Monday 30 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পরিবেশ বাঁচাতে প্লাস্টিককে না বলুন ৭ উপায়ে


৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:৩০

প্লাস্টিক মাটির সঙ্গে মিশে যেতে (decompose) এক হাজার বছর সময় নেয়। পলিব্যাগ কিছুটা পাতলা হওয়ায় দশ বা বিশ বছর সময় নিলেও প্লাস্টিকের বোতলের প্রয়োজন সাড়ে চারশ বছর। অথচ পলিব্যাগ, প্লাস্টিকের বোতল, চেয়ার, বক্স ইত্যাদির মতো অসংখ্য প্লাস্টিক পণ্য ছাড়া আমাদের প্রতিদিনের জীবন চিন্তাও করা যায় না।

এই অতিরিক্ত প্লাস্টিক নির্ভরতা আমাদের পরিবেশ বিপর্যয়ে বড় ধরণের ভূমিকা রাখছে। প্লাস্টিকের মাধ্যমে মাটি ও পানি দূষণের ফলে একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা, পরিবেশ, মানুষ ও জলজ জীবন।

বিজ্ঞাপন

প্লাস্টিক দূষণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের জন্য হুমকিস্বরুপ। থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের জন্য পরোক্ষভাবে প্লাস্টিক দূষণ অনেকটাই দায়ী।

শুধুমাত্র আমেরিকায় প্রতিবছর ৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ পুনঃচক্রায়ন করা হলেও বাকি ৩.৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য আকারে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়।

কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের বেশিরভাগই পুনঃচক্রায়ন (রি-সাইক্লিং) হয় না। তাই যেকোন প্লাস্টিক পণ্যই পরিবেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর। বলতে গেলে আমাদের অসচেতনতাই প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ।

বর্তমানে বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবেই নয়, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে উদ্যোগী হতে হবে আমাদেরও। পরিবেশকে আরও বেশি বিপর্যয় থেকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন দৈনন্দিন জীবনে সচেতনভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো।

বিজ্ঞাপন

আসুন, দেখে নেই প্রতিদিনের জীবনে কীভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পারি।

প্লাস্টিক বিপর্যয়

১. প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের পরিবর্তে কাঁচ, মাটি বা স্টিল

প্লাস্টিকের পানির বোতল, কৌটা, বাটি, থালাবাটি ইত্যাদির ব্যবহার যতটা সম্ভব কমিয়ে কাঁচ, অ্যালুমিনিয়াম ও স্টেনলেস স্টিলের ব্যবহার বাড়ান। প্লাস্টিকের বালতির পরিবর্তে ব্যবহার করুন টিন বা পিতলের বালতি। মাটির তৈরি তৈজসপত্রও হতে পারে প্লাস্টিকের পরিবেশবান্ধব বিকল্প।

২. আর নয় পলিব্যাগ

এটা কিছুটা কঠিন মনে হতে পারে। তারপরও পলিব্যাগের ব্যবহার কমাতে পাট ও কাপড়ের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার বাড়ান। কাপড়ের ব্যাগ ধুয়ে বারবার ব্যবহার করা যায়।

প্লাস্টিক বিপর্যয়

অসুবিধায় পড়তে পারেন প্রতিদিন আবর্জনার ঝুড়িতে ব্যবহৃত পলিব্যাগের বিকল্প খুঁজতে গেলে। কাপড় বা পাটের তৈরি ব্যাগের ক্ষেত্রে তরল বর্জ্য অপসারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে টিনের বালতি বা বড় কৌটা। এটা প্রতিদিন ধুয়ে, শুকিয়ে ব্যবহার করা যায়। আর যদি হাতের নাগালে বায়ো ডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ পেয়েই যান, সেটাই হতে পারে পরিবেশ রক্ষায় আপনার নেওয়া ইতিবাচক পদক্ষেপ।

৩. খুঁজতে হবে টুথব্রাশেরও বিকল্প

একটা প্লাস্টিকের তৈরি টুথব্রাশ মাটির সঙ্গে মিশে যেতে চার হাজার বছর সময় নেয়। একবার ভাবুন তো এই জীবনে কতগুলো টুথব্রাশ আমরা ব্যবহার করেছি যা মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য হাজার বছর ধরে অপেক্ষা করছে!

