কোন মেকআপ কতদিন ব্যবহার করবেন?
১৬ জুলাই ২০১৯ ১৩:০১
প্রতিটি পণ্যের মতো মেকআপ সরঞ্জামেরও আছে নির্দিষ্ট মেয়াদ। মেকআপ সামগ্রী খোলার পর তা কতদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে তা মোড়কে উল্লেখ থাকলেও আমরা অনেকেই তা খেয়াল করি না। পণ্যটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিন্তে ব্যবহার করে যাই। তাছাড়া অনেক টাকা দিয়ে মেকআপ করার সরঞ্জাম কেনার ফলে শেষ হওয়ার আগে সেটি ফেলে দিতে খারাপ লাগে। সে কারণেও অনেক মেকআপ সামগ্রী ফেলে দেওয়া হয় না।
তবে মনে রাখা ভালো, মেয়াদ পার হওয়ার পর সেই মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করলে ত্বক ও চোখে নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ মেকআপ ব্যবহারে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস সংক্রমণ বেড়ে যায়। ব্রণ, র্যাশ, চুলকানি, ত্বক ও ঠোঁটে কালচে ভাবসহ নানা সমস্যায় আক্রান্তদের সংখ্যা কম না।
ত্বকের প্রতি যত্নবান হতে কেবল ফেসিয়াল করাই যথেষ্ট নয়। প্রতিদিন যেসব মেকআপ ব্যবহার করছেন, সেগুলোর মেয়াদ আছে কিনা তাও জানা দরকার।
মুখ খোলার পর কোন মেকআপ কতদিন পর্যন্ত ব্যবহার করবেন তা জেনে নিন-
টোনার, ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার
টোনার, ক্লিনজার ও ময়েশ্চারাইজার মুখ খোলার পর থেকে ১ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা উচিত। তবে বছর শেষ হওয়ার আগেই যদি আপনার এই পণ্যগুলোর রং, গন্ধে পরিবর্তন আসে এবং ঘন হতে শুরু করে তাহলে ব্যবহার না করে ফেলে দিন।
এতে কিছু টাকা আপনার ক্ষতি হবে ঠিকই, কিন্তু এক্ষেত্রে টাকার চেয়ে ত্বকের সুস্থতাই নিশ্চিত করা জরুরি।
কনসিলার
ত্বকে ব্রণের দাগ, মেছতা, চোখের নীচে কালো দাগ থাকলে কনসিলার ব্যবহার করা হয়। ফাউন্ডেশন থেকে এক শেড উজ্জ্বল রঙের কনসিলার কিনতে হবে। কনসিলার খোলার পর থেকে ১ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা উচিত।
ফাউন্ডেশন
ত্বকের রং অনুযায়ী ফাউন্ডেশন নির্বাচন করতে হয়। এজন্য কেনার আগে ত্বকের একটি ছোট অংশে লাগিয়ে দেখে নিন। এবার আসা যাক, ফাউন্ডেশন কতদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা উচিত।
যেহেতু ভালো ব্র্যান্ডের ফাউন্ডেশনের দাম বেশি, ফলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ব্যবহার করতেই থাকি। এতেই হয় বিপত্তি। দেখা দেয় ত্বকের র্যাশ, ব্রণসহ আরো নানা সমস্যা। ফাউন্ডেশনের মুখ খোলার পর থেকে ১ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা উচিত।
ফেস পাউডার, ব্লাশন
সাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফেস পাউডার ও ব্লাশন। ব্লাশন লাগাতে হবে ব্লাশার ব্রাশ দিয়ে। ফেস পাউডার ও ব্লাশন খোলার পর ২ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
মনে রাখা ভালো, আপনার ব্যবহৃত ফেস পাউডারের স্পঞ্জ ও ব্লাশার ব্রাশ অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেবেন না। অথবা অন্য কারো ব্যবহৃত এসব জিনিস আপনিও ব্যবহার করবেন না।
আইশ্যাডো
পোশাকের সাথে মিলিয়ে আইশ্যাডো ব্যবহার সাজের অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। অনেকে আলাদা আলাদাভাবে আইশ্যাডো কেনেন, আবার অনেকে কেনেন আইশ্যাডো বক্স। যাই কিনুন না কেন আইশ্যাডোর মুখ খোলার পর ২ বছর ব্যবহার করতে পারবেন। এর চেয়ে বেশি সময় ব্যবহার করলে চোখে নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে। কারণ মেয়াদ শেষ হলে আইশ্যাডোতে বাসা বাঁধতে পারে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া।
মাশকারা
মাশকারা খোলার পর থেকে ৬ মাস ব্যবহার করা উচিত। অনেকের চোখে অ্যালার্জির সমস্যা হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো, একই মাশকারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা। গবেষণায় দেখা গেছে, মাশকারায় খুব দ্রুত ব্যাকটেরিয়া জন্মে।
আইলাইনার
পেনসিল আইলাইনারের চেয়ে লিকুইড আইলাইনারের মেয়াদ কম থাকে। পেনসিল আইলাইনার ১ বছর ব্যবহার করা গেলেও লিকুইড আইলাইনার ৬ মাস ব্যবহার করা উচিত।
লিপস্টিক
মনের মতো রঙের লিপস্টিক পাওয়া খুব কঠিন। তাই, একবার পেলে তা বাতিল করতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু ইচ্ছা, অনিচ্ছার সাথে এক্ষেত্রে ত্বকের সুস্থতার সম্পর্ক নেই। তাই একটি লিপস্টিক ২ বছর পর আর ব্যবহার উচিত না। এতে ঠোঁট মারাত্মকভাবে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে এবং ঠোঁটের রঙে কালচে ভাব দেখা দিতে পারে।
লিপগ্লস
একটি লিপগ্লস ১ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন। তবে বছর শেষ হওয়ার আগেই যদি আপনার লিপগ্লসের রঙ পরিবর্তন হয় তাহলে তা ব্যবহার না করে ফেলে দিন।
লিপবাম, লিপলাইনার
সারাবছরই লিপবাম বা লিপজেল আমরা ব্যবহার করি। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় এর ব্যবহার বেশি। একটি লিপবাম ১ বছরের বেশি ব্যবহার করা উচিত না।
একটি লিপনাইনার ১ বছর ব্যবহার করতে পারেন।
নেইলপলিশ
নেইলপলিশও দীর্ঘদিন ব্যবহার করা উচিত না। নেইলপলিশ খোলার ২ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। ২ বছরের আগে নেইলপালিশের রঙ পরিবর্তন হলে তা আর ব্যবহারের উপযোগী থাকে না।
এছাড়া আইল্যাশ, সুগন্ধি, লোশনসহ যেকোন পণ্য মেয়াদের তারিখ দেখে নিন।
ত্বকের সুস্থতার ব্যাপারটিই সবার আগে মাথায় রাখা জরুরি। এজন্য ভালো মানের পণ্য কিনতে হবে। মেয়াদ দেখে ব্যবহার করতে হবে।
সারাবাংলা/টিসি