নতুন সংসার কীভাবে সাজাবেন?
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৯:২২
রাজনীন ফারজানা।।
বিয়ের দুই বছর পর শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে স্বামী তানভীরের সাথে নতুন সংসার শুরু করতে যাচ্ছেন ফারাহ। থালা বাসন থেকে আসবাবপত্র সবই নতুন করে গোছাতে হবে তাদের। সোশাল মিডিয়ায় মেয়েদের এক গ্রুপে ফারাহ তাই পোস্ট দিলেন নতুন সংসারে কী কী না হলেই নয় এ ব্যপারে যেন গ্রুপের মেয়েরা তাকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে।
অনেককে বিয়ের পরপরই নতুন সংসার শুরু করতে হয়। তারাও চিন্তায় পড়ে যান নতুন সংসার কীভাবে কী শুরু করবেন তাই নিয়ে।
যারা নতুন সংসার শুরু করবেন কিন্তু হাতে বাজেট কম, তাদের জন্য রইল কিছু দরকারি পরামর্শ।
দুজনেই চাকরিজীবী হলে বিয়ের আগে থেকেই অল্প অল্প করে জিনিসপত্র গোছাতে পারেন। যেমনটা করেছিলেন তাসনিম-নীল দম্পতি। বিয়ের আগে থেকেই একটু একটু করে শখের থালাবাটি, কুশন, কুশনকাভার, বুকশেলফ ইত্যাদি নানা জিনিস গুছিয়েছিলেন তারা। তাছাড়া ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বন্ধুরা যখন জানতে চেয়েছেন তাদের কী উপহার দেবেন, তখন তারা তাদের বাজেট জেনে ঘরের দরকারি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চেয়েছিলেন। আত্মীয় বন্ধুদের মধ্যে যাদের বাজেট বেশি ছিল তারাই উপহার দিয়েছেন ওভেন, ব্লেন্ডার বা টিভি।
কিন্তু আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে উপহার পাওয়ার এমন সুযোগ সবাই নাও পেতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনাকে অনেক আগে থেকেই বাজেট গোছাতে হবে।
একটা সংসার শুরু করতে যা যা না হলেই নয় সবার আগে কিনতে হবে সেসব। আসুন দেখে নেই নতুন সংসার করার শুরুতে কোন কোন জিনিস কিনতে হবে।
যা না হলেই নয়
- সবার আগে ঠিক করতে হবে বাসা। বিয়ের আগে থেকেই বাসা খুঁজে রাখা ভালো। বাসা ভাড়া নেওয়ার আগে অন্তত দু’মাসের এডভান্স দিতে হয়। তাই বাসা ভাড়া এবং এডভান্সের টাকা সবার আগে হিসেবে রাখতে হবে।
- বাসা নেওয়ার পর সবার আগে প্রয়োজন সব ঘর, বারান্দা, বাথরুম এবং রান্নাঘরের বাতির ব্যবস্থা করা। সব ঘরের জন্য একটা করে বৈদ্যুতিক পাখাও প্রয়োজন
- একটা দুই বার্নারের গ্যাসের চুলা এবং ফ্রিজ। ফ্রিজ চাইলে কিস্তিতেও কেনা যায়। একটা পানির ফিল্টার। দুজনের সংসারে শুরুতেই বড় ফ্রিজ অতটা কাজে লাগবে না। তবে এসব জিনিস যেহেতু দীর্ঘদিন টেকে তাই বুঝেশুনে একটু ভালো ব্র্যান্ডের কেনাই ভালো হবে।
- একটা আলমারি কিংবা ওয়ার্ডরোব। হাতিল, অটবি ছাড়াও রোকেয়া সরণি, বাড্ডা, পান্থপথ, শাহজাহানপুর ইত্যাদি জায়গায় আসবাবের দোকান পাবেন।
- সব ঘরের জন্য একসেট করে পর্দা। বুটিক হাউজগুলোতে মনের মত পর্দা পেয়ে যাবেন। তাছড়া এলিফ্যান্ট রোডে নানা ধরণের ও ডিজাইনের পর্দা পাবেন।
