প্রেমে… হাতে হাত রেখে মহাকালের পথে…
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১১:৫০
শারমিন শামস্ ।।
‘‘আমাদের কখনো ঝগড়া হয়না। সারাদিন দুজন এত ব্যস্ত থাকি কাজে! দেখাই তো হয় সেই রাতে। ঝগড়া করবো কখন?’’
হাসতে হাসতে কথাগুলো বললেন তিনি। সঙ্গিনীও মাথা নেড়ে সায় দিলেন।
‘‘এভাবেই তিপ্পান্ন বছর কেটে গেল, একসাথে’’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজ ঘাসে ঢাকা চত্বরে বিকেলের বসন্ত বাতাস। সুপরিচিত জনপ্রিয় শিল্পী জুটি হাসান ইমাম আর লায়লা হাসানের সাথে হাঁটছিলাম। লায়লা হাসানের পরনে হালকা গোলাপি জমিনে ঘন কারুকাজের জামদানি শাড়ি। মুখখানা গোলাপি আভায় মাখা। হাসান ইমাম পরেছেন সাদা পাজামা পাঞ্জাবী, কাঁধে আলতো ফেলে রাখা কালো শাল। দুজনের মুখেই সেই চিরচেনা মিষ্টি হাসি। পুরো চত্বর জুড়ে ঝলমলে আভিজাত্য ছড়িয়ে পড়েছে। তারুণ্য তো একেই বলে- সময়ের ফ্রেমে যাকে ধরা যায় না।
ভালোবাসা দিবসে কে হবেন সারাবাংলার প্রধান আকর্ষণ। মনে মনে ভাবছিলাম। হঠাৎ মনে পরলো হাসান ইমাম আর লায়লা হাসান জুটির কথা। আর দ্বিতীয় কোন ভাবনাই আসেনি মাথায়।
দেশে বিদেশে শুটিং আর নানা ব্যস্ততার ভিতরেও তাদের দুজনকে একসাথে আমাদের ক্যামেরার সামনে আনার চেষ্টা সফল করতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। দুজনের আন্তরিকতা, সময়জ্ঞান, স্মৃতিশক্তি আর কমিটমেন্ট রক্ষার পরিচয়ও পেলাম। অনুধাবন করতে পারি, এত বছর ধরে সুনাম অক্ষুন্ন রেখে এখনো কীভাবে তারা সকলের কাছে এতটা জনপ্রিয়, শ্রদ্ধেয় আর আদরনীয় হয়ে আছেন।
নির্দিষ্ট দিনে ক্যামেরার সামনে হাসিখুশি এই মিষ্টি দম্পতিকে পেলাম। সারাদিনের ব্যস্ততার ক্লান্তির পরও মুখের হাসি ম্লান হয়নি এতটুকু। বললাম, ভালবাসা দিবসের ফটোশ্যুট কিন্তু, রোমান্টিক মুড চাই।
‘‘ উহু… তা আর পারবো না এই বয়সে এসে…ও তো করবে তোমরা। তারচেয়ে আমরা বরং সংসারের জরুরি আলাপগুলো সেরে নিই এই ফাঁকে, বাড়িতে তো কথা বলার সময়ই পাই না। আর তোমরা এই ফাঁকে তুলে ফেলো ছবি।”
তারপর শেষ বিকেলের আলোর সামনে হাত ধরে হেঁটে গেলেন কখনো, কখনো এসে দাঁড়ালেন গাছের ছায়ায়। টুকটুক কথা বললেন দু’জনে। আর ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক একের পর এক। বসন্ত বাতাস বইছিল মৃদু।
দু’দণ্ড বিশ্রামের ফাঁকে আবার দু’একটা কথা।
‘‘আমাদের যৌথ জীবনের এতগুলো বছর- বিয়ে, সংসার, সন্তান, নিজেদের কাজ- সবই একসাথে করেছি। এমনকি বেড়িয়েছিও একসাথে। কখনো একজন আরেকজনকে ছাড়া কোথাও যাইনি, এখনো যাইনা।’’
বলছিলেন হাসান ইমাম, হাসছিলেন লায়লা হাসান। মুখখানা ঠিক কিশোরী মেয়ের মত রাঙা, লাজুক হাসিতে মাখা।
একটু একটু করে কথা পাড়ি। এত দীর্ঘ পথ একসাথে পাড়ি দিলেন। ছেলেমেয়েকে সুন্দর করে বড় করলেন। নিজেদের কাজের পরিধি শিল্পসংস্কৃতির অঙ্গন ছাড়িয়ে সামাজিক রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দিলেন। এত এতগুলো বছর একসাথে একই পথে আছেন- কীভাবে এত সুন্দর করে সব গুছিয়ে নিলেন?
এবার উত্তর দিলেন লায়লা হাসান- ‘‘নিজের কাজ আর সংসারের মধ্যে সুন্দর সমন্বয় করে নিয়েছি। আর ওনাকে (হাসান ইমাম) সবসময় পাশে পেয়েছি নিজের সব কাজে, বন্ধুর মত’’।
‘‘হুম’’- সায় দিলেন হাসান ইমাম।
তখন সন্ধ্যা হয় হয়। একটা কফিশপে বসে গরম কফির ঘ্রাণ নিতে নিতে আমরা তাদের গল্প শুনি। সামনে কী কী কাজ করবেন, সেই গল্প। কার কোন নাটকের শুটিং চলছে, সেই গল্প। ফেলে আসা দিনগুলোর গল্প, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি আর বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি কাটানো অমূল্য সময়ের গল্প- বলে চলেছেন হাসান ইমাম, মাঝেমধ্যে তাতে রসদ যোগাচ্ছেন লায়লা হাসান, ভুলে গেলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন। মৃদুভাষিনী তিনি, মুখে সবসময় মিষ্টি নরম হাসি।
কথার ফাঁকে ফাঁকে তারা একটু তাকাচ্ছেন পরস্পরের দিকে। ভুলে যাওয়া গল্প সব মনে পড়ে যাচ্ছে সেই দৃষ্টি বিনিময়েই। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা ছাপিয়ে রাত নামবার এই ক্ষণে- এই চিরতরুণ জুটির ছোট ছোট স্মৃতি আর খুনসুঁটির কাহিনী ভাণ্ডার- আমরা মুগ্ধ শ্রোতা। মুগ্ধ চোখে চেয়েও রই। আহা! ভালোবাসা ভালোবাসা- সে কি কেবলি যাতনাময়?
উহু…ভালোবাসা তো আলোয় আলোয় রাঙা। প্রেম- সে তো তাই যা আমাদের এমন উজ্জ্বল ঝলমলে বাজপাখির মত টানটান সজীব রাখে! ভালোবাসার আলো পড়ে কোমল রঙীন হয়ে ওঠে আমাদের মুখ, ঝিলিক দিয়ে ওঠে চোখের তারা!
লায়লা হাসান আর হাসান ইমাম দম্পতির যুগল ছবিগুলোতে চোখ বুলাই আর লিখি। আর ভাবি, আমাদের যাপন আর উদযাপনের এই ব্যস্ত সময়ে ভালোবাসাবাসির এই ঝিলিমিলি আনন্দ আমাদের বাঁচতে শেখাক, প্রেম শেখাক, জীবন শেখাক- যেন বহু বহু কাল এভাবেই হাত ধরে পেরিয়ে যেতে পারি মহাকালের পথ!
ছবি: নূর
সারাবাংলা/এসএস/আরএফ