ইফতার দেশে দেশে
২৪ মে ২০১৯ ১৫:৪৪
রোজা মানেই মুসলিম বিশ্বের ঘরে ঘরে নানারকম মজাদার আর ঐতিহ্যবাহী খাবারের সামাহার। বাংলাদেশে যেমন বিখ্যাত ইফতার চকবাজারের ‘বড় বাপের পোলায় খায়’, তেমনি বিশ্বের নানা দেশে নানারকম জনপ্রিয় ইফতার আছে। আজ থাকছে বিশ্বের ছয়টি দেশের ছয়টি জনপ্রিয় ইফতার নিয়ে আয়োজন।
বাহরাইনের থারিদ
বলা হয়ে থাকে, থারিদ মহানবী হজরত মুহম্মদ (স.)-এর অন্যতম প্রিয় খাবার। থারিদ একধরনের মাংসের ব্রথ বা স্যুপ জাতীয় খাবার, যা সহজেই হজম হয়। তাই গোটা আরব বিশ্বেই রোজার মাসে থারিদ খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। বাহরাইনে ইফতারের সময় অন্যান্য খাবারে পরিবর্তন এলেও থারিদ থাকবেই থাকবে। থারিদ তৈরি করতে চাইলে শুরুতেই প্রয়োজন রিগ্যাগ নামক একধরনের পাতলা কড়মড়ে রুটি। পাত্রে শুরুতেই রিগ্যাগ টুকরো করে বিছিয়ে দেওয়া হয়। তারপর রান্না করা মাংস দেওয়া হয়। সবশেষে তালবিনা নামক মাংসের স্টু দিয়ে পরিবেশন করা হয় থারিদ, যা হাত দিয়ে খাওয়া হয়। এই স্ট্যু রুটি ভিজিয়ে নরম করে দেয় ফলে দ্রুত হজম হয় এই খাবার।
সৌদি আরবের হারিসা
আরব বিশ্বের আরেজ জনপ্রিয় ইফতার হলো হারিসা। গম, মাংস (সাধারণত ভেড়ার মাংস) আর মশলা দিয়ে বানানো একধরনের পরিজ জাতীয় খাবার এই হারিসা। এটি দীর্ঘসময় ধরে রান্না করতে হয় যেন একদম নরম হয়ে যায়। থারিদের মতোই হারিসাও সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর। সৌদি আরবে সাধারণত পরিবার-পরিজন নিয়েই খাওয়া হয় হারিসা, তাই রান্নাও করা হয় একসঙ্গে অনেক পরিমাণে।
ফিলিস্তিনের মাকলুবা
ফিলিস্তিনের উত্তরের শহর সাফেদ এও গালিলির খাবার এই মাকলুবা। আরবি মাকলুবা শব্দের অর্থ আপ সাইড ডাউন, অর্থাৎ নিচের দিক ওপরে, আর ওপরের দিক নিচে। নানারকম সবজি আর মাংস দিয়ে রান্না করা পোলাও হলো মাকলুবা। মুরগি বা ভেড়ার মাংস আগেই মশলায় ভেজে ও সেদ্ধ করে তুলে নেওয়া হয়। তারপর গোল করে কাটা বেগুন, আলু, গাজর, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি সবজি ভাজা হয়। চিকেন স্টকে চাল অর্ধেক সেদ্ধ করে একটা পাত্রে প্রথমে একস্তর সবজি আর মুরগি দিয়ে একস্তর চাল দেওয়া হয়। এরপর আবার একস্তর সবজি ও মুরগি দিয়ে আবার আধা সেদ্ধ চাল দিয়ে ঢাকা দিয়ে আধা ঘণ্টা দমে রান্না করলেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু মাকলুবা। ফিলিস্তিন তো বটেই, গোটা আরবেই জনপ্রিয় মাকলুবা। আর কেবল রোজার সময় নয়, ঈদসহ বছরের যেকোনো সময় যেকোনো বিশেষ উপলক্ষেই খাবার হিসেবে চাহিদার শীর্ষে থাকে মাকলুবা।
জাঞ্জিবারের মিকাতে ওয়া উফুতা (Mkate Wa Ufuta)
তিল ও নারকেল দুধ দিয়ে বানানো নানের মতো একধরনের রুটি মিকাতে ওয়া উফুতা। জাঞ্জিবারে উৎপত্তি হলেও এই খাবার কেনিয়াসহ পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে ইফতারে বেশ জনপ্রিয় এই রুটি। সামাকি ওয়া কুপাকার (নারকেল দুধে রান্না করা এক ধরনের গ্রিল করা মাছ) সঙ্গে খাওয়া হয় মিকাতে ওয়া উফুতা। সারাদিন রোজা রাখার পর দ্রুত শক্তি জোগাতে জুড়ি মেলা ভার এই খাবারটির।
নাইজেরিয়ার মই মই
একধরনের নাইজেরিয়ান বিন পুডিং। ভেজানো বিনের সঙ্গে মসলা ব্লেন্ড করে ভাপিয়ে বানানো হয় এই পুডিং। সাধারণত ওগি নামের একধরনের ফার্মেন্টেড কর্নমিল পুডিং দিয়েই খাওয়া হয় মই মই। চিংড়ি, গরুর মাংস, ডিম ইত্যাদি দিয়েও খাওয়া হয় অনেক সময়। নাইজেরিয়ায় প্রচুর পরিমাণ বিন উৎপন্ন হওয়ার কারণে দেশটিতে ইফতারে জনপ্রিয় একটি আইটেম মই মই।
সিরিয়ার খেজুর পিঠা
খেজুর আর বাদাম দিয়ে বানানো এই পিঠা সিরিয়ায় ঈদের দিন খাওয়া হলেও ইফতারিতেও সমান জনপ্রিয়। সাধারণ বিস্কুটের সঙ্গে এই পিঠার পার্থক্য এর জন্য তাবে নামের একধরনের কাঠের বা প্লাস্টিকের মোল্ড বা পাত্র ব্যবহার করা হয়। ওই পাত্রের কারণেই এই পিঠার আকৃতি হয় একটু ব্যতিক্রমী। সিরিয়ার অনেক বাড়িতে প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই মোল্ড বা পাত্র ব্যবহৃত হয়। রোজার সময় ইফতারে, অতিথি আপ্যায়নে বা নামাজের বিরতিতে খাওয়া হয় এই খেজুর দিয়ে বানানো পিঠা।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর