দ্য লাস্ট প্যারাডাইজ অন আর্থ।। শেষ পর্ব: বিদায় বালি
৪ জানুয়ারি ২০২০ ১০:০০
বালিতে শপিং
আমরা শপিংয়ের জন্য কুতা বিচের একদম পাশের ডিসকভারী শপিং মলে গেলাম। এটি কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও মানের দিক থেকে বেশ ভালো। আমরা দুই বান্ধবির কেউই মেকআপ কেনার ব্যপারে আগ্রহী ছিলাম না। আবার আমাদের দেশে তৈরি পোশাকের মান খুবই ভালো এবং তুলনামূলকভাবে দামও অনেক কম। তাই আমরা দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে পোশাক কিনি না তেমন। এসব দিক বিবেচনা করে আমরা শপিংয়ের জন্য ‘ক্যারি ফোর’ কে বেছে নিয়েছিলাম। আন্তর্জাতিক এই চেইন শপটির পণ্যগুলো মানের দিক থেকে বেশ ভালো। আবার দামেও সাশ্রয়ী। তাই এখান থেকেই আমরা বেশিরভাগ কেনাকাটা করেছি।
সেদিনই আমাদের গাইড মি.কাদেখের সঙ্গে শেষ দিন। তিনি আমাদের হোটেলে নামিয়ে দিয়ে বিদায় নিলেন। মি.কাদেখ যথেষ্ট ভদ্র। আমাদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করেছেন। ছেলেমেয়েদের সাথে প্রচুর গল্প করেছেন। শুধু গাইডই নয়, আমাদের ড্রাইভারও বেশ ভদ্র ছিলেন।
বিদায় বালি
পঞ্চম দিনটি ছিল, বালিতে কাটানো আমাদের শেষ দিন। এখান থেকে যাবো জাকার্তা। বাটিক এয়ারলাইনসে আমাদের ফ্লাইট ছিল, দুপুর আড়াইটায়।
ইচ্ছে করলে ফ্লাইটের আগের এ সময়টা ঘোরাঘুরি করে আমরা কাজে লাগাতে পারতাম। কিন্তু হোটেলে শুয়ে বসে বিশ্রাম নেওয়াই ভালো মনে হল। হোটেল থেকে বালি বিমানবন্দর আধা ঘন্টার পথ। পৌঁছাতে তাই খুব একটা সময় লাগল না। আশেপাশে দেখলাম এয়ারপোর্টের পরিধি বাড়াতে সংস্কারকাজ চলছে। একটা জিনিস বলতেই হয়, এখানকার ঘরোয়া বিমানবন্দর আমাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেয়ে শতগুণ ভালো। আসলে আমি যে কয়টা দেশে ঘুরেছি, তাদের মধ্যে আমাদের দেশের বিমানবন্দরই সবচেয়ে খারাপ লেগেছে। বিষয়টা আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়।
কিছু পরামর্শ
বালির তাপমাত্রা সাধারণত ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। এই তাপমাত্রা বুঝে পোশাক নির্বাচন করতে পারেন। তবে প্লেনে বা বিমানবন্দরে এয়ার কন্ডিশনের কারণে বেশ শীত অনুভূত হয়। ওখানে পরার জন্য একটি করে ফুল হাতাবিশিষ্ট পোশাক নিয়ে গেলে ভালো।
বালি বেড়াতে গেলে হাতে বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে যাবেন। অন্তত ১৫ দিন হলে ভালো হয়। বালিতে দেখার মতো অনেক জায়গা রয়েছে। হাতে সময় নিয়ে না গেলে আমাদের মতো আফসোস নিয়ে ফিরতে হবে। কারণ, বালির দর্শনীয় স্থানগুলো বালির উত্তর- দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম সব দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এক দিক থেকে আরেক দিকে মুভ করতে অনেক সময় লাগে। ট্যুরিস্ট সিজনে বালির রাস্তাঘাটে মোটামুটি বেশ ভালো ট্র্যাফিক থাকে। ফলে গাড়িতে বসে থাকতে হয় বেশ লম্বা সময় ধরে।
আমি যেসব জায়গার কথা লিখেছি সেগুলো ছাড়াও যে জায়গাগুলো যেতে পারেন তা হল, নুসা পেনিদা। স্বর্গীয় সুন্দর একটি দ্বীপ। এটি অবশ্য আমার হাজবেন্ডের মতে। তিনি আগে একবার কলিগদের সঙ্গে বালি থেকে ঘুরে এসেছেন। এছড়াও যেতে পারেন, কিউটা বিচ, লোভিনা বিচ, সেমিনাক বিচ ইত্যাদি। গুগলে সার্চ করে আরও কিছু দর্শনীয় স্থানের ব্যপারে খোঁজ নিতে পারেন।
ও হ্যা! গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বলতে ভুলে গেছি। কীভাবে যে ‘হানি মানি’র বিকিকিনির ব্যাপারটা বলতে ভুলে গেলাম!
