ছোট্ট একটি বাগান, অফুরন্ত মানসিক প্রশান্তির উৎস
২৫ অক্টোবর ২০১৯ ১০:০০
ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি আম্মাকে বাগান করতে। যখন যেখানে থেকেছেন বাগান করেছেন। সেই থেকে আমি ও আমার ভাইবোনদের মধ্যে বাগান করার তাগিদ গেঁথে গেছে। অনেকটা দৈনন্দিন অন্য কাজগুলোর মতোই। বাগান ছাড়া নিজেকে কখনো কল্পনাও করতে পারি না।
আমি মূলত বারান্দা বাগানী। সবজি, ফল চাষের ইচ্ছে হলেও তাই করতে পারি না। গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠায় এবং বারান্দায় রোদ কম পাওয়ায় গত দুবছর ধরে কিছু গাছ ছাদে রেখেছি। ছাদে গাছ রাখা নিয়ে খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গাছগুলো নামিয়ে ফেলার জন্য বাড়ির মালিক কয়েকবার নোটিশ দিয়েছে। গাছ রাখলে নাকি মশা হয়, অন্য ভাড়াটেদের সমস্যা হয়- আরো কতো কি! এ ধরনের কথা শুনে খুব বিব্রতবোধ করি, মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমার সন্তানতুল্য ভালোবাসার গাছ এরা। মালিককে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি যে, গাছের কারনে কোন ক্ষতি হয় না, বরং পরিবেশ ভালো থাকে।
শিশুকে যেমন যত্নে লালন পালন করে বড় করতে হয়, ঠিক তেমনি গাছেরও কিছু যত্ন লাগে। আমার বাগানে গোলাপ, জবা, এডেনিয়াম বেশি। সেই সাথে আছে সিলভারসেজ, চন্দ্রপ্রভা, নীলচিতা, ডাকুর, ব্লু ডেজ, গন্ধরাজ, হাসনেহেনা, বেলী,অপরাজিতা,রঙ্গন,পাউডার পাফ, ক্ল্যামেটিস, বিভিন্ন রঙের কাঁটামুকট, নীলকন্ঠ, হাইড্রেঞ্জিয়া, গোল্ডেন গার্ডেনিয়া, লতা পারুল, ব্লিডিং হার্ট, এঞ্জেল ট্রাম্পেট, কলাবতী, গ্রাউন্ড অর্কিড, টগর, রোজ ক্যাকটাস, ফুরুস, মধুমঞ্জরি, করবী, ক্রসেন্ডা, সোর্ড লিলি, বিভিন্ন রঙের রেইন লিলি, কামেনী, দোপাটি, সন্ধ্যামালতী, নিম গাছ, অ্যালোভেরা, তুলসি, বিভিন্ন রঙের টাইম ফুল আর পরতুলিকা। এছাড়াও আছে বিভিন্ন ডিজাইনের পাতাবাহার, কিছু ক্যাকটাস আর অর্কিড।
গাছ ভেদে যত্নও আলাদাভাবে নিতে হয়। কোনটাতে পানি কম, আবার কোনটাতে পানি বেশি দিতে হয়। দু’মাস অন্তর সব টবে জৈব সার দেই আমি। জৈব সার নিজেই তৈরি করি। নানা ধরনের সবজির খোসা, বারান্দার কর্নারে রাখা বালতিতে জমিয়ে পঁচিয়ে ব্যবহার করি। এছাড়াও পাকা কলার খোসা, ডিমের খোসা, উচ্ছিষ্ট চা পাতা শুকিয়ে সার হিসাবে ব্যবহার করি। আমার গোলাপ গাছ বেশি। গোলাপ গাছের যত্নও নিতে হয় বিশেষভাবে। মাসে একবার সব গাছে ছত্রাক নাশক ওষুধ পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করি।
বাগানের প্রতিটি গাছই আমার প্রিয় এবং ভালোবাসার। নতুন নতুন ফুল ফুটতে দেখা যেমন আনন্দের ঠিক তেমনি নতুন একটি পাতা গজাতে দেখলেও মন ভালো হয়ে যায়। যখন দেখি কেউ বাগান করছে তখন খুব আনন্দ হয়। বিভিন্ন সময় গাছ উপহার দিয়েও মানুষকে বাগানের প্রতি উৎসাহিত করি। ছোট্ট একটি বাগান অফুরন্ত মানসিক প্রশান্তি দিতে পারে। তাই বাগান করুন, মন প্রফুল্ল রাখুন।