এক আষাঢ় সন্ধ্যায় মানাসের চা চক্রে
৫ জুলাই ২০১৯ ১৩:০৬
দুই বছর আগে এক বর্ষাতে মানাসের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল টিপু। অনলাইনে দেশীয় শাড়ি খুঁজতে গিয়ে এই পরিচয়ের শুরু। সবগুলো শাড়ির ছবি দেখে মনে হয়েছিল একেবারে নিজস্ব ভাবনাকে সবার কাছে তুলে আনবার প্রয়াসেই মানাসের জন্ম।
মানাসের স্বত্তাধিকারী ফাইজা আহমেদ, টিপুর বহু পুরানো দিনের পরিচিত একজন আদরের ছোট্ট বোন। ফাইজার আয়োজনে মানাসের পেইজে প্রায় প্রতি ঋতু জুড়েই ‘ক্যাফে সঞ্চয়িতা’ শিরোনামে চা চক্রের খবর দেখেছি। যাওয়া হয়নি কখনও। তবে ছবিগুলো দেখতে দেখতে এক সময় ধারণা করে নিয়েছিলাম তাঁর ভালোবাসার কাজগুলো সম্পর্কে।
এবার আষাঢ়ের প্রথমেই ফাইজা আমাকে ক্যাফে সঞ্চয়িতায় ‘আষাঢ় চা চক্রে’ যাওয়ার আমন্ত্রণ করে। খুব খুব করে অনুরোধ করে সে। সময়টা সুন্দর আর সাধ্যে হওয়ায় আমি আর টিপু এক বাক্যে সেদিন উপস্থিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। ঘন আষাঢ়ের দপদপে তাপের সেই সন্ধ্যায় বনানীতে মানাসের ছোট্ট কিন্তু অনিন্দ্যসুন্দর আঙিনায় পা রাখতেই চোখে পরলো সলতেতে ঘিয়ের প্রদীপ দিয়ে সাজানো সিড়ি, বেয়ে উঠতেই কালো বোর্ডে সাদা চকে আঁকা কবিতা কলির কলরব। দেখামাত্র দৌড়ে ফাইজা জড়িয়ে ধরলো আমায়। আনন্দে ভাসতে ভাসতে আমাদের নিয়ে গেল আধো আলো-আঁধারে আচ্ছন্ন এক ঘরে। সেখানে গিটার হাতে সজীব টুংটাং সুর তুলছে। মেঝেতে চাদর বিছানো, এক গুচ্ছ মানুষ যে যার মতন বসে সুরের লয়ে দুলছে। অদ্ভুত সুন্দর এক দৃশ্য।
সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে মুহূর্তেই আপন করে নিল সকলে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো ফাইজার চা চক্রের আয়োজনের গল্প শুনলাম। নিম, স্বর্ণপ্রভা আর নয়নতারা ফুলের সাথে গামছার উত্তরীয়তে আমায় সন্মান জানালো সে। আমি আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলাম। আষাঢ় চা চক্রে মানাসের নতুন শাড়ির মোড়ক উন্মোচন করলাম দুজন মিলে। শিল্পী আখিরের একটি স্কেচ নিয়ে এই শাড়ি তৈরী হয়েছে।
আখির নিজের গল্প বলবার পর, আবারও সজীব বর্ষার গান শুরু করলো। সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে সেই একগুচ্ছ মানুষের মাঝে বিদেশী ছিল তিন-চারজন। আমরা কেউ একটিও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করলেও তারা একমনে আমাদের গল্প শুনেছে, গান শুনেছে। গান শেষে চা চক্রের পালা। সারি সারি মাটির চায়ের কাপ আর বাটি। মুড়ি ভাজা, ডালপুরী, পাকোরা, গোলাপ পিঠা একদিকে সাজানো। আরেকদিকে রঙ চায়ের আসর। লেবু, পুদিনাপাতায় রঙ চা।
আমরা যে যার মতন নিয়ে, যে কয়টা মন হয় তাই নিয়ে খাবারের আয়োজন। সবাই খাচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে। আমাদের জন্য ঢাকা শহরে এমন এক চায়ের আড্ডা বহু বছর পর উপভোগ করা। এমন অদ্ভুত এক মোহগ্রস্ত সময়ে আমি আর টিপু মন্ত্রমুগ্ধ মুহূর্ত কাটাবো, যাওয়ার আগে কখনও ভাবিনি। মানাসের প্রতিটা শাড়ি একেকটি ইতিহাস, একেকটি গল্পের কথা বলে। পুরো জায়গার প্রতিটা কোণ আদর আর ভালোবাসায় সাজানো। তাছাড়া একটা চা চক্র আর নতুন শাড়ির মোড়ক এতো শৈল্পিক কলায় আয়োজন করা যায়, তা নিজেদের চোখে না দেখলে কখনও ভাবনাতেও আসতো না।
অতি সযতনে ফাইজার ভালোবাসায় আবারও বলতে ইচ্ছে হলো, ভালোবাসলে ভালোবাসা আসে। মানাস, ফাইজা, মানাসের সকল কলাকুশলীর জন্য বুক ভরা ভালোবাসা জানালাম আজ, এই লেখার মাধ্যমে। আগামী চা চক্রে আবারও দেখা হবে সবার সাথে। ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা।
সারাবাংলা/টিসি