পূজায় নিরামিষের ছয় পদ
৫ অক্টোবর ২০১৯ ১০:০০
গিয়েছিলাম পরিচালক দীপঙ্কর দীপনের বাড়ি। কিন্তু সিনেমা বা পরিচালকের সাক্ষাৎকার সম্পর্কিত কোনো কাজে নয়। নানাজনের কাছে শুনেছি দীপনপত্নী সংযুক্তা সেনগুপ্ত মিশুর হাতের রান্নার সুনাম। মিশুর হাতের নিরামিষ পদ একবার যে খেয়েছে সে প্রশংসা করবেই।
কে না জানে পূজার ভোগ মানেই নিরামিষ রান্না। আর নিরামিষ মানেই পেঁয়াজ-রসুনের গন্ধও নাই। এদিকে পেঁয়াজের বাজারে নাকি আগুন লেগেছে! রান্না সুস্বাদু করতে কি দরকার পেঁয়াজের? পূজার সময়ে কী সারাবছর চাইলেই রাঁধতে পারবেন পেঁয়াজ ছাড়া মুখরোচক সব খাবার।
মিশুও তাই দূর্গা পূজায় ভোগের খিচুড়ি আর লাবড়া থেকে বেরিয়ে অষ্টমি অথবা নবমীর দিনের ভোগ রান্নার জন্য ভিন্ন স্বাদের কয়েকটি নিরামিষ পদের রেসিপি দিলেন আমাদের। মিশু জানালেন, কিছু রান্না তার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে শিখেছেন, কিছু কোথাও খেয়ে নিজের আইডিয়া যোগ করে করেছেন। যেভাবেই করুন না কেন, আমি আর ফটো সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মামুন এরিন মজার সেসব খাবারের ছবি তুলে, অপূর্ব রান্নার স্বাদ নিয়ে আনন্দিত মনে ফিরে এলাম সারাবাংলার অফিসে।
আসুন দেখে নেই দুর্গা পূজার ছয়টি নিরামিষ পদের রেসিপি।
ভোগের সাদা খিচুড়ি
উপকরণ
- গোবিন্দভোগ চাল ১ কেজি
- সোনামুগ ডাল ১/২ কেজি
- কাঁচা মুগ ডাল ১/২ কেজি
- গোটা গোলমরিচ ১৫-২০ টা
- গোটা জিরা ১ টেবিল চামচ
- লবঙ্গ ৫-৬টা
- এলাচ ৭-৮ টা
- দারচিনি ২-৩ টুকরো
- তেজপাতা ২-৩ টা
- ঘি ১/২ কাপ
- তেল ১/২ কাপ
- কিশমিশ ২৫-৩০টা
- কিছু আমন্ড বাদাম কুচি
- আদা বাটা ২ টেবিল চামচ
- শুকনা মরিচ ৩ টা
- কাঁচা মরিচ পছন্দমতো (কিছু কেটে, কিছু আস্ত)
- লবন ও চিনি আন্দাজমতো
পদ্ধতি
- বড় সসপ্যানে তেল ঘি এক সঙ্গে গরম করে তাতে গোটা গোলমরিচ, লবঙ্গ, এলাচ, দারচিনি, তেজপাতা, শুকনা মরিচ দিয়ে হালকা নেড়ে নিয়ে গোবিন্দভোগ চাল, সোনামুগ ডাল, কাঁচা মুগ ডাল দিয়ে ভালো করে তিন থেকে চার মিনিট ভেজে নিতে হবে।
- এরপর আদা বাটা, লবণ ও চিনি আন্দাজমতো দিয়ে আরও তিন মিনিট ভেজে গরম পানি দিয়ে দিতে হবে পরিমাণমতো।
- ফুটে উঠলে তার মধ্যে কিশমিশ, আমন্ড বাদাম কুচি, কাঁচা মরিচ ও ২ টেবিল চামচ ঘি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। চুলার আঁচ কমিয়ে ঝরঝরা করে নামিয়ে নিতে হবে।
পটলের মুড়িঘণ্ট বা চাল-পটল
উপকরণ
- পটল ১০-১২ টি
- পোলাও এর চাল ২মুঠ
- এলাচ ৫-৬ টা
- দারচিনি ২-৩ টুকরা
- তেজপাতা ১ টা
- আদা বাটা ১ টেবিল চামচ
- গোটা জিরা ১ চা চামচ
- কিসমিস ১৫-২০ টা
- শাহী জিরা গুড়া ১ টেবিল চামচ
- হলুদ ও মরিচ গুড়া সামান্য
- তেল ১ কাপ
- কাঁচা মরিচ পছন্দমতো (কিছু কেটে, কিছু আস্ত)
- লবণ ও চিনি আন্দাজমতো
পদ্ধতি
- পটল লবন দিয়ে মেখে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে নিন।
- তারপর গরম তেলে পোলাও এর চাল, এলাচ, দারচিনি, তেজপাতা, আদা বাটা, গোটা জিরা, কিসমিস দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিয়ে তাতে অল্প জল দিন।
- শাহী জিরা গুড়া, হলুদ ও মরিচ গুড়া দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে আরও জল দিন।
- চাল ফুটে উঠলে পটলগুলো দিয়ে জল শুকিয়ে তেল উঠলে নামিয়ে নিন।
আলু -ফুলকপি ও বড়ার রান্না
উপকরণ
- আলু ২ টা
- ফুলকপি ১ টা
- খেসারী ডাল ১ কাপ সারারাত ভিজিয়ে বেটে নিতে হবে
- এলাচ ৫-৬ টা
