Friday 04 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছাদবাগানের সবুজ ডাক্তার গাছেদের গল্প


১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:০১
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পর্ব-৩৪।।

বহুদিন ধরে ভাবছিলাম, ছাদবাগানের রঙীন বন্ধুদের মতন সবুজ ডাক্তার বন্ধুদের গল্প বলবো। আলসেমিতে বলা হয়নি এতোদিন।  আজ তাদের কথা বলতে চাই।

সবুজ বন্ধু সব গাছেরই আরেক নাম। তবে আমার ছাদবাগানে যে সব ঔষধি গাছ আছে, তাদের নিজস্ব নামের পাশে আমি সবুজ ডাক্তার বন্ধু নামে ডাকি। গাছ চিনবার সাথে সাথে গাছের উপকারিতা জানবার একটা মজায় নেশায় মেতেছি আমি। বিশেষ করে ছাদবাগানের গাছগুলো থেকে ভেষজ টোটকার প্রতি বিশাল আগ্রহ জমেছে কয়েকমাস ধরে। যতটুকু জানতে পেরেছি তার বেশিরভাগ আজ জানাবো এখানে।

থানকুনি পাতা – টেয়া, মানুকি, তিতুরা, হানকুনি নামে প্রচলিত। থানকুনি পাতার রস পেটের যে কোন গোলমালে বিশেষ ভাবে কাজ করে থাকে। কাঁচা বেটে ভর্তা করে খেলেও এর উপকারিতা পাওয়া যায়। অনেকে ভেজেও খায় এর থেকে উপকার পাওয়ার জন্য। দুধের সাথে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে ক্লান্তি দূর হয়, ঘামের দূর্গন্ধ রোধ করে। যাদের চুল কমে যাওয়ায় মন খারাপ থাকে, তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো সংবাদ হচ্ছে এই পাতা রস করে সপ্তাহে তিন বা দুই দিন স্নান করবার আধ ঘন্টা আগে মাথার চামড়ায় ভালো করে লাগিয়ে তারপর ধুয়ে ফেলার সপ্তাহ দুয়েক পরেই নতুন চুলের দেখা মেলে। এবং চুল কুচকুচে কালো হতে থাকে। থানকুনি পাতার রসের উপকারিতার শেষ নেই। জ্বর, একজিমা, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এবং চোখের যে কোন রোগ থেকে উপশম হয় এই পাতা থেকে।

বিজ্ঞাপন

নিম – যাকে ইন্ডিয়ান লাইলাক নামে চেনে অনেকে। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম ‘এরিস্থা’ যার অর্থ ‘রোগ উপশমকারী’। এর কারণ হচ্ছে নিম গাছের শেকড়, ছাল, আঠা, ডাল, পাতা, ফুল ও বীজসহ এর ছাই পর্যন্ত আমাদের জন্য ব্যবহার করা উপকার। এমন কি প্রাচীন কাল থেকে নিম গাছের ছায়াকেও স্বাস্থ্যকর বলা হয়। নিমতেল এবং ছালের রস ম্যালেরিয়ার মতন কঠিন রোগ সারিয়ে তোলে। তবে উঁকুন নাশে নিমতেলের তুলনা নাই, একেবারে নিজের পরীক্ষা করা সত্য। নিম পাতার রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এমনকি ওজন কমানোর জন্যও কাজে লাগে। দাঁতের যত্নে নিম অতুলনীয়। বিশেষ করে মাড়ির ক্ষত সারাতে কাজ করে অনেক। তাই টুথপেস্টও বানানো হয় এই গাছ থেকে। নিমের তেল চুল পড়া বন্ধ করে। রাতকানা রোগে নিমের ফুল ভেজে খাওয়ায় এখনও গ্রামগঞ্জে। নিম আসলে এন্টিসেপ্টিক হিসেবে ব্যবহৃত হয় বেশী। যে কোন চামড়ার ছোঁয়াচে অসুখে পাতা, ছাল বেটে নিয়মিত ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। ছোঁয়াচে রোগ হাম বা জল বসন্তেও নিমের পাতা এন্টিসেপ্টিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিম ফুলের ঘ্রাণে পোকামাকড় দূর হয় বলে আগের দিনে সব বাড়ির উঠানের এক কোণে নিম গাছ খুঁজে পাওয়া যেতো। এই পর্যন্ত ভেষজ উপকারের অনুসন্ধানের মাধ্যমে উপকারী গাছ হিসেবে নিমকে আমি এক নম্বর স্থানে রাখি।

 

 

ঘৃতকুমারী – অ্যালোয়ভেরা ঘৃতকাঞ্চন নামেও পরিচিত। বর্তমান সময় অ্যালোয় এর ক্রীম, জেল, শ্যাম্পু বা লোশন ব্যবহারের চল এসেছে দূর্দান্ত গতিতে। তবে অ্যালোভেরা বহু পুরানো সময় প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরেই আমাদের দেশ এবং আশেপাশে এই ঔষধি ভেষজের মাধ্যমে অসুখ বিসুখ বা ঘরোয়া রূপচর্চার প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঘৃতকুমারী শরীরের অভ্যন্তরে শারীরিক প্রক্রিয়ার সাথে মিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জোরালো করে, তাই এর কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যেমন সরবত বা সালাদ অত্যন্ত উপকারী। চুল বা ত্বকেও সরাসরি প্রয়োগে চুল পড়া বন্ধ, খুশকী রোধ, শুষ্ক চামড়া থেকে মুক্তি, রোদে পোড়া ত্বক থেকে উদ্ধার, ব্রণ হ্রাস করে এবং কেশকে ঝলমলে করে তোলে। অ্যালোয় রস হাত পায়ের যে কোন ব্যথার জায়গায় দিলে ব্যথা কমে আসে। আগুনে পুড়ে গেলে সে জায়গায় সরাসরি এর রস স্বস্তি দেয়। নিয়মিত অ্যালোয় রস পানে ফ্যাটি এসিড এবং টক্সিন বা দূষিত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হজমে সাহায্য করে প্রচুর এই ঘৃতকুমারী। এমনকি কৃমির প্রকোপও দূর করে দ্রুত। এখনও অনেকে প্রতিদিন ঘৃতকুমারীর সরবত পান করে থাকে শুধুমাত্র সুস্থ থাকবার জন্য।

পুদিনা পাতা – মিন্ট বা স্পিয়ার মিন্ট নামে পরিচিত। পুদিনার পাতাকে সাধারণত আমরা তার ঘ্রাণের কারণে চিনি জানি। অথচ পুদিনা এমনই এক ঔষধী গাছ যার পাতা, কান্ড এবং শিকড় বিভিন্ন অসুখের ওষুধ হিসেবে প্রাচীন যুগ থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। গরমকালে ঘামাচি, ফুস্কুরি বা ঘামের দূর্গন্ধ করতে পুদিনা পাতা স্নানের জলে নিয়মিত ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। পুদিনা পাতা পুড়িয়ে বেটে দাঁত মাজলে মাড়ির ঘাঁ বা রক্ত ঝরার মতন ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অর্থাৎ শরীরে ব্যাকটেরিয়া জনিত যে কোন স্থান পুদিনা ব্যবহারে স্বস্তি পাওয়া যায়। পুদিনায় এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় যে কোন হজমের সমস্যা দূর করতে এর রস পান অত্যন্ত উপকারী। পুদিনার চা শরীরের ক্লান্তি দূর করে স্বস্তি আনে। ব্রণ আক্রান্ত স্থানে পুদিনা পাতার রস মেখে দুই তিন ঘন্টা পর ধুয়ে ফেললে মাস খানেকের মাঝেই উপকার পাওয়া যায়। মাইগ্রেনের জন্য তাজা পুদিনা পাতার ঘ্রাণ ব্যাথা উপশমে দ্রুত কাজ করে। পুদিনা ভর্তা, সালাদে কুঁচি করে, লেবুর সরবতে, চায়ে বা ভাজাতে সহজে খাওয়া যায়। বিদেশে চকোলেট, গাম, কেক আর বিস্কিটে পুদিনা ব্যবহার করতে দেখা যায় প্রচুর।

 

সত্যি বলতে এসব ঔষধি ভেষজের উপকারীতা বলে শেষ করা যায় না, আবার খুব সহজে এদের উপকার পাওয়া গেলেও আমরা এসব ব্যবহারে ততটা অভ্যস্ত নই। তাই হাতের কাছে ঔষধি লতাপাতা থাকলেও আমরা তাদের উপর কখনই নির্ভর করতে শিখি নাই। আজকে আহ্বান থাকলো, একবার দুবার ব্যবহার করে দেখলে সমস্যা নেই কোথাও। ব্যবহারের জন্য এসব গাছ বা লতা টবে থাকলেও কোন সমস্যা নাই। বারান্দা বা ছাদে সবুজের সমারহ বাড়ুক, সেটাই আমার প্রচেষ্টা। কারণ নগরচাষী বিশ্বাস করে চাষী পরিবার, সুখী পরিবার।

 

 

সারাবাংলা/এসএস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর