Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পর্ব- ৮ : ছাদবাগানের গাছের কাঁধ- মাঁচা!


২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ১৫:১০

আমার মতন ঘরকন্যা করা চাষীর কলাম যারা পড়েন, তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আর তার মধ্য থেকে যারা এই চাষীর খুব সাধারণ এবং প্রাকৃতিক উপায়ে হাতে কলমে শেখা চাষাবাদকে নির্ভর করে, উৎসাহিত হয়ে চাষাবাদ শুরু করেছেন। তাদেরকে লাল সেলাম। আমার উপর বিশ্বাস রাখলে আর কিছু না হোক, সফল ছাদবাগানের চাষী হয়ে উঠবেন। একদম হলফ করে বলতে পারি।

আমি জানি না এই নগর চাষীর কলাম পড়তে কার কতটুকু ভালো লাগে। অথবা আদৌ পড়েন কিনা কেউ, তাও জানা নেই। তারপরও সারাবাংলা থেকে আমাকে একজন নক করেন। তাঁকে আমি আদর করে বেবী নামে ডাকি। আমাকে প্রতি সপ্তার মঙ্গলবার মেসেজ দিয়ে বেবী মনে করিয়ে দেয়, আপু লেখা দেন। আগামীকাল যাবে। আমিও জমা দেই। ছবি দেই। বানান দেখতে বলি। এভাবেই চলছে গত কয়েক সপ্তাহ।

বিজ্ঞাপন

লেখা জমা দেয়ার পরপরই ভাবনা শুরু হয়, আগামী সপ্তায় কোন গাছ বা শস্য নিয়ে লিখবো! কি নিয়ে লিখবো! এই কলাম লেখার আগে কখনও ভাবনা আসেনি যে গত সাড়ে পাঁচ বছরে ছাদবাগানে কত কি চাষ করেছি! কতবার চাষ করেছি! কত শতবার চাষাবাদ সফল হয়নি! লিখতে লিখতে মনে হয় এখন কত সহজ উপায়গুলো লিখে ফেলি, এক লহমায়। যা শিখতে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, কুয়াশা, শিলা বৃষ্টি, পোকামাকড়, চাষের নিয়মের মতন চাষাবাদের সাথে জড়িয়ে থাকা সবকিছুর সাথে লড়াই করেছি মাসের পর মাস। তারপরও মনে হয়, কিছুই শিখি নাই। জানি না কিছুই। বিশাল প্রকৃতির মাঝে আমার নিজের যতটুকু জ্ঞান, তা প্রকৃতিতে ফুটে থাকা একদম ছোট্ট একটা ঘাসফুলের সমান বলে জানি।

যে কোন লতানো ফলনবতী গাছের জন্য সঠিক মাঁচা অত্যন্ত জরুরী বিষয়। আমি সবসময় মাঁচা, মাচাং বা ঝাঁড়কে ‘কাঁধ’ বলে ভাবি। আশেপাশে চেনা মানুষগুলোর মতন আমারও খারাপ সময় আসে যায়, জীবন পথচলায়। ক্ষণিকের জন্য হলেও সবার জীবনে দুঃখ আসে। ঠিক তেমনই সময়ে অসময়ে বেদনার সাগরে নিমজ্জিত হতে গিয়ে আরেকজনের কাঁধকে আঁকড়ে ধরে উঠে এসেছি আমি। কিছুক্ষণ নির্ভার থাকতে পেরেছি। এখানে লজ্জার কিছু নেই। মানব শিশু জন্ম নেয়ার সাথে সাথে তাকে কাঁধ পেতে দেয় মা। তারপর বাবা আর পুরো পরিবার। মা বাবা আর পরিবারকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বেয়ে বেয়ে বড় হয় মানুষ। আরো বড় হতে হতে পরিবার ছাড়িয়ে বন্ধু, সহপাঠি, সহকর্মী বা সহযাত্রীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। এই রকমের জীবনভিত্তিক স্বাভাবিক নির্ভরশীলতাকে কখনই অসহায়ত্ব বলে বিশ্বাস করি না তাই।

বিজ্ঞাপন

আমার ছাদবাগানে বিভিন্ন ধরণের মাঁচা আছে। যে শিশু গাছের জন্য যেমন কাঁধ লাগবে, ঠিক তেমন করে তৈরি করি। লাউ, বরবটি, ঝিঙে, করল্লা, মিষ্টি কুমড়া বা শশা শিশু অবস্থায় অর্থাৎ ছয় বা সাত ইঞ্চি লম্বা হওয়া পর্যন্ত খুব নাজুক থাকে। তখন খুব নরম বাঁশের কঞ্চি দিয়ে শাড়ির পার ছিড়ে হালকা করে কাঁধ দেই। এক/দেড় ফুট হবার আগেই তাদের গঠন এবং ফলন অনুযায়ী কাঁধ তৈরি করতে থাকি। যে সব সবজির ফলন নিম্মমুখী হয়ে বড় হতে চায়, তাদের জন্য নিজের কাঁধ বরাবর লম্বা মাপে বাঁশের কঞ্চি এবং শক্ত সুতার বাঁধনে মাঁচা তৈরি করি। লাউ, চালকুমড়া বা মিষ্টিকুমড়ার জন্য মাঁচাতে ফাঁকাগুলো বড় রাখি। এমন কি টমেটো গাছ যখন লম্বায় তিন/চার ফুট ছাড়িয়ে যায়, তখন তাদের জন্যও মাঁচা দিয়ে থাকি। টমেটোর ভারে নুয়ে যায় না তাহলে।

যেসব সবজির ফলনে কম জায়গা লাগে সেসব মাঁচার ফাঁকা জায়গাগুলো ছোট করি। যেমন শশা, ঝিঙা, ধুন্দল, করল্লা এসব। বরবটি আর শিমের জন্য মাঁচা তৈরির বদলে পেয়ারা বা শিউলির বড় ডাল ছেঁটে দেয়ার পর রেখে শুকিয়ে রাখি। শুকনো ডালগুলোকে শাকের বেডের মাঝে গেঁথে দেই। শিম আর বরবটি খুব আরামে নিজেদের বাসা বানিয়ে নেয় সেগুলোতে। এবার আমি শক্ত নেটের মাঁচাও তৈরী করেছি। মিষ্টিকুমড়া গাছের জন্য। এই নেটকে আঁকড়ে ধরে ভীষণ সুন্দর করে বেড়ে উঠছে সে। আরো একটা সহজ মাচাং তৈরীর উপায় আছে। সেটা হলো প্লাস্টিকের দড়ি মাছ ধরার জালের মতন করে বুনে নেয়া যায়। শুধু এই জালের ফাঁকাগুলো ফাঁকা রাখতে হয় বড় বড়। শুকনো ডাল না থাকলে এই মাচাং শিম বা বরবটির জন্য তৈরি করে থাকি আমি।

লতানো ফুলের মধ্যে আমি এ্যারোমেটিক জুঁই ফুল গাছের জন্য পুরানো দেয়াল ফ্যানের উপরের অংশটা মাঁচা বা কাঁধ হিসেবে ব্যবহার করেছি। এছাড়া ঝুঁমকো লতা, চামেলী, বেলী, নীল চিতা এগুলোর জন্য ছোট ছোট বাঁশের মাঁচা করে দিয়েছি। লতাকুঞ্জ ফুল কেমন করে যেন একটা পাতাবাহারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল ফুঁটিয়েছিল। কিন্তু তার সেই শক্ত আঁটুনীতে শেষ পর্যন্ত পাতাবাহার গাছটি বাঁচাতে পারিনি। এই কারণে আমি সবসময় চেষ্টা করি প্রত্যেকে লতানো গাছের জন্য তার নিজস্ব মাঁচা তৈরি করবার। লতানো যে কোন গাছই নির্ভরশীল। তাই তাদের দিকে আলাদা খেয়াল রাখা জরুরি।

সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে- মাঁচা নিয়ে আমার এক আবিষ্কার। সেটা হলো, যে কোন ফলনবতী লতানো গাছের মাঁচা কাঁধ বরাবর দিলে ফলন দ্বিগুণ হয়। লম্বায় কাঁধের চেয়ে বেশি হলে ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। আর যদি আপনার কোমড় সমান লম্বায় মাঁচা তৈরি করেন, সেটা আরো ভালো হয়। গাছের শক্তি প্রচুর বেড়ে যায়। ফুলের মাঁচা তৈরিতে তেমন কোন বাছবিচার নেই। লতানো ফুল গাছের জন্য আপনার পছন্দসই মাঁচা দিতে পারবেন।

মাঁচা, মাচাং, ঝাঁড় যে নামেই ডাকেন না কেন, আপনার কাঁধ বাড়িয়ে দিন, স্বজনসম লতানো আত্মীয়দের জন্য। একসময় দেখবেন আপনার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শস্য ফুলেরা তালে লয়ে গেয়ে উঠেছে। চাষী পরিবার, সুখী পরিবার।

 

সারাবাংলা/এসএস

বিজ্ঞাপন

সিইসি ও ৪ কমিশনারের শপথ আজ
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৩

আরো

সম্পর্কিত খবর