Friday 04 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পর্ব-৬ [ছাদের বাগানে সরিষা শাক- মুঠো মুঠো সুখ]


১০ জানুয়ারি ২০১৮ ১২:৫১ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ১২:৫৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমরা নিজেদের ভেতো বাঙালী নামে ডাকতে পছন্দ করি। সামান্য ভর্তা ভাজি হলেই ভাত মাখিয়ে খেয়ে ফেলতে পারি অনায়াসে। ভাজি বলতে ছেলেবেলা থেকে তেলে রসুন শুকনা মরিচের বাগারে যে কোন শাক, তাই জেনে এসেছি। যতদূর জানি, আমাদের দেশে সব পরিবারেই দুপুরের খাবারে যে কোন শাকের পদ থাকবেই থাকবে।

প্রথম যখন মাথায় আসলো শাক চাষ করবো, তখন ছাদবাগানের পরিসর একটু বেড়েছে মাত্র। বীজ ছিটালেই তো শাক হয়, তাহলে কেন শাক চাষের চেষ্টা নয়! যেই ভাবনা সেই কাজ। ব্যস আর কে থামায় আমাকে। রান্না ঘরের বোয়ামে রাখা এক মুঠো সরিষা নিয়ে গিয়ে বিকেল বেলায় বেশ করে ছিটিয়ে দিয়ে আসলাম একখানা টবে। হাতের আঁজলায় তুলে হালকা জল দিয়ে ভেজালাম মাটি। তারপর থেকে অপেক্ষা করতে থাকলাম সরিষা শাক দেখবো বলে।

বিজ্ঞাপন

দুই দিন, তিন দিন যায় সরিষা বীজ কোন কথা বলে না। ছাদবাগানের সবগুলো গাছকেই নিয়মিত পরিচর্যা করা আমার অভ্যাস। তারপরও মন বলছিল, বীজ থেকে শাক আসতে তো এতো দেরি হবার কথা নয়। সেই টবের মাটি হালকা করে নাড়াচাড়া করতে দেখি সরিষাগুলো বেশ বড় হয়েছে। কিন্তু অঙ্কুরের দেখা নেই। তার আরো কয়দিন পর মাটি সরাতেই দেখি বেশীর ভাগ বীজ মাটির সাথে মিশে গেছে।

অপেক্ষা করতে করতে বেশ কয়দিন যাওয়ার পর ভেবেই নিলাম যে ছাদে শাকের চাষাবাদ আমাকে দিয়ে সম্ভব নয়। খুব মন খারাপ করে ছিলাম কয়দিন। আমার ছাদবাগানের তিনচার জন বন্ধু আছে। যারা সময়ে সময়ে বাসায় আসলে আমার সাথে চাষাবাদে হাত দেয়। তাদের একজন হচ্ছে আমাদের ছোট্ট অডিও স্টুডিওর ম্যানেজার, গত চৌদ্দ বছর ধরে আমাদের সাথে। বয়স আঠাশ। নাম বাবু। তো এক বিকেলে সে আসলে, সরিষার ব্যর্থ চাষের কথা বলতেই সে হেসে বলে উঠলো, মীনা বাজারের প্যাকেটের সরিষা দিয়া কি সরিষা শাক চাষ করা যায়! আমি বীজ নিয়া আসমুনে। চলেন বীজের লাইগা মাটি রেডি করি।

আমি সাধারণত কাওরান বাজার থেকে একশো টাকার প্লাস্টিক গামলা কিনে এনে যে কোন শাক চাষ করতে সাচ্ছ্যন্দ বোধ করি। তবে একবার শাক বীজ সম্পর্কে জেনে গেলে আপনার বাসায় থাকা যে কোন পাত্রেই যে কোন দেশি শাক ফলাতে পারবেন। ঝরঝরা মাটি হলে ভালো হয়। জৈব সার আর মাটির সমান সমান ভাগে দিলে, মাটি জমে কম। তাছাড়া শাকের বাগানে জল দিতে হয় খুব কম করে। শাক চাষে মাটির পুষ্টি সাধারণ থাকলেও, বীজটা ভালো পেতে হয়। সরিষা বর্তমানে আমার ছাদবাগানের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শাক। লাউসহ অন্যান্য ফলনবতী লতানো শস্য বুনবার সাথে সাথে মাটিতে সরিষা বীজ ছিটিয়ে দেয়া নিয়ম হয়ে গেছে এখন।

সরিষা বীজ চাষের আগে জলে ভিজিয়ে রাখতে হয় না। বীজ মাটিতে ছিটিয়ে দিলে তিন থেকে চারদিনেই সবুজ মাথা হয়ে বের হয়। তবে কখনই হাতের মুঠি ভরে বীজ ছড়াবেন না। অল্প অল্প নিয়ে মাটিতে ছিটিয়ে দিবেন।
তিন/চার ইঞ্চি লম্বা হওয়া পর্যন্ত নেট দিয়ে ঢেকে না রাখলে চড়ুই পাখী সব চারা খেয়ে যাবে। হাতের কাছে নেট না কেনা থাকলে পুরোনো পাতলা শাড়ি ব্যবহার করি আমি। সরিষা শাক যতটুকু তুলবার, শুধু সেটুকুই তুলে থাকি সবসময়। বাদবাকিটা রেখে দেই ফুলের কারণে। সরিষা ফুলে মৌমাছি আসে সবচেয়ে বেশি এবং তাদের এই নিয়মিত আনাগোনায় লাউ বা শশার পরাগায়নের কাজটা এগিয়ে যায় দ্রুত।

আগামীতে অন্যান্য শাক চাষের কথা জানাবো অবশ্যই। আজ আপাতত চাষের জন্য সবচেয়ে সহজ এবং ছাদবাগানের অন্যান্য শস্যের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সরিষা শাক চাষ করবার সহজ উপায় জানালাম।
রান্নাঘরের বোয়াম থেকে সরিষা নিয়ে শাক চাষের সেই লজ্জার কথা আর কাউকে বলা যাবে না। আপনাদের কাছেই বললাম শুধু। কষ্ট করে ভালো নার্সারি থেকে সরিষা বীজ সংগ্রহ করে নেবেন। খালি টব বা গামলা নেই তো কি হয়েছে! অন্য গাছের গোড়ায় থাকা মাটি ভালো ভাবে খুঁচিয়ে ঝরঝরা করে ছিটিয়ে দিন সরিষা বীজ। শুধু খেয়াল রাখতে হবে যেন বীজ ছড়ানো জায়গাটুকুতে অতিমাত্রায় জল না দেয়া হয়। আর তিন/ চার ইঞ্চি না হওয়া পর্যন্ত নেট দিয়ে ঢেকে যেন রাখা হয়। যেদিন মাথা চারা দিয়ে সবুজ সবুজ দুই পাতা বের হবে, আমার মতন ঠিক বলবেন জানি- ‘চাষী পরিবার, সুখী পরিবার’।

নগর চাষীর কলাম (পর্ব-১)

সারাবাংলা/এসএস/আরএফ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর