Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছাদবাগানের শোভা- লাল টুকটুকে শীতের টমেটো


১১ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:৩০

পর্ব- ৩৩।।

ছাদবাগান করবার আগে কখনও ভাবিনি শাক, সবজি, ফলের মতন শস্য ফলাতে পারবো। ছাদবাগান সবসময়ই ফুল বা পাতাবাহার গোছের গাছপালা দিয়েই সাজানো যায়, তাই মাথায় ছিল। সে কারণে প্রথম থেকেই ছাদবাগান পরিবারের সদস্য হিসেবে পাতাবাহার আর ফুলের গাছদেরই প্রাধান্য ছিল। গত তিন বছর আগে হঠাৎ করেই মনে হয়েছিল, যে কোন একটা শস্য বা সবজি ফলানোর চেষ্টা করেই দেখা হোক না।

তখন ছাদবাগানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল বাবু। দেশের বাড়িতে ওর বাবার নার্সারি আছে গত তিন দশকের উপর। সব ধরণের গাছের চারা তৈরি করেন সে বহু বছর। বাবু সেই সময় বাড়িতে বেড়াতে গেলে বলেছিলাম, কয়েকটা টমেটো চারা আনতে। সাত আটটা টমেটো চারা এনেছিল সে। ছাদে ছোট একটা বেড তৈরি করেছিলাম সবাই মিলে, নিজেদের হাতে। চারপাশ ইট আর সিমেন্ট দিয়ে দেয়াল করে মাঝখানটা মোটা প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলাম। দুই ভাগ জৈব সার আর দুুই ভাগ মাটি একসাথে মিশিয়ে মাটিকে স্থিতি করে রেখেছিলাম। এটাই ছিল প্রথম পরীক্ষা আমার।

 

 

কয়েকদিন যেতেই তড়তড়িয়ে টমেটো চারাগুলো মাথা উঁচু করে উঠতেই দেখি হলুদরঙা ফুলের মেলা। চার/ পাঁচ ফুট লম্বা গাছগুলো শিশু টমেটোর ভারে নুয়ে পড়ছিল একদম। বুদ্ধি করে তাই ছোট ছোট  মাঁচা তৈরি করে দিয়েছিলাম তাদের জন্য। সবুজাভ রঙে টমেটোগুলো হলদে হয়ে আসে আগে। পরিপূর্ণ হবার সাথে সাথে কবে যে লাল টুকটুকে হয় তা চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। প্রথম টমেটো চাষাবাদের সময় আমি মুগ্ধ হয়ে অপেক্ষাই করেছি শুধু লাল টুকটুকে টমেটো দেখবার জন্য।

শীতকাল এবং শীতের শেষে সবচেয়ে বেশি এক ধরণের পোকা হয়, যাকে মিলি বাগ বলে। সাদা আর কালো রঙের। এরা ফুলের কুঁড়ি আর পাতার নিচে বসবাস করা শুরু করে। এতো ছোট যে হঠাৎ চোখে ধরা পরে না। ধীরে ধীরে রসগুলো টেনে নেয় ওরা। কুঁড়ি আর পাতা তখন তাদের রঙ হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে ওঠে। তাই এ সময়ে নরম গাছগুলোর যত্ন নিতে হয় দ্বিগুণ। তিন/ চার দিন পর পর ছাই দিতে হয়। তাতেও যদি না যায় তাহলে সহনীয় মাত্রার ডিটারজেন্ট পাউডার এক চামচ এক লিটার জলে গুলিয়ে স্প্রের সাহায্যে হালকা করে পাতা উল্টিয়ে এবং কুঁড়িগুলোতে দিয়ে রাখতে হয়। পরের দিন অবশ্য অবশ্যই জল দিয়ে ভালো করে পুরো গাছ ধুয়ে দিতে হয়। নাহলে ডিটারজেন্টের ঝাঁজে গাছের ক্ষতি হতে পারে বেশ।

টমেটো গাছ খুব সহজেই মিলি বাগে আক্রান্ত হয়ে থাকে, নরম গাছ তাই। ভালো টমেটো পেতে হলে টমেটো গাছের প্রতি আলাদা খেয়াল রাখতে হবে। গত দুই বছর পাঁচটা বা ছয়টা টমেটো গাছ ভালো মতন বড় করে তুলতে পেরেছি। টমেটো কিনে আনতে হয়নি বাইরে থেকে। এমনকি প্রতিবেশীদেরও টমেটো দিতে পেরেছি প্রচুর। এবার দশটা দেশি টমেটো চারা ভালো মতন উঠেছে। চারটা চেরী টমেটো চারা বাঁচাতে পেরেছি। আবহাওয়া ভালো হলে আর পোকামাকড় না ধরলে এবার ফাগুন পর্যন্ত টমেটো পাওয়া যাবে।

আপনার বেড না থাকলে মাঝারি টবে একটা করে টমেটো চারা বুনে দিতে পারেন। বারান্দাতে রোদ আসে এমন জায়গাও টমেটোর জন্য ঠিক। চারা উঠাতে অনেক ঝামেলা তাই নতুন চাষীদের বলবো, টমেটো চারা নার্সারি থেকে নিয়ে আসতে। প্রথম দুটো চারটে করে বুনে দেখতে পারেন। পরের বছর আর কোন সংশয় থাকবে না। টমেটো গাছ খুবই নিরীহ এবং নরম। ফলনের মাঝামাঝি সময়ে ফেলে দেয়া সবজি, চাপাতার অবশিষ্ট বা ডিমের খোলাগুলো গুড়ো করে গোড়ায় দিয়ে দিলে ভালো হয়। দিনে একবার পরিমান মতন জল লাগে।

সবুজ টমেটো ভাজি করে খেতে দারুণ লাগে। লাল হয়ে পরিপূর্ণ হলে কাঁচা খাওয়া যায় টমেটো। বিশেষ করে সালাদে এর ব্যবহার বিশ্বব্যাপী। টমেটো ক্যাচআপ অর্থাৎ সসের তুলনা আর কিছুতে হয় না। টমেটো ভর্তা, চাটনী, টক, মাছের সাথে ঝোল, মাংসের ঘন ভুনায় টমেটো, পিজ্জা, লাজানিয়া, জুস কি না করা যায় এই এক টমেটো দিয়ে। আজকাল বিভিন্ন রঙ আর আকারের টমেটোর চাষ হয়ে থাকে। লাল রঙ ছাড়াও হলুদ বা কমলা টমেটো এখন দেশেও চাষ হয়।

সহজ টমেটো চাষাবাদের উপায় বলে দিলাম। এখনই সময় টমেটো চারা ঘরে আনবার জন্য। চলুন টমেটো চাষাবাদ শুরু করে দেই। লাল টুকটুকে টমেটোর রঙে রঙিন হওয়া সবুজ পাতাগুলো দেখতে দেখতে আপনিও আমার মতন বলবেন ঠিক, চাষী পরিবার সুখী পরিবার।

 

সারাবাংলা/ এসএস

টমেটো টুকটুকে লাল টমেটো নগর চাষী শাওন মাহমুদ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর