ঘুরতে যাই নয়নাভিরাম রাঙ্গামাটি
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৬:১০
মিল্টন বাহাদুর
রাঙ্গামাটি, পার্বত্য এ জেলা শহরটি দেশ বিদেশের পর্যটকদের পদচারণায় প্রায় সারা বছরই মুখরিত থাকে। ভ্রমণ বিলাসী ও সৌন্দর্যপিপাসু অসংখ্য মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় গোটা রাঙ্গামাটি শহরজুড়ে। এ জেলার নয়নাভিরাম দর্শনীয় জায়গাগুলোর অন্যতম হচ্ছে সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ, হ্রদের উপরের ঝুলন্ত ব্রিজ, ছোটবড় অসংখ্য পাহাড়, অগণিত পাহাড়ী ঝর্ণা ছাড়াও সুবলংয়ের মনোরম ঝর্ণা, নদী, হ্রদ, ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ী, রাজবন বিহার, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ছাড়াও আছে অসংখ্য ছোটবড় দর্শনীয় জায়গা।
সারাবছরই রাঙ্গামাটি ঘুরতে যাওয়া যায় তবে, শীত আর বর্ষা হচ্ছে এখানে বেড়ানোর উপযুক্ত সময়। রাঙামাটি ভ্রমণে পাবেন উৎসবের আমেজ ও দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশ। তাই প্রতি বছর বর্ষা শেষেই ভ্রমণ পিয়াসী দেশী বিদেশী পর্যটকরা ভিড় জমান বৃহত্তর চট্টগ্রামের এই পার্বত্য জেলায়। বছরের পাঁচ মাস এখানে পর্যটকে মুখরিত থাকে। বিশেষত বসন্তের উসৎবে মেতে ওঠার জন্য রাঙ্গামাটির মত প্রাকৃতিক পরিবেশ দুনিয়ার আর কোথাও নেই যেন! তাই যে কেউই পরিবার পরিজন বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বেড়াতে পারেন এখানে। জীবনে অন্তত একবার হলেও এখানে না গেলে যেন অনেককিছু দেখা থেকে বঞ্চিতই হতে হবে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙ্গামাটি যেতে পাবেন ডলফিন, এস. আলম, শ্যামলী, হানিফ, বিআরটিসিসহ বহু বিলাসবহুল বাস সার্ভিস। এসি নন এসি দুইই পাবেন। ঢাকার সায়েদাবাদ, কমলাপুর, ফকিরাপুল, মতিঝিল, কলাবাগান থেকে দিনে বা রাতে উঠতে পারেন রাঙ্গামাটিগামী বাসে। এসি বাসের ভাড়া দেড় হাজার টাকা আর নন এসিতে পড়বে সাতশত টাকা। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি যাওয়া যায় খুব সহজে। চট্টগ্রামের অক্সিজেন ও কদমতলীতে আছে রাঙ্গামাটির প্রধান বাস ষ্টেশন যেখানে পাবেন বিআরটিসি, দ্রুতযান ও পাহাড়ীকা বাস সার্ভিসের মত সার্ভিস। ষ্টেশন রোড থেকে পাওয়া যায় এস আলম, হানিফ ও শ্যামলী। চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটির যেকোন বাসের ভাড়া একশো বিশ টাকা থেকে একশো চল্লিশ টাকা।
যাওয়ার পথে যা দেখতে পাবেন
চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে বাসে চড়ার সময় বেতবুনিয়ায় পা বাড়ালেই পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি। এই বেতবুনিয়াতেই দেশের সর্বপ্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি অবস্থিত। এরপর রানীরহাট বাজার অতিক্রম করে সামনের দিকে তাকালে চোখে পড়বে সুউচ্চ অসংখ্য পাহাড়ের সারি। সামনের দিকে এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সবচেয়ে উচু যে পাহাড়টি চোখে পড়বে সেটি হল ফুরমোন পাহাড়।
যেখানে বেড়াতে যাবেন
শহরে বেড়ানো ও দেখার মতো অনেক জায়গা, স্থাপনা ও নিদর্শন আছে। এগুলোর মধ্যে কাপ্তাই লেক ভ্রমন, পর্যটন মোটেল, ডিসি বাংলো, ঝুলন ব্রিজ, পেদা টিংটিং, সুবলং ঝর্না, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, উপজাতীয় জাদুঘর, কাপ্তাই হাইড্রো ইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে নিরাপত্তার জন্য শহর থেকে দূরে কোথাও গেলে সন্ধ্যার আগেই ফেরা ভালো।
কিভাবে যাবেন
শহরের একমাত্র বাহন সিএনজিচালিত অটোরিক্সা। আর নদী পথে চলে ইঞ্জিন চালিত বোট, ইঞ্জিন চালিত ফাইবার বোট ও স্পীড বোট। এসব যানবাহনে ঘন্টাপ্রতি খরচ পড়বে পাঁচশো থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। আর উপজেলায় ঘুরতে চাইলে যেতে হবে লঞ্চ যোগে আর সেখানে এক রাত থাকতে চাইলে আগে থেকেই ব্যবস্থা করতে হবে।
ভ্রমণের প্যাকেজ
কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমনে হোটেল মালিক সমিতির উদ্যোগে নেয়া হয়েছে বিশেষ প্যাকেজ সুবিধা। এখানে পাবেন জন প্রতি চারশো টাকা করে প্রায় ছয় থেকে সাতটি স্পট ও হ্রদে ভ্রমনের সুযোগ, নাস্তা ও দুপুরের খাবার। সপ্তাহে দুইদিন শুক্রবার ও শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়া হয় সকাল দশটায় আর ফেরে বিকেল পাঁচটার দিকে।
শীত থাকতে থাকতেই চলুন ঘুরে আসি পাহাড়ি জনপদ রাঙ্গামাটি থেকে।
লেখকঃ গাজী টিভি জেলা প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটি।
ছবিঃ লেখক
সারাবাংলা/আরএফ