নগর চাষীর কলাম – পর্ব ৪ – আমার ‘বেগুনী প্রজাপতি’র গল্প
২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৪:০০
চাষীর চাষাবাদের কথা তো ঠিকই লিখতে শুরু করলাম খুব মজা করে। লিখতে লিখতে হঠাৎ মনে হল যে ছাদবাগানের বেশ কিছু গাছের নাম তো আমার জানা নেই। যখন ফুল ফোঁটে তখন তাদের রঙ আর আকার দেখে নিজের মনের মতন করে একটা নাম দিয়ে দেই। কিন্তু ভেবে দেখলাম, হায় হায় সবার জন্য লিখতে গেলে তো সেগুলোর আসল নাম লাগবে। এই কথা ভেবে ভেবেই দুদিন পার করেছি। তবে বুদ্ধি বের করতে পেরেছি একটা অনেক কষ্ট করে। উঁহু, সেই গোপন কথা ফাঁস করা যাবে না। চাষীর রহস্যের কথা আজকে নাহয় থাকুক পড়ে।
বেগুনী বেগুনী পাঁচ পাপড়ির ফুল। এই গাছটাকে একজন থেকে চেয়ে দত্তক এনেছিলাম। তাঁর মালী ফুলটির নাম বলতে পারেনি তখন। ঘন সবুজ পাতার মাঝে একটা বেগুনী ফুল ছিল তাতে। অনেকটা ঘাসফুলের মতন। আবার মনে হচ্ছিল মর্নিং গ্লোরির ছোট সংস্করণ। হালকা করে আমার একমাত্র কাঁচমিঠা আম গাছের ড্রামের মাটির কোণায় গেঁথে দিয়েছিলাম তাকে। গত বছরের কোন এক সময়। এক মাসও পার হয়নি তখনও তার। হঠাৎ দেখি এক ঝাঁক বেগুনী প্রজাপতির মতন ফুল ফু্ঁটে আছে।
ওদের দেখে মনে হচ্ছিল তারা কোন এক তরুণীর খোঁপায় ঝাঁপ দিয়ে বসে যাওয়ার পায়তারা করছে। তখনও নাম জানিনা তাদের। ছবি তুলে দিয়ে দিলাম সবাইকে দেখাবার জন্য। নাম দিয়েছিলাম ‘বেগুনী প্রজাপতি’। তখন একজন জানালো বেগুনীদের নাম ‘রুয়েলিয়া’। চাষীর কাছে কোন গাছের ইংরেজী নাম মনে রাখা এক মহাবিপদের বিষয়। তারপরও রুয়েলিয়া রুয়েলিয়া জপতে জপতে মুখস্ত করেছিলাম।
রুয়েলিয়া খুবই বান্ধব প্রীতি ফুল গাছ। একটা গাছ বুনে দিলেই হলো। ছয়/ সাত মাসের মাঝে নিজের মতন করে নিজেরাই বিভিন্ন জায়গার মাটিতে স্থান করে নেয়। খুব সহজে ফুল ফোঁটায় এই গাছ। অনেক কম জায়গা লাগে তাদের। যে কোন বড় ড্রামে বা টবে গাছের পাশে জায়গা করে নেয় রুয়েলিয়া। সাধারণত লনের বর্ডার হিসেবে ব্যবহার করে অনেকে। যত্ন কম লাগে, ছড়ায় দ্রুত এবং ফুল ফুঁটতেই থাকে অহরহ। তবে শীতে কিছুটা কম ফোঁটে।
এখন আমার ছাদবাগানের সবগুলো ড্রাম আর টব চঞ্চলা রুয়েলিয়ার ভালবাসার অত্যাচারে তঠস্ত হয়ে থাকে। আগাছার চেয়েও দ্রুত ছড়ানো এই গাছ আমার খুব পছন্দ। বেশীর ভাগ সময় মুঠি ধরে রুয়েলিয়ার চারা দিয়ে দিতে হয় গাছপ্রেমীদের। কখনও কখনও তো ড্রাম আর টবে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় মন খারাপ করে ফেলেও দিতে হয় কিছু কিছু। তবে এরা আপনাকে কখনও হতাশ করে না তাদের ফুলের উজ্জ্বল রঙ আর সৌন্দর্যে।
যারা আমার মতন একটু আগোছালো ছাদ বাগান পছন্দ করেন, তারা রুয়েলিয়াকে না ভালোবেসে পারবেন না। আর বারান্দার রোদ আসে যে কোণে, সেখানে তো একটা টবে রুয়েলিয়ার বাসস্থান হতেই পারে। তাও একেবারে নিশ্চিন্তে। তবে যতটুকু জানতে পেরেছি, তা হোল এই ছোট ছোট ঝোঁপ হয়ে আসা গাছে রোদ লাগলে ফুল আসে বেশি। সারাদিন ফুঁটে থাকলেও বিকেল চলে যাওয়ার আগ থেকেই নিজেদের গুঁটিয়ে নেয় তারা। রুয়েলিয়ার কয়েকটি রঙ আছে। আমার কাছে আছে শুধু বেগুনী রুয়েলিয়া। গোলাপী আর সাদা রঙেরগুলো কেনা হয়ে ওঠেনি আর সময় করে।
নগর চাষীর কলামে চাষী মনের খুশীতে লিখতে থাকে। এতদিনের ভালোবাসার চাষাবাদের জমানো কথাগুলো সবাইকে জানাতে পারে। তবে আমার এই কলামগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্ভিদ বিষেশজ্ঞের তথ্যাদি পাওয়া মুশকিল। চাষীর নিজস্ব যা অভিজ্ঞতা শুধু তাই এসব লেখায় পেয়ে থাকবেন। হয়তো কখনো কখনো কোন কোন গাছের নাম ভুল হতে পারে। চাষের সময়টা সঠিক নাও হতে পারে। কিন্তু যতগুলো গাছ আমার পরিবারে আছে তাদের সবটুকু গতিবিধি জানা হয়ে গেছে। সেই জানাটুকুর পুরোটা আপনাদের জন্য বলতে পারব। তাই আমার মতন আপনিও বিশ্বাস করতে শুরু করুন, ‘চাষী পরিবার, সুখী পরিবার।’