স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতা ও স্ক্রিনিংয়ে গুরুত্বারোপ
১০ অক্টোবর ২০১৯ ২১:৪৫
বাংলাদেশে স্তন ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যুঝুঁকি রোধে সচেতনতা ও স্ক্রিনিং কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব আরোপের কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে শুধু শহরাঞ্চলে বা শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে স্তন ক্যানসারের স্ক্রিনিং কার্যক্রম হওয়া উচিত সমাজভিত্তিক, সুপরিকল্পিত ও টেকসই।
স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনার বিষয় ছিলো, ‘স্তন ক্যাসার সচেতনতা ও স্ক্রিনিং, কেন চাই? কিভাবে চাই?’
স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে সারাবিশ্বে অক্টোবর মাসজুড়ে ‘ব্রেস্ট ক্যানসার অ্যাওয়ারনেস মান্থ’ বা স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বেসরকারিভাবে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের ব্যানারে ১২টি স্বেচ্ছাসেবী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং ৬৮টি রোটারি ক্লাবের মোর্চা যৌথভাবে সপ্তমবারের মতো সারাদেশে এই দিবসটি পালন করে।
এই দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া। প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী, অধ্যাপক মোজাহেরুল হক, অধ্যাপক সাবেরা খাতুন, অধ্যাপক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিভিন্ন সংগঠক, ক্যানসার সারভাইভারসহ আরও অনেকে।
সূচনা বক্তব্য রাখেন ও সঞ্চালনা করেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যানসার ইপিডেমিওলোজি বিভাগের প্রধান ও বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। তিনি বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধির পাশপাশি তারা এবার স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কার্যক্রমে সবাইকে উৎসাহিত করার ওপর জোর দিচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে, সঠিক ও পূর্ণ চিকিতসায় ৯০ শতাংশের ওপর স্তন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব।
গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজিস্ট অধ্যাপক সাবেরা খাতুন বলেন, আগেভাগে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে স্তন ক্যানসার ধরা পড়লে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। তিনি বলেন, বেসরকারি কার্যক্রমই যথেষ্ট নয়, সচেতনতা তৈরিতে সরকারিভাবেও উদ্যোগ নিতে হবে।
অপরাজিতা সোসাইটি এগেইনস্টের একজন প্রতিষ্ঠাতা ক্যানসার সারভাইভার তাহমিনা গাফফার বলেন, নানারকম দ্বিধায় ভুগে নারীরা নিজেদের শরীর পরীক্ষা করেন না বা জানেন না কীভাবে পরীক্ষা করতে হবে। এতে স্তন ক্যানসার এমন সময়ে ধরা পড়ে যখন চিকিৎসাতেও আর ভালো হয় না। তিনি বলেন, স্তন ক্যানসারে মৃত্যু হার কমাতে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।
আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে কর্মরত সার্জন ডা. নাফিসা বলেন, সমাজের শিক্ষিত বা সচেতন শ্রেণির নারীরা স্ক্রিনিংয়ের বিষয়ে কিছুটা জানলেও গ্রামে, শ্রমজীবী শ্রেণীতে ও দরিদ্র নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা নাই বললেই চলে। বেসরকারিভাবে চলা সচেতনতার প্রোগ্রামগুলোর পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক সাবেরা খাতুন বলেন, স্তন ক্যানসার নিয়ে নারীদের মধ্যে নানারকম ভীতি বা অস্বস্তি কাজ করে। অনেকেই একে শরীরের গোপন অঙ্গ মনে করে পরীক্ষার সময় পুরুষ চিকিৎসকের সামনে স্বছন্দ বোধ করেন না। এভাবে দ্বিধায় ভুগে বা ট্যাবু বানিয়ে রেখে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব না। তাই তিনি নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও নারী সদস্যদের স্তন পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যপারে সচেতন হতে বলেন।
এর আগে, সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বাংলায় লেখা তথ্যসমৃদ্ধ লিফলেট বিতরণ করা হয়।
উলেক্ষ্য, ২০০৭ সাল থেকেই প্রতিবছর স্তন ক্যানসার সচেতনতা ও স্ক্রিনিং প্রোগাম আয়োজন করে থাকে অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেন্টার ফর ক্যানসার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বা সিসিপিআর।
স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের সময় মতো ক্যানসার শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে ২০১৩ সাল থেকে ‘বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম’য়ের উদ্যোগে প্রতি বছর এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সরকারি, বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও পরবর্তীতে এই উদ্যোগে সাড়া দেয়। ২০১৭ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী গংগঠন রোটারি ইন্টারন্যাশনাল এই উদ্যোগের আয়োজক হিসেবে যুক্ত হয়।