পরিবেশ বাঁচাতে তাই এই মুহুর্তে প্রয়োজন টুথব্রাশেরও বিকল্প খোঁজা। ইতোমধ্যেই বাঁশের তৈরি টুথব্রাশ পাওয়া যাচ্ছে। সেটা হয়ত হাতের কাছে নাও পেতে পারেন। তবে চাইলেই সারাবছর টুথব্রাশ কেনার পরিমাণ কমাতে পারেন। প্লাস্টিকের টুথব্রাশের পাশাপাশি আমাদের দেশে হাজার বছর ধরে প্রচলিত নিমের ডালের দাঁতন ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে একটা প্লাস্টিকের টুথব্রাশেই চলে যাবে অনেকদিন।

৪. কেনা পানীয়কে না বলুন

প্রতিদিন পানি, কোমলপানীয়, ফলের রস ইত্যাদির জন্য কী পরিমাণ প্লাস্টিকের বোতল কিনি ভাবুন তো একবার! একেকটি বোতল মাটির সঙ্গে মিশে যেতে সাড়ে চারশ বছর সময় নেয়।

প্লাস্টিক বিপর্যয়

তাই প্লাস্টিক বোতলে বাজারজাত করা পানীয়ের পরিবর্তে তাজা ফলের রস, ডাবের পানি, লেবুর শরবত খান। এগুলো শুধু স্বাস্থ্যকরই নয়, ভূমিকা রাখে পরিবেশ বিপর্যয় রোধেও।

৫. তুলার তৈরি স্যানিটারি ন্যাপকিন

সারা পৃথিবীতেই নারীরা কাপড় ও তুলার তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন, ট্যাম্পুন ইত্যাদি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি এটা ভালো রাখবে আমাদের পরিবেশও।

প্লাস্টিক বিপর্যয়


৬. এয়ার ফ্রেশনারের বিকল্প হতে পারে ধূপকাঠি

আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরেই নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধুপকাঠি জ্বালানো হয়। প্লাস্টিকের বোতলজাত এয়ার পিউরিফায়ারের জায়গায় আমরা সহজেই ব্যবহার করতে পারি ধূপকাঠি।
প্লাস্টিক বিপর্যয়

প্রকৃতিবান্ধব ধূপকাঠি দীর্ঘক্ষণ ধরে সুগন্ধই ধরে রাখবে না, কমাবে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণও। ঘরে বা গোসলখানায় তাজা ফুলও কাজ করবে এয়ার ফ্রেশনারের বিকল্প হিসেবে।

৭. কাপড় কাঁচার সাবানেরও বিকল্প‍!

কাপড় কাঁচার সাবান বা গুঁড়া পাউডারের পরিবর্তে ব্যবহার করুন রিঠা। চুল ধোয়ার জন্য অনেকেই রিঠা ব্যবহার করে থাকেন। এখন থেকে প্লাস্টিক প্যাকেটজাত ওয়াশিং পাউডারের পরিবর্তে ব্যবহার করুন রিঠা। এটা কাপড় থেকে পাকৃতিকভাবেই দূরে রাখবে ক্ষতিকর পোকা। রিঠায় ভেজানো কাপড় ধুতে ডিটার্জেন্টের তুলনায় পানিও লাগে কম।
প্লাস্টিক বিপর্যয়

আধুনিক এই সময়ে আমরা যতটা সম্ভব টেকসই আর সহজ জীবন যাপন করতে চাই। দামে সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে প্লাস্টিকের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। তাই চাইলেও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো সম্ভব না বলেই ভাবতে পারি আমরা। কিন্তু এভাবেই প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়িয়ে পরিবেশ বিপর্যয় করছি আমি আপনি সবাই। তাই আসুন সচেতন হই। ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে কমাই প্লাস্টিকের ব্যবহার। যতটা সম্ভব অর্গ্যানিক ও বায়ো ডিগ্রেডেবল পণ্যের ব্যবহার বাড়াই।

অর্গ্যানিক পরিবেশ বিপর্যয় প্লাস্টিক দূষণ প্লাস্টিক পণ্য

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর