যেসব ভুলে নষ্ট হবে আপনার সাধের কফি
৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৩৮
লাইফস্টাইল ডেস্ক।।
আন্তর্জাতিক কফি অর্গানাইজেশনের মতে প্রতি বছর কফি পানকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর তা প্রায় দশ শতাংশ করে। চমৎকার এক কাপ কফি বানানো শুধুমাত্র জটিল প্রক্রিয়াই নয়, তা একধরণের শিল্পও বটে। দারুণ এক কাপ কফি পান করতে আর কফি শপে ছুটতে হবে না, যদি মাথায় রাখেন এই বিষয়গুলো-
প্রয়োজন কফি গ্রাইন্ডার
টাকা বাঁচাতে বা সময় নাই এই অজুহাতে আমরা গুঁড়ো করা কফি কিনি। কিন্ত ভেবে দেখুন তো বাজারে যেয়ে বারিস্তার হাতে বানানো মনোমত এক কাপ কফি খেতে খুব একটা কম টাকা খরচ হয়না। এর থেকে প্রতিবার চমৎকার এক কাপ চনমনে তাজা ফ্লেভারে ভরা কফি খেতে বাড়িতেই একটা কফি গ্রাইন্ডার মেশিন কিনে নিন।
সাশ্রয়ের কথা ভুলে যান
কফি শপে ঢুকলে যেমন কফির গন্ধে মন চনমন করে ওঠে, তেমন এক কাপ কফি আপনিও বানাতে পারেন বাড়িতে বসে। তবে তার জন্য খরচ বাঁচানোর চিন্তা করে বোতলজাত গুঁড়ো কফি কিনলে চলবে না কিন্তু। ভালোমানের আস্ত কফি বীজ কিনতে হবে।
ঠিকমত সংরক্ষণ করতে হবে কফিবীজ
বাতাস, আলো আর তাপ হল কফি বীজের তিনটি প্রধান শত্রু। তাই কফিবীজ সংরক্ষণে সাবধান হতে হবে। এয়ার টাইট কাঁচ বা টিনের কৌটায় রেখে বাতাস বের করে তারপর মুখ শক্ত করে আটকে সংরক্ষণ করতে হবে কফিবীজ। সম্ভব হলে প্লাস্টিক বা সিলভার ফয়েল মুড়ে তারপর কৌটার মুখ লাগান। দোকান থেকে কেনার সময় প্লাস্টিক প্যাকেটে সংরক্ষিত কফিবীজ না কিনে কাগজের প্যাকেটের কফিবীজ কিনতে চেষ্টা করুন।
ফ্রিজে কফিবীজ! কখনোই না
কিছু কিছু জিনিস আছে যা খুব সহজে অন্য জিনিসের ঘ্রাণ এবসর্ব করে বা শুষে নেয়। কফি হল এমনই একটা জিনিস যা সসেজের পাশে থাকলে সসেজের গন্ধ শুষে নেবে, পেঁয়াজের পাশে থাকলে পেঁয়াজের! যত ভালো করে প্যাক করেন না কেন, কফি তার নিজস্ব তাজা গন্ধ হারাবেই। নিজের বাসায় তো ফ্রিজে রাখবেনই না এমনকি সুপার মার্কেট থেকে ফ্রিজে সংরক্ষিত কফি বীজ না কেনাই ভালো হবে।
১:১০ রেশিও ঠিক রাখতে হবে
যদি সম্ভব হয় তবে কফি ও পানির রেশিও বা মাপ ঠিক করে তবে কফি বানান। ১ গ্রাম কফির সাথে ১০ মিলিলিটার পানি মেশাতে হবে। একটা চা চামচে ৪ গ্রাম কফি ধরে। কফির অনুপাতে পানি বেশি হয়ে গেলে কফি কিন্তু খেতে একটুও মজা লাগবে না।
কাপটাও কিন্তু হতে হবে যথার্থ
কফির স্বাদ পুরোপুরি উপভোগ করতে সঠিক কাপ বাছাই করাও কিন্তু জরুরী। এক্সপার্টদের মতে ২০০ মিলির পুরু চারকোনা কাপে কফি ঢাললে তা অনেকটা সময় ধরে গরম থাকবে। আরেকটা ছোট্ট টিপস হল, কাপে কফি ঢালার আগে কাপটা গরম পানি ঢেলে কিংবা ওভেনে গরম করে নিন। এতে কফির স্বাদ ভালো হবে।
ঠান্ডা কফি, একদম না
সব নিয়ম মেনে দারুণ এক কাপ কফি বানিয়ে একটা বই কিংবা সিনেমা নিয়ে বসবেন কিন্তু কফির কাপে চুমুক দিতেই ভুলে গেলেন বেমালুম। এরপর ঠান্ডা কফি খেতে একদমই ভালো লাগবে না কিন্তু। কারণ ঠান্ডা হয়ে গেলে কফি তিতকুটে হয়ে যায় আর স্বাদও নষ্ট হয়ে যায় অনেকটাই। তাই কফির স্বাদ পুরোপুরি পেতে চাইলে কফি বানানোর সাথে সাথেই পান করতে হবে।
ব্ল্যাক কফি নাকি কফি উইথ ক্রিম?
