নারীর বন্ধ্যাত্ব: পিসিওএস এবং অন্যান্য
২১ নভেম্বর ২০১৯ ১০:৩০
আগের লেখায় বলেছিলাম ছেলেদের কি কি সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। আজ থাকছে নারীর বন্ধ্যাত্ব নিয়ে কিছু কথা।
মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের নানা কারণ-
১) অনিয়মিত পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব অথবা একদম পিরিয়ড না হওয়া।
২) PCOS (পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম) থাকলে সন্তান ধারণে সমস্যা দেখে দেয়। বন্ধ্যাত্বের সমস্যা নিয়ে যত নারী রোগী চিকিৎসকের কাছে আসেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী যে সমস্যা নিয়ে আসেন, সেটা হল PCOS. এটি নারীর শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা জনিত রোগ। পিসিওএস এর লক্ষণগুলো হল-
- ওভারি বা ডিম্বাশয়ে সিস্ট (Cyst)। বেলুনের মধ্যে পানি দিলে যেমন দেখায়, ওভারিতে সিস্টও তেমন। তবে পিসিওএস এ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে পানি না থেকে হরমোন থাকে।
- এই রোগে LH বা লুটেনাইজিং হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এবং অ্যান্ড্রোজেন (Androgen) অর্থাৎ যাকে আমরা পুরুষ হরমোন বলি, সেটিও বেড়ে যায়। হরমোনের এই তারতম্যের কারণে Ovulaton (ডিম্বাশয় থেকে ডিম বের হওয়া) হয় না, ফলে মাসিক অনিয়মিত হয়ে যায়।
- এন্ড্রোজেন হরমোন বাড়ার কারণে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ও মুখে পশম দেখা দিতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
- ব্রণের প্রকোপ বাড়তে পারে। গলা, পেট, পায়ের ভাঁজে কালো দাগ দেখা দিতে পারে।
উপরের এই লক্ষণগুলোর সঙ্গে যদি আলট্রাসনোতে সিস্ট ধরা পড়ে তবে সেটা পিসিওএস (POCS). এই অবস্থায় দেরী না করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে। আনন্দের সংবাদ হল, পিসিওএস-এর কারণে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিলে, সঠিক চিকিৎসায় অধিকাংশ (অন্তত ৮০ শতাংশ) নারীই গর্ভধারণে সক্ষম হন।
তাই পিসিওএস হলেই হতাশ হবার কারণ নেই। একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এটা অনেকটাই জেনেটিক বা বংশগত রোগ। এই রোগ পুরোপুরি নিরাময় হয় না। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এজন্য সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর নিজেরও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। সেগুলো হল-
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- খাদ্যাভাস পরিবর্তন- শর্করা জাতীয় খাবার (ভাত,রুটি) কমাতে হবে ও শাক-সবজি, ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে।
- দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে।
- নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো এবং পর্যাপ্ত পরিমানে (দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘন্টা) ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে।
- নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম- হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম ইত্যাদি করতে হবে।
বন্ধ্যাত্ব: নারী একাই দায়ী নয়
৩) জরায়ুর টিউমার (endometrial & sub mucosal fibroid) দেখা দিলে নারীর গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪) জরায়ু এবং জরায়ুমুখে পলিপ (Polyp) বা মাংস পিন্ড বেড়ে গেলে (endometrial or cervical polyp)।
৫) ডিম্বনালী বা Fallopian Tube যদি কোন কারণে block হয়ে যায়।
৬) Endometriosis, adenomyosis নামের জরায়ুর রোগ হলে। এছাড়া, ডিম্বাশয়ে Chocolate Cyst হলে।
৭) Premature Ovarian Insufficiency/Early Menopause. বয়স ৪০ হবার আগেই যদি মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।
৮) থাইরয়েডের সমস্যাতেও বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। অনিয়মিত মাসিক এবং ইনফার্টিলিটির প্রধান দুই কারণের মধ্যে একটি পিসিওএস এবং অন্যটি Hypothyroidism. বন্ধ্যাত্বের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের অনেকেরই হাইপোথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism) থাকে।
৯) আরও কিছু হরমোনজনিত কারণের মধ্যে রয়েছে, Prolactin এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া।
১০) অন্যান্য: মেয়েদের আরও কিছু ফ্যাক্টর আছে যার কারণে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।
- বয়স: ৩০ বছর বয়সের পরে মেয়েদের সন্তান ধারণক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে।
- Obesity(স্থূলতা)/Under weight. দৈহিক আকৃতি, উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী বেশি বা কম ওজনের জন্যও অনেক নারীর গর্ভধারনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ওজনজনিত কারণে বন্ধ্যাত্ব এখন একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- ডায়াবেটিস, হাইপ্রেশার ইত্যাদি রোগ থাকা।
- ধূমপান, মদ্যপান।
- শারীরিক পরিশ্রম না করা কিংবা অতিরিক্ত ব্যায়াম (intense strenous excercise)।
- পেটের কোন অপারেশন হয়ে থাকলে Pelvic Adhesion থাকতে পারে।
- ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট নিয়েছেন এমন নারীদের ক্ষেত্রে।
- যৌন বাহিত রোগের জন্য।
নারীর বন্ধ্যাত্ব পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম পিসিওএস বন্ধ্যাত্ব