Friday 18 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এক ছাদের নিচে দেশীয় শিল্পের বাহারি সমাহার


২৪ আগস্ট ২০১৯ ২১:২৩ | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০১৯ ১৫:০৭
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একদিকে রং-বেরঙের রিকশা পেইন্টের পণ্য, অন্যদিকে রঙিন হাতপাখা, আবার কোথাও রঙে রঙিন মৃৎশিল্প। এমনই নানারকম দেশীয় হস্তশিল্প ও কারুপণ্যের প্রদর্শনী চলে ঢাকার রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনের উৎসব হলে। এই প্রদর্শনীর আয়োজনে ছিল বাংলাদেশ হেরিটেজ ক্রাফটস ফাউন্ডেশন।

২৩ ও ২৪ আগস্ট সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলেছে প্রদর্শনীটি। এখানে ঢাকাই জামদানি, রাজশাহী সিল্ক ও মসলিনের মতো দেশীয় কাপড়ের পাশাপাশি শখের হাঁড়ি এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পও ছিল।  নকশী পিঠা, ঢাকাই পনির, বাকরখানি এবং মেহেদী আর্ট ছিল আয়োজনে।

স্টোন ক্র্যাফটস নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে আসেন সাহিদা আখতার। পঞ্চম শ্রেণীতে ওঠার পর হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। কিন্তু শারীরিক এই প্রতিবন্ধিতায় থেমে যায়নি তার পথচলা। হাতের আন্দাজেই বানিয়ে চলেন একের পর এক স্টোন ক্র্যাফটসের পণ্য। শিখেছেন বড়বোনের কাছ থেকে। জানা গেল এ বছরই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্মে মাস্টার্সও করেছেন ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করে। পরিবারের সহযোগিতায় এগিয়ে চলেছেন অদম্য সাহিদা।

বিজ্ঞাপন

এক কোণে দেখা মেলে যশোরের নকশিকাঁথার। মিলেছে স্থানীয় নারীদের হাতে সেলাই করা কাঁথা, শাড়ি, চাদর, কুশন ইত্যাদি।

একসময় শহরের রাস্তায় ছুটে চলে রিকশাগুলোতে চোখে পড়ত চমৎকার পেইন্টিং। হারাতে বসা রিকশা পেইন্টকে নতুন করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে ওয়ান কালচার। প্রদর্শনীতে মেলে রিকশা পেইন্টের আদলে হাতে আঁকা কেটলি, টিফিন কেরিয়ার, আয়না, হারিকেন, গয়নার বাক্স, জগ ইত্যাদি।

মাটির তৈরি রঙিন হাড়ি, কলস ইত্যাদি জানান দেয় মৃৎশিল্পে আমাদের ঐতিহ্য। মেলায় চলে এগুলোর প্রদর্শনী।

আয়োজন নিয়ে উদ্যোক্তা টুটলি রহমান জানান, তিরিশ বছর ধরে তাঁতিদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। দেশের ঐতিহ্যবাহী কারু ও তাঁতশিল্প যেন হারিয়ে না যায়, তাই গতবছর বাংলাদেশ হেরিটেজ ক্র্যাফটস ফাউন্ডেশন করেন তিনি। কারুপণ্য নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এই আয়োজন। দুইবারই দর্শনার্থীদের দারুণ সাড়ায় তিনি সন্তুষ্টি জানান।

তিনি বলেন, ‘এখানে ২৫ ধরনের পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। আটজন কারুশিল্পী এখানে বসেই বানিয়ে দেখান নানা হস্তশিল্পজাত পণ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘তরুণদের মধ্যে বাংলাদেশি কারুশিল্প ও হস্তশিল্পকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য হেরিটেজ ক্র্যাফটস অনলাইনে বিক্রির পাশাপাশি ভবিষ্যতে একটি হেরিটেজ হাট স্থাপনের ইচ্ছা আছে। আমাদের দেশের শিশুদের হস্তশিল্প ও কারুশিল্পের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে  ইতোমধ্যে ক্র্যাফটস ও তাঁত নিয়ে দুটো বই বের হয়েছে। হস্তশিল্পের পরিচিতি নিয়ে বানানো হয়েছে এনিমেশন।

টুটলি রহমান জানান, বইমেলায় এই বই এবং এনিমেশন নিয়ে অংশগ্রহণের ইচ্ছা আছে তার।

আয়োজকদের অন্যতম রেড বইটি স্যালনের স্বত্বাধিকারী আফরোজা পারভীন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি হস্তশিল্প ও ঐতিহ্যের প্রতি তার সবসময়ই আগ্রহ ও ভালোবাসা। সেই থেকেই বাংলাদেশ হেরিটেজ ক্র্যাফটসের সঙ্গে জড়িত হওয়া।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে উৎসব মানেই হাতে মেহেদী দেওয়া যেটা এখন অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে।’ প্রদর্শনীতে রেড থেকে মেহেদী দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এছাড়াও তিনি আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী নকশী পিঠাও এনেছেন।

ছিলেন এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য রন্ধনশিল্পী আফরোজা নাজনীন সুমি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক আঞ্চলিক রান্নাই হারিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী সেসব রান্না নিয়েই আমার কাজ।’

এক কোনে স্টেজে বসে পাটের দড়ি দিয়ে শিকা বুনছিলেন সুচিত্রা ও আশালতা। সম্পর্কে তারা বউ-শ্বাশুড়ি। গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে এসেছেন তারা। জানা গেল তাদের গ্রামের অনেকেই পাটের তৈরি জিনিস বানিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদেরকে এনেছেন আস্ক হ্যান্ডিক্র্যাফটসের মালিক সিরি দত্ত। ৩২ বছর ধরে হস্তশিল্পজাত পণ্য রফতানি করছেন তিনি। তার স্টলে পাওয়া যাচ্ছে পাট, বেত খেজুরপাতা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি নানারকম নান্দনিক ডিজাইনের গৃহস্থালি সামগ্রী।

সিরি দত্ত জানান, গাজীপুর ছাড়াও বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে হস্তশিল্পজাত পণ্য সংগ্রহ করেন তিনি।

চমন’স ফ্যাশনে দেখা মিলল মনিপুরী তাঁত ও গামছার ফিউশনে বানানো নানা পোশাক, গামছা ইত্যাদি। দেখা গেল নানা ডিজাইনের ফিউশন শাড়ি, পাঞ্জাবি, কোট ইত্যাদি।

এখানে দুইদিনই ছিল সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। এসব অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছিল। ছিল ফ্যাশন শো। ফ্যাশন শোয়ে খাদি ও রিকশা পেইন্টের পোশাক, সানগ্লাস, জুতা ইত্যাদি তুলে ধরা হয়।

দ্বিতীয় দিন আব্বাস উদ্দীনের পল্লিগীতি নিয়ে ছিলেন, নাশিদ কামাল। এছাড়াও গান করেন বাউল শফি মন্ডল।

প্রথমদিনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত এইচ ই ত্রান ভান খোয়া।

দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথি ছিলেন থাইল্যান্ড এর রাষ্ট্রদূত এইচ ই আরুনরুং ফটং হুমফ্রেস এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক।

https://youtu.be/Ltmgl0u6gyI

কারুপণ্য টুটলি রহমান দেশীয় হস্তশিল্প বাংলাদেশ ক্র্যাফটস কাউন্সিল হস্তশিল্প

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর