অপার মুগ্ধতার টাওয়ার ব্রিজ
১৩ জুলাই ২০১৯ ২০:৫১
ক্রিকেট বিশ্বকাপের সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশে লন্ডন আসার পর থেকেই সুযোগ খুঁজছিলাম ব্রিটিশদের ১২৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী টাওয়ার ব্রিজটি দেখার। কেন? পৃথিবীতে অসংখ্য নান্দনিক ও ব্যতিক্রমী ব্রিজ থাকলেও লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজের মতো এতটা আবেদন বোধ করি আর কোনো ব্রিজেরই নেই। অনন্য স্থাপত্য শৈলীতে ব্রিজটি সারাবিশ্বের অন্য আর সব ব্রিজের চাইতে আলাদা।
যা হোক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের টাইট শিডিউল থাকায় এতদিন সুযোগ হয়নি। টাইগারদের দেশে ফেরার পর অবশেষে সেই সুযোগটি এল। রোববার (৭ জুলাই) বিকেলে লেইটন থেকে উঠলাম ডিস্ট্রিকট লাইন ট্রেনে। সেখান থেকে মনুমেন্ট। এরপর ট্রেন বদলে নর্দান লাইনে সোজা পৌঁছে গেলাম লন্ডন ব্রিজ আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন।
আন্ডারগ্রাউন্ডে স্টেশনে নেমে ওপরে উঠতেই পড়ে গেলাম দিক নিয়ে বিভ্রান্তিতে। কোন দিকে যাব? কতক্ষণই বা লাগবে? অবশ্য বিভ্রান্তি কাটতে সময় লাগেনি। কেন না ওখানে এসে যারা নামছে তারা সবাই একদিকেই হাঁটছে। বুঝতে বাকি রইল না, এরা সবাই টাওয়ার ব্রিজমুখী। পড়ন্ত বিকেলে অসংখ্য মানুষ দলে দলে ছুটছে, তাদের পিছু নিলাম। ধারণা ভুল হলো না। মিনিট দশেক হাঁটার পরই দৃষ্টি সীমানায় গোচর হল, রাজকীয় ভাবগাম্ভীর্যের সেই টাওয়ার ব্রিজ।
দূর থেকেই টাওয়ার ব্রিজের রাজকীয় দ্যুতি চোখে এসে আছড়ে পড়ছিল। কী অসাধারণ তার স্থাপত্য! কতটা ব্যতিক্রমী ও রুচিশীল ভাবনা থেকে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল, ব্রিটিশদের সেই দূরদর্শীতার কথা ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। শুধু আমিই নই, আমার মতো হাজারও পর্যটক সেখানে প্রতিদিনের মতো ভিড় জমিয়েছিলেন।
বেশিরভাগদেরই দেখলাম ব্রিজের সঙ্গে একাত্ব হয়ে ছবি তোলায় মগ্ন। কেউবা পেশাদার ফটোগ্রাফি করছেন। আবার কেউ কেউ এসেছেন মডেলিং করতে। পেশাদার ফ্যাশন হাউজগুলো তাদের মডেলদের নিয়ে এসে এখানেই ফটোশ্যুট করছেন। অনেকে আবার টেমস নদীর পাড় ঘেঁসে স্থাপিত বেঞ্চিতে বসে অবলোকন করছেন দিনের গোধুলি বেলার অপার সৌন্দর্যের টাওয়ার ব্রিজ।
লন্ডনেরর পাশে টেমস নদীর ওপরে এই ব্রিজের আশপাশে গড়ে উঠেছে অগণিত বাণিজ্যকেন্দ্র। তবে রেস্তোরাঁ ও পানশালার আধিক্যই চোখে পড়ার মতো। ব্রিজের এপার ওপার দু’পারেই।
টাওয়ার ব্রিজটি মুলত টেমস নদীর উত্তর পাড়ের আয়রন গেইট ও হর্সলি ডাউন লেনকে যুক্ত করেছে। ব্রিজটির বেশিষত্ব হলো, এটি মাঝ বরাবর আলাদা হয়ে উপরে উঠে যেতে পারে। যাতে করে বড় আকারের কোনো জাহাজ নিচ দিয়ে কোনো ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই চলে যেতে পারে। জানা যায়, একসময় দিনে ৫০ বারও ব্রিজটির মাঝের অংশ ওপরে উঠানো হতো। কিন্তু এখন আর এতবার প্রয়োজন হয় না। এখন দিনে সাত কি আট বার উপরে তুলতে হয়।
আর এই বিষয়টিই পর্যটকদের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ব্রিজটির বিভাজন দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা মুখিয়ে থাকেন। ব্রিজের ওপরে রয়েছে ৬৫ মিটারের বিশাল আকৃতির দুটি টাওয়ার। এই দুই টাওয়ারের সঙ্গে হাঁটার পথের সংযোগ করা আছে। যেখানে হেঁটে হেঁটে লন্ডনের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। কিন্তু এখানে হাঁটা-চলা করা নিষেধ। কেন না এক সময়ে এখানকার স্থায়ী ও অস্থায়ী বাসিন্দাদের এখান থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্নহত্যার মাত্রা বেড়ে গিয়োছিল।
লন্ডনের ইতিহাস থেকে জানা যায় নগরীর পূ্র্বাংশ যখন জনবহুল হয়ে পড়ে তখন বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ কমাতে অপরপাশে লন্ডনকে বাড়াতে ১৮৮৬ সালে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৮ বছরের নির্মাণ কাজ শেষে ১৮৯৪ সালে সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য ব্রিজটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
ব্রিজের উদ্বোধন করেছিলেন রাজা অ্যাডওয়ার্ড ফোর ও রাণী আলেকজান্ডারা। ব্রিজটির নির্মাণে তৎকালীন সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১১ লাখ ৮৪ হাজার পাউন্ড।
সারাবাংলা/এমআরএফ/জেএইচ/এমআই