Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কামরাঙা ফুলের আনন্দময়ী রঙে


১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:২৭

পর্ব- ২৯ ।। 

ছাদবাগানের বয়স বাড়ছে যত, ঠিক ততটাই দেশী ফুলের গাছ এই উঠোনে আনবার শখ জাগছে আমার। দেশী ফল গাছও সংগ্রহ করছি অল্প অল্প করে। তবে নিজের হাতে বড় করা ফল গাছের ফল বা শাক সবজি খাওয়ার চেয়ে প্রতিটা ফলের ফুল বা শাক সবজির ফুল দেখবার আগ্রহের মাত্রা অনেক বেশী আমার। জামরুল, পেয়ারা, মুলা, পালং, চিচিংগার মতন প্রায় অনেক ফল আর শাক সবজির ফুল দেখা হয়ে গেছে আমার। তবে কামরাঙা ফুলের মতন এতো আনন্দময়ী রঙ আর অন্য কারোর সাথে মিলে না একদমই।

বিজ্ঞাপন

বছর আড়াই আগে ছোট্ট লিকলিকে মাত্র একডালের একটা কামরাঙা চারা বাসায় নিয়ে এসেছিলাম ব্র্যাক নার্সারী থেকে। ছাদবাগানে ফলের গাছ দত্তক আনলে হাইব্রীড চারা আনাটা বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করি। ড্রামের মাটিতে ফল গাছের ফলন দেখাটা অনেক অবিশ্বাস্য বিষয় বলে মনে হয় আমার। মাঝারী ড্রামে দুইভাগ মাটি আর এক ভাগ জৈবসারের মিশ্রণে কামরাঙা গাছটির বাসস্থান করে দিয়েছিলাম। দুই মাসের মাথায় সে প্রথম ফুল ফোঁটালো। একেবারে ছোট ছোট কুঁড়ি আর কয়েকটা ফুল এক থোকায় করে হেসেছিল। সেবার কামরাঙা ফল আর দেখা হয়নি। ঝড় আর বৃষ্টিতে সবগুলো ফুল ঝরে গিয়েছিল। তবে কামরাঙা ফুলের সেই আনন্দময়ী রঙের অপেক্ষায় থাকতাম পরবর্তী সময়গুলোতে।

ছয় মাসের মাথাতেই কামরাঙা গাছটি সবুজ পাতায় ঝাকড়া হয়ে ছড়িয়ে বড় হচ্ছিল। সে বছরের ভাদ্রের ঘন গরমে পুরো গাছ জুড়ে থোকায় থোকায় ফুলে ভরে গিয়েছিল। সবুজ পাতা আর জাম রঙা গোলাপী রঙা ফুলগুলোতে কামরাঙা গাছটা আলোকিত হয়ে থাকতো। সেই বারই প্রথম ফুল থেকে কামরাঙা ফল পেয়েছিলাম। যদিও ফুলের সংখ্যার তুলনায় ফলের দেখা মিলেছিল কম। অদ্ভুত এক নিয়মে ফল বড় হয়ে পরিপূর্ণ হবার সাথে সাথে কামরাঙা গাছের সব পাতা হলুদ হয়ে ঝরে যায়। তখন আগাগুলো অল্প করে ছেটে দিলে আরো ঝাকড়া হয়ে ওঠে গাছ। বছরে একবার গাছের গোড়ার আধ হাত মাটি সরিয়ে নতুন করে জৈবসার আর মাটির মিশ্রণ দিলে ফুল বা ফলের দেখা মিলে বেশী। কামরাঙা গাছে প্রতিদিন জল দেয়া বাধ্যতামূলক। অত্যন্ত নরম প্রকৃতির গঠন তাই অতি রোদ বা খরায় নেতিয়ে পড়ে সে। তাছাড়া ফুল আসবার সাথে সাথে ফল বড় হওয়া পর্যন্ত ভরপুর জল খাওয়াতে হয় কামরাঙা গাছকে।

বিজ্ঞাপন

অনেকে কামরাঙা ফলের রসে শারীরিক সমস্যা হওয়ার কথা বলে থাকেন। যদিও বা পরিসংখ্যানে জানা গেছে যে কামরাঙার রস প্রতিদিন পান করলে সেসব শারীরিক সমস্যা হবার কথা। সত্যি বলতে ছাদবাগানের একটি ড্রামে থাকা একটি কামরাঙা গাছে প্রতিদিন পান করবার মতন ফল এখনও ফলতে দেখিনি। যদিও আমার আড়াই বছর বয়সী গাছটি বছরে দুবার ফলন দিয়ে থাকে। ঝড় বৃষ্টি বা অতি খরায় ফুলগুলোর অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। তারপরও যে কয়টি কামরাঙা বড় হয় তার বেশীর ভাগই টিয়া পাখীরা আরাম করে খেয়ে যায়। এতো কিছুর পরও এখন পর্যন্ত পরিপূর্ণ মাপের যে কয়টি অক্ষত কামরাঙা পেয়েছি, তাতে ছোট পরিবারে সপ্তায় দুবার একবেলা মজাদার ভর্তা হয়ে যাওয়ার কথা। ব্র্যাক থেকে আনা কামরাঙা গাছটির ফল অন্যান্য কামরাঙা থেকে অনেক বেশী সুস্বাদু এবং মিষ্টি।

জাম রঙা গোলাপী ফুলগুলো থেকে গাঢ় সবুজ থেকে হালকা সবুজ কামরাঙা পেকে উঠলে একেবারো হলুদাভ হয়ে ওঠে। কামরাঙা ফল না খেলেও এর ফুল আর ফলের রঙের খেলা দেখবার জন্য হলেও একখানা গাছ দত্তক নেয়া যায়। যদি ছাদের ড্রাম খালি থেকে থাকে, তাহলে একটা কামরাঙা গাছ আনতেই পারেন।

বছরে দুবার প্রায় দুই তিনমাস আনন্দময় রঙ দেখতে দেখতে আমার মতন আপনিও বলবেন ঠিক, চাষী পরিবার সুখী পরিবার।

সারাবাংলা/আরএফ 

কামরাঙা কামরাঙা ফুল ছাদবাগান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর