দ্য লাস্ট প্যারাডাইজ অন আর্থ ।। ১ম পর্ব: ভ্রমণ প্রস্তুতি
৩ অক্টোবর ২০১৯ ১০:২০
বিদেশ ভ্রমণ- মধ্যবিত্ত পরিবাগুলোর জন্য একটি বিলাসী শখ। সারাবছর একটু একটু করে আলাদা করে সঞ্চয় করি বিদেশ ভ্রমণের এই শখটি পূরণের জন্য। এভাবে বছরে একবারই মাত্র বিদেশ ভ্রমণ সম্ভব হয়। বাৎসরিক বিদেশ ভ্রমণের ধারাবাহিকতায় আমাদের এবারের ট্যুর ছিল- ইন্দোনেশিয়ার বালি এবং জাকার্তা।
জাকার্তা ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী। আর বালি ইন্দেনেশিয়ার একটি দ্বীপ এবং প্রদেশ। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া হয়ে প্রথমে বালি এবং পরে জাকার্তা। বালিতে ৫ দিন এবং জাকার্তায় ৩ দিন মিলিয়ে মোট ৮ দিনের ট্যুর। বিস্তারিত ভ্রমণ বৃত্তান্তে যাওয়ার আগে জরুরী কিছু কথা বলে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি। আজ প্রথম পর্বে তাই থাকছে টিকিট, ভিসা, হোটেল এবং ট্যুর এজেন্ট বিষয়ক কথাবার্তা।
ট্যুর এজেন্ট
যেকোন জায়গায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই আপনাকে যে দ্বিতীয় যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেটি হল নিজেরাই যাবেন নাকি ট্যুর এজেন্টের মাধ্যমে যাবেন। যদি কাঙ্খিত দেশটিতে আপনি পরিবারসহ এবং প্রথমবার যাচ্ছেন তবে এজেন্টের মাধ্যমে যাওয়াই ভালো। তারা আপনার বাজেট অনুযায়ী এয়ার টিকিট, ভিসা, হোটেল, ঘুরে বেড়ানোর জন্য ট্যুর গাইডসহ গাড়ির ব্যবস্থা করবে। সেক্ষেত্রে আপনার সময় এবং কষ্ট দুটোই কমবে। তবে খরচ যে কিছুটা বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।
এয়ার টিকেট
এয়ার টিকেট কেনার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবসময় মাথায় রাখতে হয় তা হলো ট্যুরের নির্ধারিত তারিখ থেকে অন্তত দুই মাস আগে টিকেট করলে টিকিটের দাম অনেকটাই কমে যায়।
তাছাড়া এয়ারওয়েজের ভিন্নতায় টিকিটের দামেরও পার্থক্য হয়। সাধারণত বাজেট এয়ারলাইনসগুলোতে টিকেটের দাম কম কিন্তু সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা ইস্যুতে কিছুটা ভয় থেকেই যায়। অনেক সময় এয়ারওয়েজ গুলো ডিসকাউন্ট অফার দেয়। আগেভাগে ভ্রমণের প্ল্যান থাকলে সেগুলো নজরে রাখার চেষ্টা করবেন। আমরা সাধারণত তাই করি।
ভিসা প্রসেসিং
ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া একেক দেশে একেক রকম হয়। বেশির ভাগ দেশে আগে থেকে ভিসা নিতে হয় আবার কোন কোন দেশে আগে থেকে ভিসা লাগেনা অর্থাৎ অন এরাইভ্যাল ভিসা এবং ভিসা এক্সেমশন সিস্টেম। এই দুই ক্ষেত্রেই ঐ দেশের এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনে যেয়ে ভিসা নিতে হয়। ভিসা অন অ্যারাইভ্যাল এবং ভিসা এক্সটেনশন, দুটো ভিন্ন বিষয়।
ভিসা অন অ্যারাইভ্যালের ক্ষেত্রে আপনাকে একটি আবেদন ফর্ম পূরণ করে ভিসা ফি ও ছবিসহ অন্যান্য আরও কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আর ভিসা এক্সেটেনশনের বেলায় শুধুমাত্র হোটেল বুকিংয়ের ডকুমেন্টস, রিটার্ন এয়ার টিকিটের আইটিনারি প্রিন্ট কপি ইমিগ্রেশনে দেখাতে হবে। তবে এক্সটেনশনে সাধারণত ৩০ দিনের ভিসা দেওয়া হয়। আপনি পরে আর এর চেয়ে বেশি সময় বাড়াতে পারবেন না। বালিতে ভিসা এক্সটেনশন সিস্টেম।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট দেশের জন্য দূতাবাস প্রদত্ত ভিসার আবেদনপত্র সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিতে হয়। ভিসা অফিসারের কাছে ইন্টারভিউ দিতে হয়। ভিসার ক্ষেত্রে পাসপোর্টের অবশিষ্ট মেয়াদ এবং পাতার সংখ্যাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। সাধারণত কোন দেশে ভিসা আবেদন করতে হলে পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাসের বেশি থাকতে হয়।
প্রায় সব দেশের ক্ষেত্রে ভিসার জন্য যেসব সাধারণ কাগজপত্র দেখাতে হয়, সেগুলো হলো:
- আবেদনকারীর নতুন ও পুরনো পাসপোর্ট (আমরা সাধারণত একসঙ্গে স্ট্যাপলার করে রাখি। অনেক ক্ষেত্রে দুটোই দেখতে চায়)
- সঠিকভাবে পূরণ করা ভিসার আবেদনপত্র
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি (দেশ ভেদে বিভিন্ন সাইজের)
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- ভ্রমণের খরচ বহনের প্রমাণস্বরূপ নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলারের ব্যাংক এনডোর্সমেন্ট
- ভিসা আবেদনের জন্য দেশ ভেদে একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। যেমন, আমেরিকার জন্য দিতে হয় প্রায় ১৩,৫০০ টাকার মতো। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়শিয়ার জন্য দিতে হয় আনুমানিক ৪থেকে ৬ হাজার টাকার মতো।
- আবেদনকারীর কর্মস্থলের অনাপত্তিপত্র বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট
- রিটার্ন এয়ার টিকেট ইত্যাদি।
ইন্দোনেশিয়ার ইমিগ্রেশন থেকে দেওয়া আমার পাসপোর্টে ভিসা এক্সটেনশন সিল। ভিসা অন অ্যারাইভ্যাল নয়।
হোটেল
আজকাল হোটেল বুকিংয়ের কাজটি অনলাইনেই করা যায়। এজন্য ট্যুর এজেন্টের সাহায্য না নিলেও চলে। আপনি দেখে শুনে যাচাই বাছাই করে আপনার বাজেট অনুযায়ী যে কোন দেশের যে কোন জায়গার হোটেল বুকিং করতে পারেন ঘরে বসেই। এখন মোটামুটি মান থেকে শুরু করে প্রায় সব হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে। আলাদা আলাদা সুবিধা সমন্বিত কয়টি রুম ফাঁকা আছে বা কবে ফাঁকা হবে তা রুমের সাথে ইনক্লুডেড থাকে। ছবি দেখে, সুযোগ-সুবিধা বুঝে, ভাড়া অনুযায়ী সহজে বুক করা যায় হোটেল রুম। ইচ্ছে করলে আগাম মূল্য পরিশোধ করতে পারেন বা হোটেলে গিয়েও দিতে পারবেন।
হোটেল বুকিং এর কিছু ওয়েবসাইটের নাম: এক্সপিডিয়া, অ্যাগোডা, বুকিং ডটকম ইত্যাদি।
আগামী পর্বগুলো থেকে থাকছে ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের বিস্তারিত।