- দারচিনি ২-৩ টুকরা
- তেজপাতা ১টা
- আদাবাটা ১ টেবিল চামচ
- গোটা জিরা ১ চা চামচ
- জিরা গুড়া ২ টেবিল চামচ
- গরম মশলা গুড়া ১ টেবিল চামচ
- হলুদ ও মরিচ গুড়া
- তেল ১ কাপ
- কাঁচা মরিচ ইচ্ছানুযায়ী (কিছু কেটে, কিছু আস্ত)
- লবণ ও চিনি আন্দাজমতো
পদ্ধতি
- ডাল বাটায় অল্প লবণ আর কালোজিরা মিশিয়ে ছোট করে বড়া ভেজে নিতে হবে।
- এরপর একটা পাত্রে তেজপাতা আর জিরা গুড়া ফোড়ন দিয়ে তাতে আলু আর ফুলকপি ভেজে নিয়ে সব মসল্লা দিয়ে কষিয়ে জল দিয়ে দিতে হবে।
- ফুটে উঠলে বড়া দিয়ে ১ টেবিল চামচ ঘি দেয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে নিতে হবে।
বাঁধাকপির কষা
উপকরণ
- বাঁধাকপি ছবির মতো করে কেটে কাঠি বা টুথপিক দিয়ে আটকে নিন
- হাফ কাপ আটা
- ডালের বেসন ৩ টেবিল চামচ
- এলাচ ৫-৬ টা
- দারচিনি ২-৩ টুকরা
- তেজপাতা ১টা
- আদা বাটা ১ টেবিল চামচ
- গোটা জিরা ১ চা চামচ
- জিরা বাটা ১ টেবিল চামচ
- শাহী জিরা বাটা ১ টেবিল চামচ
- চারমগজ বাটা ১ টেবিল চামচ
- জায়ফল বাটা ১/২ চা চামচ
- হলুদ ও মরিচ গুড়া সামান্য।
- টক দই ১/২ কাপ
- তেল ১ কাপ
- ঘি ২ টেবিল চামচ
- কাঁচা মরিচ ইচ্ছামতো (কিছু কেটে, কিছু আস্ত)
- লবণ ও চিনি আন্দাজমতো
পদ্ধতি
- আটা আর বেসন একটু লবন দিয়ে জলে ঘন করে বেটার করে নিন।
- এর মধ্যে বাঁধাকপি দিয়ে ভালো করে কোট করে ডুবো তেলে ভেঁজে নিন।
- তেল পরিমাপ করে দিয়ে তাতে তেজপাতা, গোটা জিরা ফোড়ন দিয়ে সব ধরনের বাটা ও গোটা মসলা কষিয়ে তাতে ফেটানো টক দই দিন।
- ভালো মতো কষিয়ে তেল উপরে উঠে আসলে তাতে পরিমানমত জল দিন।
- জল ফুটে আসলে ভাজা বাঁধাকপি দিয়ে কষিয়ে ঘি দিয়ে নামিয়ে নিন।
সয়াবিনের মালাইকারী
উপকরণ
- সয়াবিন ২ কাপ
- এলাচ ৫-৬ টা
- দারচিনি ২-৩ টুকরা
- তেজপাতা ১টা
- আদাবাটা ১ টেবিল চামচ
- গোটা জিরা ১ চা চামচ
- জিরা বাটা ১ টেবিল চামচ
- শাহী জিরা বাটা ১ টেবিল চামচ
- আমন্ড বাদাম বাটা ৩ টেবিল চামচ
- কাজু বাদাম ২ টেবিল চামচ
- কিসমিস বাটা ২ টেবিল চামচ
- টক দই ১/২ কাপ
- কেশর বা জাফরান ভেজানো দুধ ১ মগ
- তেল ১ কাপ
- ঘি ২ টেবিল চামচ
- কাঁচা মরিচ ইচ্ছামতো (কিছু কেটে, কিছু আস্ত)
- লবণ ও চিনি আন্দাজমতো
পদ্ধতি
- সয়াবিন সেদ্ধ করে ধুয়ে নিয়ে লবণ দিয়ে মেখে অল্প তেলে হালকা করে ভেজে নিতে হবে।
- একটি সসপ্যানে তেল দিয়ে তেজপাতা, গোটা জিরা ফোড়ন দিয়ে সব বাটা মসলা দিয়ে কষিয়ে নিয়ে টকদই ও গোটা মশলা দিয়ে দিন।
- মশলা তেলে উঠে আসলে সয়াবিন দিয়ে নাড়াচাড়া করে, কেশর ভিজানো দুধ ১ মগ ও ২ টেবিলচামচ চিনি দিয়ে ফুটে আসলে ঘি দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।
লুচির পায়েস
উপকরণ
- ময়দা
- তেল ও ঘি
- দুধ ১ কেজি
- কনডেন্সড মিল্ক ১ কাপ
- কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, কিসমিস, খোয়া
- চিনি আন্দাজমতো (চাইলে নাও দিতে পারেন)
পদ্ধতি
- যেভাবে সাধারন লুচি ময়ান দিতে হয় সেভাবে ময়ান দিয়ে খুব ছোট করে লুচি বানিয়ে মত ঘিয়ে ভেজে নিন।
- প্যানে দুধ ফুটিয়ে বলক উঠিয়ে তাতে ১ কাপ কনডেন্সড মিল্ক, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, কিসমিস দিয়ে ফুটতে দিন। আরও মিষ্টি করতে চাইলে চিনি দিন।
- ফুটানো দুধের মিশ্রণ কিছুটা ঠান্ডা করে তাতে লুচি গুলো ভিজিয়ে দিন। খোয়া ক্ষীর দিয়ে নামিয়ে নিন। কুচনো বাদাম আর খোয়া ক্ষীর দিয়ে পরিবেশন করুন।
ছবি – আবপদুল্লাহ আল মামুন এরিন