কফিতে আছে প্রচুর পরিমাণ এন্টি অক্সিডেন্ট। কফিতে দুধ বা ক্রিম মেশালেও এন্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ কমে না। তাই দুধ কফিতেও কফির স্বাস্থ্যগত গুণাগুণ নষ্ট হয়না। কফিতে দুধ মেশানো শুরু হয় ফ্রান্সে। এতে করে কফির স্বাদে বৈচিত্র আসে। আবার অতিরক্ত গরম পানীয় পান করলে ইসোফ্যাগাস ক্যান্সারের ভয় থাকে। দুধ ঢাললে কফি কিছুটা ঠান্ডা হয় তাই সেই ভয়টাও দূর হয়। তবে অতিরিক্ত দুধ কিংবা চিনি কফির স্বাদ নষ্ট করে দেয়।
বারে বারে কফি কিনবে কে?
সময় বাঁচাতে আমরা হয়ত পুরো মাসের কিংবা কয়েকমাসের কফিবীজ একবারে কিনি। কিন্তু এক্সপার্টরা বলছেন কফি রোস্ট করার তিন সপ্তাহ পর্যন্ত তার ফ্লেভার ঠিকঠাক থাকে। তাই ফ্রেশ এককাপ চনমনে কফির স্বাদ উপভোগ করতে কফির কৌটার গায়ে সাঁটা লেবেলে রোস্টিংয়ের ডেট দেখে তারপর কিনুন।
কফি মেশিন পরিষ্কার করতে ভুললে চলবে না কিন্তু
অন্যান্য যন্ত্রের মতো কফি মেশিনও নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি। এতে করে কফি মেশিনের ভেতরে জমা হওয়া ব্যাকটেরিয়া দূর করার পাশাপাশি কফির তাজা গন্ধও বজায় রাখবে।
আরও কিছু বিষয়
ভালো মানের কফির প্যাকেটে ডিগ্যাসিং ভালব থাকে অনেকসময় যা কফির প্যাকেটের ভেতরে অক্সিজেন প্রবেশ করতে দেয়না। রোস্ট করার কয়েকদিন পর পর্যন্ত কফিবীজ কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করতে থাকে। ডিগ্যাসিং ভালব এই কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়। আর যদি আপনার কেনা কফির প্যাকেটে ডিগ্যাসিং ভালব না থাকে তাহলে কফিবীজ কয়েকদিন খোলা বাতাসে ছড়িয়ে রাখতে হবে। এতে করে আবার কফির এসেনশিয়াল অয়েল দূর হয়ে যেতে পারে।
প্রধানত দু’রকম কফি পাওয়া যায়, রোবাস্টা আর অ্যারাবিকা। স্বাদের দিক থেকে অ্যারাবিকা যদি হয় ডেলিকেট তবে রোবাস্টা বেশ কড়া স্বাদের। কারণ রোবাস্টাতে ক্যাফেইন বেশি থাকে। দুইরকম কফির দামও কিন্তু আলাদা। গোলাকারের রোবাস্টার তুলনায় ওভাল শেপের অ্যারাবিকার দাম অন্তত দুইগুন বেশি হয়। তাই কফি কেনার সময় খেয়াল রাখুন কোন দোকানি যেন অপেক্ষাকৃত ছোট ও গোলাকার রোবাস্টাকে অ্যারাবিকা বলে চালাতে না পারে।
সারাবাংলা/আরএফ/এসএস