মানি এক্সচেন্জ
আগেই বলেছি, ইন্দোনেশিয়ায় মুদ্রাস্ফীতির হার বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি। মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে এমন একটি পরিস্থিতি, যেখানে টাকার মূল্য ক্রমাগত হ্রাস পায় আর দ্রব্যের মূল্য ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। যে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেশি সে দেশে অংকের হিসাবে মুদ্রার মানের অবমূল্যায়ন হয়। যেমন, ১ লাখ ইন্দোনেশিয়ান রুপিতে বাংলাদেশী টাকায় হয় ৬০০ এর মতো। আবার ১ ডলারে বাংলাদেশি টাকায় হয় ১৮৫ টাকার মতো। অর্থাৎ ডলারের কাছে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটছে।
সবাই জানেন যে ডলারের মানে সবসময় উথ্থান পতন হতে থাকে। আমরা যে সময় ইন্দোনেশিয়া ছিলাম, সে সময় ১০০ ডলার ভাঙিয়ে ইন্দোনেশিয়ান রুপিতে কখনো ১৩ লাখ ৯ হাজার, কখনও বা ১৪ লাখ ৩ হাজার ইন্দোনেশিয়ান রুপি পেয়েছি। ডলারের রেট উল্লেখিত রেন্জের ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। এর উপরে বা নীচে কখনও যায়নি।
দ্য লাস্ট প্যারাডাইজ অন আর্থ।। ১১তম পর্ব: মাংকি ফরেস্ট
বালিতে মানি এক্সচেন্জের বিষয়ে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ইন্ডিয়া, বাংলাদেশের মতো চোর বাটপার ওখানেও কম নয়।
কখনই আনঅথোরাইজড এক্সচেন্জারদের কাছ থেকে ডলার ভাঙাবেন না। ওরা রেট দেখাবে অনেক বেশি। দেওয়ার সময় দিবে অনেক কম। সাধারণত অথোরাইজড মানি এক্সচেন্জাররা একটু কম রেট দেয় তবে, যে রেট দেখাবে তা-ই দেবে।
বালিতে কীভাবে চিনবেন কোনটি অথরাইজড আর কোনটি আনঅথোরাইজড মানি এক্সচেন্জ?
সাধারণত যে মানি এক্সচেন্জ অফিসের সাথে পার্লার বা স্পা আছে সেগুলো আনঅথরাইজড (গাইড জানাল)! দোকানের সামনে লেখা থাকবে অথোরাইজড কিন্তু বাস্তবে সেগুলো আনঅথোরাইজড।
আরেকটা কথা! ডলারে ভাঁজ পড়লে অনেক মানি এক্সচেন্জাররা ডলার নেয় না। একদম ভাঁজহীন চকচকে ডলারের রেটও কোন কোন এক্সচেন্জাররা বেশি দেয়। তাই ভুলেও ডলার ভাঁজ করবেন না। রাখবেন বড় আর লম্বা আকারের কোন খামের মধ্যে।