ঠান্ডা ঠান্ডা শীত শীত! সাজটা কেমন হবে?
১২ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:০৮
রাজনীন ফারজানা।।
হেমন্তের শুরু থেকেই সকাল সন্ধ্যা কুয়াশার লুকোচুরি জানান দিচ্ছে শীত এগিয়ে আসছে ধীর পায়ে। শীতের বাতাসে কিছুটা বিষণ্ণতা জমে থাকলেও সকালের রোদে জমে থাকা শিশির বিন্দু সুর্যালোকে যেমন ঝলমল করে হেসে ওঠে ঠিক তেমনি শীতের আছে নানা রঙ আর বৈচিত্র্য। সেই বৈচিত্র্যের আলোয় ঝলমল করে ওঠে শীত। আর শীতকে বৈচিত্র্যময় করতে সেজে উঠি আমরা, নানা সাজে, নানা পোশাকে, নানা রূপে। চারদিকে চলে নানারকম উদযাপন। চারদিকে প্রাণের যে হিল্লোল ওঠে তা দেখে মনে হয়, ‘রোদের সোনা ছড়িয়ে পড়ে মাটির আঁচলে মরি হায় হায় হায়।। পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে, আয় আয় আয়।
সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেরিয়ে পড়ি আমরা। ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে নির্ভয়ে বেরিয়ে পড়ি শীতের রোদ থেকে উষ্ণতাটুকু শুষে নিতে। দীর্ঘ শীতের রাতের শেষে আবারও নতুন প্রাণ জাগানোর ভরসা জাগায় এই রোদ। রোদের যত রঙ তা যেন ঠিক প্রজাপতির ডানায় ছড়ানো আবির। এই আবিরে রাঙিয়ে যায় আমাদের মন আর আমরা সেজে উঠি নানা সাজে। তাই তো শীত মানেই যেন চারদিকে রঙে রঙিন। সে রঙ ছড়িয়ে পড়ে ফুলের বাগান, সবজির ক্ষেত ছাড়িয়ে মানুষের পোশাকে। শীতে সব বয়সী মানুষকেই দেখা যায় রঙিন পোশাক পরতে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যে ভাটা পড়েছে আগেই। এখন সারা বছরই গরম থাকে। বছরে অল্প কয়েক মাসের জন্য শীত এসে তাই সবার জন্য উৎসবের উপলক্ষ তৈরি করে দেয়। আলমারি থেকে শুধু সোয়েটার, চাদর, জ্যাকেটই নামে না, নামে ভারী ভারী কাতান, জারদৌসি, আনারকলি কিংবা অন্যান্য ভারী পোশাক। সারাবছর এমনকি উৎসবেও আরামের জন্য সুতি, খাদি, সিল্ক বা মসলিন বেছে নিলেও শীতের উৎসবগুলোতে পাওয়া যায় ইচ্ছেমত সাজার স্বাধীনতা।
তবে পোশাকের উপর আলাদা করে শীতের কাপড় পরার ফলে নীচের পোশাক ঢাকা পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে শীত কাপড়েই তৈরি করা যায় আলাদা ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। শীতের দিনে ছেলে মেয়ে সবারই পছন্দের তালিকায় থাকে জিন্স প্যান্ট, কেডস, বুট জুতো, টুপি, জ্যাকেট, সোয়েটার, চাদর, মাফলার এবং স্কার্ফ। এছাড়া মেয়েদের জন্য নানা রঙের আর ডিজাইনের ব্যালেরিনা শু, কম্ফি শু, বুট জুতোতেও তৈরি করা যায় নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট।
শীতের সাজে ভিন্নতা আনতে পোশাকে লেয়ারিং করা যায়। এখন বাজারে নানা আকারের এবং ধরণের সোয়েটার এবং জ্যাকেট পাওয়া যায়। বেশি শীত পড়লে নীচে একটা খাটো সোয়েটার পরে উপরে মাঝারী বা লম্বা আকারের পাতলা জ্যাকেট দিয়ে লেয়ারিং করতে পারেন। শীতও হার মানবে, দেখতেও দারুণ লাগবে। শীতের দিনে পালাজোর চাইতে লেগিনসেই আরাম মিলবে বেশি।
শীতের দিনে শাড়ি পরা নিয়ে চিন্তায় পড়েন অনেকে। এক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন ফুলহাতা, গলাবদ্ধ ব্লাউজ। আবার শাড়ির উপর চাদর না নিয়ে পরতে পারেন পঞ্চ। বেশ কয়েকবছর ধরেই জ্যাকেট আকারের ব্লাউজ চলছে বেশ। ভারী কাতান বা বেনারসি কাপড়ের জ্যাকেট আকারের ব্লাউজ পড়লে শীতের হাত থেকেও বাঁচা যায় আবার সোয়েটার বা চাদর দিয়ে শখের শাড়িটা ঢাকা পরার কারণ থাকেনা। তবে ভারী ডিজাইনের ফুলস্লিভ গলাবদ্ধ ব্লাউজের সাথে শাড়িটা হতে হবে সিম্পল ডিজাইনের আবার শাড়িটা পরতেও হবে আঁচলটা ভাঁজ করে পিন দিয়ে আটকে। কেউ চাইলে একটা পাতলা চাদর ভাঁজ করে কাঁধের উপর ফেলে রাখতে পারেন। হাতে কয়েকটা আংটি আর কানে একটা ভারি ড্রপ ইয়ার রিং কিংবা টপেই সাজ শেষ। এধরণের ব্লাউজের সাথে চুলটা বাঁধতে হবে কিছুটা উঁচু করে যাতে ব্লাউজের ডিজাইনেই সব মনোযোগ আটকে যায়।
সেই তো শীত যখন নিশ্চিন্তে সেজে গুজে দুপুরের রোদে বাইরে গেলেও মেকআপ নষ্ট হওয়ার ভয় নাই। শীতের সাজের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে রঙের বৈচিত্র্য। আমরা যে শুধু রঙিন পোশাকেই সাজি তা না বাংলাদেশের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় শীতই একমাত্র সময় যখন মনের আনন্দে সাজা যায়। গরমে যেমন ছিমছাম সাদামাটা সাজের দিকে ঝোঁক থাকে তেমনি শীতে থাকে নিজেকে রঙিন করে তোলার প্রতি ঝোঁক। এখন মেকআপে কিছুটা রঙিন আর উজ্জ্বল ব্যাপারটাই চলছে। শীতের দিনে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ও বাতাসে ধুলাবালি বেড়ে যাওয়ায় ত্বকের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ত্বক উজ্জ্বলতা হারিয়ে রুক্ষ ও খসখসে হয়ে যায়। শীতের দিনে সারা শরীরেই ময়েশ্চারাইজার মাখা উচিৎ। তবে শীত হলেও মুখ, গলা, হাতসহ শরীরের অনাবৃত অংশে সানব্লক মাখতে ভুলবেন না।
মেকআপ করার আগে অবশ্যই মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে। এছাড়াও কোন অয়েল বেইজ প্রাইমার দিয়ে তারপর ফাউন্ডেশন দিতে হবে। শীতের দিনে মুখ তেলতেলে হওয়ার ভয় নাই তাই এসময়ে সেটিং পাউডার এড়িয়ে যেতে পারেন। কারও যদি টি- জোনে অর্থাৎ নাকের চারধারে, কপালে তেল জমার প্রবণতা থাকে তবে শুধুমাত্র টি-জোনেই হালকা করে পাউডার দেওয়া উচিৎ। এছাড়া শীতের দিনে শুধুমাত্র বিবি বা সিসি ক্রিম দিয়েও করে ফেলতে পারেন পরিপূর্ণ মেকআপ। যদি মেকআপ করতে আলসেমিই লাগে, কিছু না হোক উজ্জ্বল লিপস্টিকেও চমৎকার লাগবে আপনাকে।
এখন সাজে শিমারের ব্যবহার নজরে কাড়ছে। বিষণ্ণ শীতের শীতল হাওয়ার মাঝে উজ্জ্বলতা আনতে তাই মেকআপের শেষে শিমার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
বিষণ্ণ শীতকে রঙিন করতে সাজগোজ করলেও নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। বছরের অন্যান্য সময়ের মতই শীতেও দুইবেলা ত্বক পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার মাখুন। সেইসাথে প্রচুর পানি পান করুন ও শীতের সবজি ও ফলমূল খান। এতে মলিন শীতেও ভেতর থেকে ফুটে উঠবে উজ্জ্বলতা।
মডেল- মম মোস্তফা, বনাঙ্কুর মুস্তাফা, মৌসুমী ইকবাল, মোহসেনা শাওন
সারাবাংলা/ আরএফ/ এসএস
মম মুস্তাফা শীত পোশাক শীতের চাদর শীতের দিনে সাজগোজ শীতের সাজ