে এখন সে প্রায় ছয় সাত ফুট ঝাঁকড়া ঝোপ নিয়ে বসে আছে ছাদবাগানে। বেলীর চারা বর্ষায় শুধুমাত্র ডাল থেকেও হয়। অন্যসময় কলম করে থাকে অনেকে। বেলী ফুল গাছ থেকে ফুল পাওয়ার জন্য ব্যাপক আয়োজনের দরকার হয় না। নিয়মিত জল আর পাতা ছাঁটবার সময় প্রয়োজনে গাছের গোড়ার পুরোনো মাটি আঁধ হাত পরিমাণ ফেলে নতুন করে জৈবসার আর মাটির মিশ্রণ দিয়ে দিলে ভালো হয়। আমি মাঝারী প্লাস্টিকের বালতিতে আমার বেলী ফুল গাছের বাসস্থান করে দিয়েছি। ছাদবাগান বা বারান্দার জন্য বেলী এক এবং অনন্য সাদা সৌরভময় ফুল গাছের নাম।

বেলীর পর সবার আরেকটা প্রিয় ফুলের নাম হচ্ছে, দোলনচাঁপা। বর্ষায় সুঘ্রাণের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুল এই দোলনচাঁপা। একদম আদার মতন দেখতে দোলনচাঁপার কন্দ। পাতাগুলোও তাই। এই ফুল দেখতে একদম প্রজাপতির মতন। পরিপূর্ণ দোলনচাঁপা ফুল যেন সবুজ ডালে বসে থাকা সাদা প্রজাপতি। ইংরেজিতে তাই দোলনচাঁপাকে বাটারফ্লাই জিনজার লিলি নামে ডাকা হয়। একজনার থেকে বছর চারেক আগে একটা কন্দ এনেছিলাম দোলনচাঁপা ফুলের। সেটা বাড়তে বাড়তে এখন তিনটা প্লাস্টিকের গামলায় ভরে গেছে। শীতে দোলনচাঁপা গাছ একদম শুকিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

বর্ষার সাদাফুল

তখন তাদের কন্দগুলো আলাদা করে আবার ঝরঝরা মাটি আর জৈবসারে বুনে দিতে হয়। চৈত্র ফাগুন মাসগুলোতে সবুজ পাতা ছেড়ে তারা বাড়তে থাকে। আষাঢ় আসতেই গাছে ফুলের কুঁড়ি দেখা যায়। একদম হেমন্ত পর্যন্ত তারা ফুঁটতে থাকে। দোলনচাঁপাও বেলীর মতন সন্ধ্যায় সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত হয় আর পরেরদিন দুপুরের পর নেতিয়ে যায়। দোলনচাঁপা হালকা রোদ আসে এমন জায়গায় ভালো হয়। তার সুঘ্রাণের স্নিগ্ধতার রেশ বর্ষার গুমোট গরমে শীতলতার ছোঁয়া দিয়ে যায়।

গত কয়েক বছরে আরেকটি বর্ষার ফুল খুব জনপ্রিয় হয়েছে ছাদবাগান চাষাবাদে, আ্যারোমেটিক জুঁই। দেশী জুঁইএর সাথে কোন মিল নেই এর। একেবারেই বিদেশী ফুল তাই বাংলা নাম দেয়নি কেউ। ইংরেজীতে ক্লিমেটিস নামে ডাকা হয়। রঙে সাদা এবং অনন্য সুঘ্রাণের কারণে মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে গেছে, আ্যারোমেটিক জুঁই নামে।

বর্ষার সাদাফুল

লতানো গাছ, তাই বারান্দার গ্রীলে খুব সুন্দর ভাবে সবুজ হয়ে উঠে সে। ফুল পাওয়ার জন্য অনেক খাটুনী করা লাগে না। ছাদবাগানে হলে ছোট মাচাঙ করে দিলে জড়িয়ে ধরে নিজের মতন ফুল ফোটায়। শীতে একটু ঝিমিয়ে ফুল ফোটে এই গাছে। বৃষ্টির ছোঁয়া পেলেই লতা ছাড়তে শুরু করে। ঝোপ ঝোপ হয়ে সাদা ফুলগুলো যেন সবুজ লতায় জোনাকী পোকার মতন দেখায়। ফুল রাতে তীব্র ঘ্রাণ ছড়ায়, গাছের চারিদিকে ভাসতে থাকে তা। কলম চারা হলে ফুলের বিস্তার ভালো হয়। হালকা রোদে রাখলে ফুলের স্থায়িত্বকাল কিছুটা দীর্ঘ হয়।

সব শেষে বর্ষার আরেকটি প্রিয় ফুলের নাম, গন্ধরাজ। ছেলেবেলায় বেশীর ভাগ বাড়ির সদর দরজায় গন্ধরাজের গাছ দেখা যেতো। ঘন সবুজ রঙের তেলতেলে পাতার গাছ। সে সময় অনেক লম্বা এবং বিশাল ঝোপে গন্ধরাজের গাছ দেখবার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এখন শহরে আর তেমন একটা দেখা যায় না এদের।

বর্ষার সাদাফুল

অনেক খুঁজে পেতে দেশী গন্ধরাজের একটা চারা পেয়েছি এই বছর। ইংরেজীতে কেপ জেসমিন বা গার্ডেনিয়া নামে পরিচিত। খুঁজলে হাইব্রীড গন্ধরাজ পাওয়া যায় নার্সারীতে, ঘ্রাণে দেশী গন্ধরাজের কাছে নয়। ফুল সাদা ফুঁটলেও ধীরে ধীরে হলদেটে রঙ ধারণ করে। শুকানো পর্যন্ত গন্ধরাজের সুঘ্রাণ একই রকম থাকে। বসন্তকাল থেকে বর্ষাকালের শেষ পর্যন্ত ফুল ফুটে থাকে। ঝলমলে রোদে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। ফুলও অনেক ফুটে। ছাদবাগানে ভালো রোদ আসে তেমন জায়গায় তার বাসস্থান করতে হবে। বৃষ্টি না হলে, প্রতিদিন জল দেয়া লাগে। গাছ বড় করতে চাইলে মাঝারী ড্রাম ব্যবহার করতে হবে। শীতে সামান্য ছেঁটে দিলে ভালো হয়।

বর্ষার সাদা ঘ্রাণ সকলের জন্য বয়ে নিয়ে আসুক স্নিগ্ধ সময়। এবার বর্ষাতে হয়ে যাক আপনার সাথে যে কোন সাদা ঘ্রাণের বসবাস। সাদা ফুলের সৌরভে সুরভিত হোক চাষী পরিবার, সুখী পরিবার।

 

ছবি – লেখক 

সারাবাংলা/আরএফ

অ্যারোমেটিক জুঁই গন্ধরাজ দোলনচাঁপা নগর চাষী বর্ষাকাল বর্ষার সাদা ফুল বেলী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর