এমন বরষায় মায়েরা যখন চিন্তায়
২৮ জুলাই ২০১৮ ০৯:০৫
ডা. লুনা পারভীন ।।
“সারাদিন টুপটাপ বৃষ্টি
মন বসে না আর ঘরে,
এমন দিনে কি যে করি
খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করে!”
বাইরে একটানা বৃষ্টিতে যখন চারিদিক ভেসে যাচ্ছে, ঘরে ঘরে ছোট বড় সবাই যখন ভূনা খিচুড়ির মজা নিচ্ছে। তখন আপনি হয়ত চিন্তায় হাবুডুবু খাচ্ছেন ঘরের ছোট্ট মণিটার যত্ন আত্তি নিয়ে। এমন স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় কিভাবে ভালো রাখবেন তাকে?
বৃষ্টির দিনে ভিজে আবহাওয়ার কারণে যেমন কাপড় শুকাতে অসুবিধা হয়, তেমনি বাচ্চার ঠান্ডাজনিত ও পানিবাহিত রোগের প্রকোপেও মায়েরা পেরেশান থাকেন! ঘরবাড়ি ভিজে স্যাঁতসেতে হওয়ার কারনে বাচ্চার চট করে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে, আবার কাপড় ঠিকমতো না শুকালে বাচ্চার গায়ে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। বাইরের ময়লা পানিতে বিভিন্ন জীবাণুর আনাগোনায় হতে পারে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, নানারকম চর্মরোগসহ ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ রোগ। কাজেই, আপনার বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে বাড়তি সতর্কতা নিন!
ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করে সেদিকে লক্ষ রাখুন। বাচ্চার ঘরে কখনোই ভেজা কাপড় শুকাবেন না কিংবা ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রেখে ঘর গুমোট করে রাখবেন না। বাচ্চাকে অবশ্যই নিয়মিত গোসল করাবেন, প্রয়োজনে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। গোছলের পর পরই গা আর মাথা ভালো করে মুছে নিয়ে সুতি খোলামেলা কাপড় পরাবেন যেন ঘাম শরীরে না বসে যায়। খাবার খাওয়ানোর সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, ঘরে তৈরি টাটকা খাবার খাওয়াবেন, পানি বেশী করে খাওয়াবেন আর খাবার সবসময় ঢেকে রাখবেন।
আপনার শিশুটি যদি স্কুলে যায়, তবে অবশ্যই তার সাথে ছাতা ও রেইনকোট দিয়ে দেবেন। ভিজে গেলে ভেজা কাপড় দ্রুত পাল্টে দেবেন, নাহলে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সাথে সাথে চামড়ায় ঘা হয়ে যেতে পারে ময়লা পানি থেকে। এসময়ে প্রচুর পানি ও ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল খেতে দিবেন বাচ্চাকে। বর্ষায় ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এই জ্বর ৫ থেকে ৭ দিনও থাকতে পারে। আবার দু’একদিন পর পর আসতে পারে,সাথে ঠান্ডাকাশি।
এসময় বাচ্চাকে প্রচুর পানি খাওয়াবেন, ভেজাকাপড় দিয়ে গা মুছে ঠান্ডা রাখবেন। ঠান্ডাকাঁশিতে উষ্ণ কুসুম গরম খাবার (আদা/লেবু চা, স্যুপ, ডালের পানি, জাউ) ও তরল খাবার বেশি করে খাওয়াবেন। জ্বর ১০০°ফা. বা এর বেশি হলে প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াবেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। অযথা এন্টিবায়োটিক খাওয়াবেন না, ভাইরাসের উপর এন্টিবায়োটিক কাজ করেনা।
ভাইরাস জ্বর ছাড়াও এবারের বর্ষায় প্রচুর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে আপনার বাসা ও চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। কোথাও যেন কোনরকম জমা পানি না থাকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। মশার ওষুধ ছিটান এমনকি প্রয়োজনে দিনের বেলাও মশারী ব্যবহার করুন। ডেঙ্গু জ্বর হলে বাচ্চাকে প্রচুর পানি ও তরল খাওয়াবেন। সেই সাথে তাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন। শিশুর দাঁত কিংবা প্রশ্রাব পায়খানার সাথে রক্ত পড়লে বা সারা গায়ে লাল ছোপ ছোপ দাগ দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
শিশুর যদি বদহজম বা পাতলা পায়খানা হয় তবে বারবার অল্প অল্প করে পানি খাওয়ান, কোনভাবেই পানিশূন্যতা যেন না হয়। হজম হয় এমন খাবার যেমন, ডাবের পানি, স্যুপ, কাঁচকলার জাউ, ডিমের সাদা অংশ, পাকা কলা ইত্যাদি খাওয়ান। বমি হলে অল্প করে বারে বারে খাওয়ান, যাতে প্রশাবের পরিমাণ কমে না যায়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অযথা কোন ওষুধ খাওয়াবেন না।
সর্বোপরি, এই বৃষ্টিতে বাচ্চাকে নিয়ে এত পেরেশান না হয়ে বৃষ্টির ছড়া শোনান তাকে, বৃষ্টিকে উপভোগ করতে শেখান, ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে শেখান। ঘরে বন্দী করে তার মানসিক বিকাশকে রুদ্ধ করবেন না, স্বাধীন ও বিবেকবান হয়ে বাঁচতে শেখান! “এসো বর্ষার জলে ধুয়ে যাক সব কালো নতুন করে প্রাণের আলো দুহাতে ঢালো!”
লেখক- আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ঢাকা শিশু হাসপাতাল
মডেল- মাহবীর মুহাম্মদ উজান
সারাবাংলা/আরএফ
বর্ষা বর্ষায় শিশুদের রোগ বর্ষার রোগ ভাইরাস জ্বরে করনীয় শিশুর সুস্থতা