‘প্রথম কবে ফুটেছে কাশ সেই শুধু তা জানে’
২৫ আগস্ট ২০১৮ ১৩:১৪
তিথি চক্রবর্তী।।
কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। ভোরের বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ, নদীর ধারে দুধসাদা কাশফুল- জানান দেয় শরৎ এসেছে।
রৌদ্র-ছায়ার খেলায় মেতে ওঠা শরতকালের মৌলিক দুটি রং- সাদা ও নীল। এই চেনা রঙ দুটির আবেদন চিরন্তন। সাদা ও নীলে শুধু প্রকৃতি নয়। আমরাও যেন সুন্দর হয়ে উঠি এই রঙে। সাদা কাশফুল আর নীল আকাশের ছোঁয়া লাগে তাই শরতের সাজে।
শরৎকে ঘিরে দেশের বেশ কিছু ফ্যাশন হাউজ তাই তাদের পোশাকের রঙে, নকশায় ও প্যাটার্নে এনেছে পরিবর্তন।
সাদা রং তৈরি করে সূর্যরশ্মি। বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন বহুকাল আগেই প্রমাণ করেন যে, সূর্যের আলো যখন প্রিজমের মধ্য দিয়ে যায় তখন লাল, সবুজ, নীল এই তিন রং দেখা যায়। আবার সাতরঙা গোলাকার শক্ত কোন কাগজ বা বোর্ড জোরে ঘুরতে থাকলে দেখা যায় সব রংই উধাও। শুধুমাত্র সাদা একটা কিছু চোখে পড়ছে। সাদা মানে শুধু সাদা নয়। চাঁপা সাদা, ঘিয়ে সাদা, উজ্জ্বল সাদা- নানা শেড চলে আসে পোশাকে। সাদা হলো শান্তি ও শুভ্রতার প্রতীক।
শরতে দূর্গাপূজায় সাদার প্রচলন যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। কথায় আছে, সাদা পরিধানে মনে আসে নির্মলতা। ফলে একাগ্রচিত্তে আরাধনা করা যায়।
আর নীল? গবেষণা বলছে, এই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় রঙ নীল। নীল মনে প্রশান্তি আনে। ধৈর্য বাড়ায়। নীল মানে ভালবাসা। নীল আমাদের মনের রঙ।
শরতের সাজগোজ
মেকআপ
এই গরমে ত্বকের সুরক্ষায় নিতে হয় বাড়তি যত্ন। রোদ ও ধুলোবালি ত্বকের ক্ষতি করে। এজন্য ত্বকের ধরন বুঝে ফেসিয়াল করুন। ডিপ ক্লেনজিং ফেসিয়াল করতে পারেন। এতে ত্বক পরিষ্কার দেখাবে এবং মেকআপ ভাল বসবে। যেহেতু গরমটাও ভাদ্রের, তাই মেকআপ হবে খুব হালকা। যারা দিনের বেলায় মেকআপ করতে চান তারা মেকআপের আগে এক টুকরো বরফ কাপড়ে নিয়ে মুখে ঘষে নিন। এতে অনেকক্ষণ পর্যন্ত মেকআপ ভাল থাকবে। এরপর এসপিএফ ৪০ যুক্ত সান্সক্রিন লোশন বা ক্রিম মুখে, গলায় ও হাতে লাগান। ২০-২৫ মিনিট পর মেকআপ করুন। গরমে লিকুইড নয়, ম্যাট ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে হবে। এতে মেকআপ গলবে না। ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তাহলে রোদে গেলে আরও ঘেমে তৈলাক্ত হয়ে যাবে। এই ধরনের ত্বকে আগে লুজ পাউডার লাগিয়ে তারপর ফাউন্ডেশন লাগান। এরপর কমপ্যাক্ট পাউডার লাগালেই মেকআপ সুন্দর হবে। তাছাড়া চোখের নিচে কালো দাগ ও মুখে দাগ থাকলে কনসিলার লাগিয়ে ম্যাট ফেস পাউডার লাগাতে হবে। তবে রাতের মেকআপে লিকুইড ফাউন্ডেশন লাগাতে পারেন।
লিপস্টিকের জন্য পিচ, হালকা মেরুন, ওয়াইন রেড, হালকা গোলাপি বেশ মানানসই। আজকাল লিপ লাইনারের চেয়ে একটা ছড়িয়ে লিপস্টিক দেবার চল এসেছে। সেক্ষেত্রে ম্যাট লিপিস্টিক দিয়েই তা করতে হবে। লিকুইড লিপস্টিক এই গরমে না দেয়াই ভাল। বিশেষ করে দিনের বেলা গ্লাসি লিপস্টিক এড়িয়ে চলুন।
চোখকে একটু বেশি হাইলাইট করা যেতে পারে। চোখের সাজে আমরা সাধারণত কাজল, আইলাইনার ও মাসকারা ব্যবহার করি। এগুলোর মধ্যে যেকোন একটি বা দুটি বেছে নিতে পারেন এই গরমে। তবে আইলাইনার ও মাশকারা অবশ্যই পানিরোধক হতে হবে। সঙ্গে হালকা আইশ্যাডো লাগাতে পারেন। চুলে খোঁপা কিংবা বেণী দুটোই মানাবে।
গয়না
শরৎকাল স্নিগ্ধতার প্রতীক। তাই এসময় হালকা সাজই ভাল। খুব বেশি গয়না পরার দরকার হয় না। ছোট কানের দুল ও আংটি পরা যেতে পারে। এই সাজে হাতে চুড়ির বদলে বেলি ফুলের মালাও জড়িয়ে নিতে পারেন।সুতি পোশাকের সাথে পুঁথি, মেটাল কিংবা মাটির গয়না মানায়।
পোশাক
শরতে সুতি, ঢিলেঢালা ও নরম পোশাক আরামদায়ক। সুতি পোশাক দ্রুত ঘাম শুষে নেয়। সুতির পাশাপাশি অ্যান্ডি, শিফন, লিলেনের পোশাকও আরামদায়ক। গরমে সাদা, হালকা গোলাপি, হালকা নীল, আকাশি, বাদামি, ধূসর এই রঙের পোশাক ব্যবহার করতে পারেন। এই রঙগুলো শুধু তাপ শোষণ করে না, চোখেও প্রশান্তি এনে দেয়। ছোট হাতার লম্বা ফতুয়া, হাতা কাটা কামিজ বা ছোট হাতার শার্ট পরতে পারেন। সালোয়ারের ক্ষেত্রে ধুতি, পালাজ্জ ও প্যান্ট ধাঁচের সালোয়ার ব্যবহার করতে পারেন। গরমে স্বস্তির কথা মাথায় রেখে নির্বাচন করতে পারেন ব্লাউজের ডিজাইন। স্লিপলেস ব্লাউজ পরতে পারেন। এছাড়া ব্লাউজের গলাটা পেছন দিকে বড় ম্যাগি হাতা ব্লাউজও আরামদায়ক।
ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, এই সময়ে মানুষ শহর থেকে একটু দূরে কাশবনে বেড়াতে যায়। এই পরিবেশে হালকা নীল ও সাদায় বেশ মানিয়ে যায়। তবে শরৎ জুড়ে সবসময় তো সাদা নীলই পরা সম্ভব না। বৈচিত্র আনতে এর পাশাপাশি অন্য কোমল রঙগুলোও খুব চলে। তবে পোশাক সাদা বা নীল অথবা অন্য যেকোন হালকা রঙ যাই হোক না কেন, তা অবশ্যই সুতি হতে হবে। ফ্লোরাল প্রিন্টও খুব ভাল মানিয়ে যায় শরতে।
সৌন্দর্যকে কখনও ফ্রেমে বাঁধা যায় না, আর আমরা তা করতেও চাই না। বর্ষাকে বিদায় জানিয়ে শরৎ তার স্বচ্ছতা ও শুভ্রতার সমাহার নিয়ে ধরা দিয়েছে প্রকৃতিতে। এই রূপ যখন কাপড়ে ফুটে ওঠে তখন শুদ্ধতায় পরিপূর্ণ মনটি হয়ত কোন এক কাশবনে ধরা দেয় ফ্রেমে।
ছবি- কামরুল হাসান ও আফজাল হোসেন
মডেল- সাদিয়া আস্ফি তিশা
সারাবাংলা/টিসি/এসএস