- রান্নার জন্য কয়েক সাইজের হাড়ি, কড়াই, প্রেশার কুকার, গামলা, বাটি, খুন্তি। রান্নার পাত্র একবারে নন স্টিক কিনতে পারলে ভালো, টিকবেও অনেকদিন, পরিষ্কারের ঝামেলাও কম। আর খাবার খাওয়ার জন্য অন্তত একসেট করে প্লেট, বাটি, চামচ, জগ, গ্লাস ইত্যাদি। নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা, গুলশান ডিসিসি, তালতলা, মৌচাক, ইস্টার্ণ প্লাজা ইত্যাদি মার্কেটে এসব জিনিস কিনতে পারেন।
- রান্নাঘরে বিল্ট ইন র্যাক না থাকলে থালাবাটি ও হাড়ি কড়াই রাখার জন্য র্যাক। নিউ মার্কেটেই পেয়ে যাবেন মনের মত র্যাক।
- শোবার জন্য খাট কেনার টাকা না থাকলে ম্যাট্রেস বা তোষক, বালিশ আর কিছু কুশন কিনতে পারেন। নীলক্ষেত কিংবা নিউ মার্কেটে পাবেন এসব।
- বিছানার জন্য অন্তত দুই সেট চাদর আর ব্যবহারের জন্য তোয়ালে
- বেশ কয়েকটা পাপোষ লাগবেই
- শু র্যাক
- ওয়াশরুমের জন্য বালতি, মগ, বদনা, বেসিনের তোয়ালে, পেস্ট ব্রাশ রাখার হোল্ডার, সোপকেস
- বাসা পরিষ্কারের জন্য ঘর মোছার মপ, টয়লেট এবং কমোড পরিষ্কারের জন্য কয়েকটা ব্রাশ।
- একটা আয়রন
উপরের সব জিনিস কেনার পর যদি আপনাদের হাতে আরও টাকা থাকে তবে কিছু ইলেকট্রনিক জিনিস কিনতে পারেন। এই জিনিসগুলো আপনার জীবনযাপনকে আরও সহজ করবে।
- একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেন
- ব্লেন্ডার
- রাইস কুকার
- ওয়াশিং মেশিন
একবারেই যে পুরো বাড়ি গুছিয়ে ফেলতে পারবেন তা না। তবে মূল প্রয়োজনীয় জিনিস এগুলোই।
একটা একটা করে ঘর গোছাতে হবে। সেক্ষেত্রে শোবার ঘরের পর খাবার ঘর, বসার ঘর আর সবশেষে বাসার অন্যান্য ঘরের জিনিসপত্র কিনুন।
খাবার ঘর
শুরুর দিকে হাতে বেশি টাকা না থাকলে খাবার টেবিল কিনতে পারবেন না হয়ত। সেক্ষেত্রে খাবার ঘরটা একটু ভিন্নভাবে সাজাতে পারেন। খাবার টেবিলের উপরের ফ্রেমটা কিনে নিয়ে তার সাথে চারটা ফ্লোর কুশন দিয়ে বসার ব্যবস্থা করতে পারেন। টেবিলের ফ্রেমটা রাখার জন্য পায়ার জায়গায় চারপাশে চারটা মাটির চওড়া মুখের ফ্লাওয়ার ভাস বা চ্যাপ্টা হাড়ি রাখলে দেখতে বেশ সুন্দর লাগবে। এসব হাড়ি ভাস কিংবা হাড়ি দোয়েল চত্বরসহ নগরীর নানা জায়গায় পাওয়া যায়।
বসার ঘর
বসার ঘরে সোফা লাগবেই তা কিন্তু না। বসার ঘরে একটা ডিভান কিনে কুশন দিয়ে সাজাতে পারেন। নাহয় ছোট তোষক ভাঁজ করে ফ্লোরে রেখে তার উপর সুন্দর একটা ব্লক বা হাতের কাজের চাদর বিছিয়ে রঙিন কুশন দিয়ে সাজালে ভালো লাগবে। মেহমান আসলে এই তোষক বিছানা হিসেবেও ব্যাবহার করা যাবে।
বসার ঘর সাজাতে মাটির ছোটবড় ফ্লাওয়ার ভাস, ফুলের টব দিয়ে সাজালে ভালো লাগবে আবার খরচও কম হবে। বসার জন্য পাটের ম্যাট আর ফ্লোর কুশনের সাহায্য নিন। সোফাটা পরে কিনলেও চলবে। আবার আড়ং, যাত্রা ইত্যাদি বুটিক শপে সুন্দর সুন্দর কাঠ বা দড়ির টুল পাওয়া যায়। সেগুলো দিয়েও বসার আয়োজন করতে পারেন কম খরচেই।
নতুন বাসায় এই নাই সেই নাই দেখে যদি মন খারাপ লাগে তাহলেও আছে সমাধান। বাড়িতে প্রচুর গাছ রাখুন। দেখতেও ভালো লাগবে, মনও ভালো করবে।
মডেল- দোলা ও প্রতীক
সারাবাংলা/ আরএফ/ এসএস