Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সড়ক পথে মায়াবী ভূটান (পর্ব-১)


২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৭:০৩

হৃদয় দেবনাথ ।।

মনোরম আর পরিপাটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত কোন শহর দেখলে যে কারোরই মন ভরে যাবে। আপনিও যদি পাহাড় পছন্দ করেন তবে কোনো এক রোদ ঝলমল দিনে হাতে কয়েকদিন সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন মনোরম পাহাড়ের দেশ ভূটানের উদ্দেশ্যে।

যেভাবে যাবেন
ভূটান ভ্রমণের জন্য প্রথমেই আপনার প্রয়োজন হবে ভারতীয় ট্রানজিট ভিসা। এই ভিসা ঢাকার গুলশানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস (চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শাখাতেও পাওয়া যায়) থেকে নিতে পারেন। অন্যদিকে শ্যামলী বাসের টিকেটও অগ্রিমই করে রাখতে হবে। কারণ, এই বাসের টিকেট ট্রানজিট ভিসার কাগজপত্রের সাথে জমা দিতে হয়। ঢাকার আরামবাগ থেকে শ্যামলি পরিবহণের বাস ছাড়ে রাত ৮টায় এবং কল্যাণপুর থেকে রাত ৯টায়।

বাস বুড়িমারী সীমান্তে পৌঁছাতে সময় নেবে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা। তার মানে পৌঁছতে পৌঁছতে পরদিন সকাল ৭-৮টা। বুড়িমারী ইমিগ্রেশন অফিস খোলে সকাল ৯টায়। বাস নয়টার আগে পৌঁছলে কিছু সময়ের জন্য যে কোনো আবাসিক হোটেলে রেস্ট নিতে পারেন চাইলে। এসব হোটেলে জনপ্রতি খরচ পড়বে ২০০ টাকা তবে লোক বেশি হলে কিছু কমও নিতে পারে। বুড়িমারী ইমিগ্রেশন অফিসে কাজ শেষ হতে কিছুটা সময় লাগে। প্রয়োজনে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হতে পারে। ইমিগ্রেশন অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ হলে তারপর পায়ে হেঁটে প্রবেশ করতে হবে ভারতে।

এরপর ভারতীয় ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ডলার বা টাকা রুপিতে এক্সচেঞ্জ করে নিন। ও হ্যাঁ, ডলার এক্সচেঞ্জের রসিদ নিয়ে নিতে ভুলবেন না কিন্তু। পরে দরকার পড়তে পারে আপনার। ইমিগ্রেশন আর ডলার এক্সচেঞ্জের কাজ শেষ হলে চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন অফিসের পাশে অপেক্ষারত শ্যামলী পরিবহণের বাসে উঠতে হবে। তারপর ময়নাগুড়ি নামক জায়গায় নেমে যেকোন একটা লোকাল বাসে উঠলেই সোজা হাসিমারা। এখানে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৫০ রুপি করে। সেখান থেকে অটোতে করে জয়গাও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস (ভুটান সীমান্তের কাছে) যার ভাড়া জনপ্রতি ৭ রুপি করে। এত ঝামেলা না চাইলে, আপনি ট্যাক্সি করে চ্যাংড়াবান্ধা টু জয়গাঁও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস যেতে পারেন। এতে ভাড়া পড়বে ১০০০-১৫০০ রুপির মতো

বিজ্ঞাপন

জয়গাও ইমিগ্রেশন গেট

ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস থেকে ডিপারচার/এক্সিট (সব ঠিক থাকলে সময় তেমন লাগে না) সিল লাগিয়ে সোজা ভূটান। ভূটান ইমিগ্রেশন অফিস ফুন্টশোলিংয়ে অবস্থিত জাস্ট ভূটান গেটের পাশেই। এখান থেকে অন-অ্যারিভ্যাল ভিসা নিতে হবে। তবে এখান থেকে শুধু থিম্পু আর পারো’র অনুমতি পাওয়া যাবে। পুনাখা, হ্যাঁ ভ্যালী, বুমথাং ও অনন্য জায়গার অনুমতি পরে থিম্পু থেকে নিতে হবে আপনাকে।

মনে রাখবেন, ফুন্টশোলিং ইমিগ্রেশন অফিস শুধু বাংলাদেশি আর বিদেশিদের জন্য সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কোনো সরকারি বন্ধ নেই। ভূটানের লোকজন বাংলাদেশিদের খুবই সম্মান করেন। তবে ইমিগ্রেশন অফিসে আমাদেরকে বলেছিলেন, কিছু বাংলাদেশিরা শুধু পাসপোর্টে সিল লাগানোর জন্য অনেক দিনের ভিসা নেয় আর এক-দু’দিন পরই ফিরে আসে। আমাদের মাঝে অনেকের এই আচরণের কথা শুনলে আসলেই ভীষণ খারাপ লাগে। এভাবে করে আমরাই ওদের বিশ্বাস আর সম্মানের জায়গাটা নষ্ট করছি।

পাহাড়ের বুকে ঘরবাড়ি

ফুন্টশোলিং ইমিগ্রেশন অফিস থেকে অন-অ্যারিভ্যাল ভিসা নিয়ে আপনি চার সিটের একটি ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন ১,৮০০ রুপি দিয়ে যা সোজা চলে যায় থিম্পু। তবে মনে রাখবেন, অবশ্যই দর-দাম করে গাড়ি ভাড়া করতে হবে আপনাকে। ড্রাইভার বেছে নিতে পারেন নেপালি অথবা ভুটানি। এদের আচরণ খুব আন্তরিক। তাই পরবর্তীকালে আপনি যে ক’দিন ভূটানে থাকবেন এদের ট্যাক্সিতে করেই ঘুরতে পারবেন। তাছাড়া সারাদিনের জন্যও ওদের গাড়িটি ভাড়া নিতে পারেন চাইলে। সারাদিনের জন্য নিলে খরচ পড়তে পারে আনুমানিক ১১ হাজার রুপি। সুবিধা হচ্ছে এসব ড্রাইভার খুব ভালো ইংরেজি আর হিন্দি দুটোই জানে। তাছাড়া তারা গাইড হিসেবেও খুবই মিশুক ও বন্ধুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

মনে রাখা ভালো ফুন্টশোলিং থেকে থিম্পু কেউ চাইলে বাসেও যেতে পারবেন। শেষ বাস ছেড়ে যায় বিকেল সাড়ে চারটায়। এর ভাড়া ২৪০ রুপি আর সময় লাগবে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। চাইলে আগে থেকেই একটা হোটেলে রুম বুক করে রাখতে পারেন। কারণ, ভুটানে সব দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। তাই হোটেল বা রুম ঠিক না করে রাখলে আর রাতের খাবার সেরে না নিলে পরে বিপদে পড়তে পারেন।

কোথায় থাকবেন 
ভূটানে দামি, কমদামি সব ধরনেরই হোটেল আছে। কিন্তু হোটেলে ওঠার সময় দামাদামি করে উঠতে ভুলবেন না। হোটেল ভাড়া পড়বে ৭০০-৮০০ রুপি থেকে ১৫ হাজার রুপি পর্যন্ত। মোটামুটি মানের হোটেল চাইলে  দিনপ্রতি সর্বনিম্ন ৮০০ রুপি থেকে সর্বোচ্চ ১,৫৪০ রুপি দামের হোটেলে থাকতে পারেন। মোটামুটি সব হোটেলই পর্যটকদের জন্য নিরাপদ।

পরবর্তী পর্বে থাকছে ভুটানে কোথায় কোথায় ঘুরবেন… 


সড়ক পথে মায়াবী ভূটান (শেষ পর্ব)

 

লেখকঃ ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ,সারাবাংলা 

 

সারাবাংলা/আরএফ

ঘোরাঘুরি ভূটান ভ্রমণ সড়কপথে ভূটান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর