রাত পোহালেই সরস্বতী পূজা
২৯ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:২০
সরস্বতী জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী। মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা হয়। সেই অনুযায়ী, আজ রাত পোহালেই মন্দিরে মন্দিরে শুরু হবে সরস্বতী পূজা। বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সনাতন ধর্মালম্বীদের ঘরে ঘরে। শাস্ত্র অনুসারে, সাদা রাজহাঁসে চড়ে বীণা হাতে পৃথিবীতে আসেন দেবী সরস্বতী।
সরস্বতী পূজায় সকালবেলা দেবীর চরণে অঞ্জলি দেয় ভক্তরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। পঞ্জিকা মতে, বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) পঞ্চমী তিথি থাকবে ভোর থেকে সকাল ১১ টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত। তাই এই সময়ের মধ্যেই পূজা ও অঞ্জলি শেষ হবে। শিশুদের বিদ্যাচর্চার সূচনা হিসেবে ‘হাতেখড়ি’ দিতে চাইলেও এই সময়ের মধ্যেই দিতে হবে।
সরস্বতী পূজায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই আরাধনা করেন। তবে তরুণরা এই পূজাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন। বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী সরস্বতী পূজা শিক্ষার্থীদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
অনেকে সরস্বতী পূজা ঘরেই করেন। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমেই বসাতে হয় পঞ্চমীর ঘট। আল্পনা এঁকে ঘট প্রতিস্থাপন করা হয়। ঘটে থাকে জল ও পঞ্চপল্লব। দেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয় ফুল, বেলপাতা, ধুপ, দ্বীপ, ফলমূল ও নিরামিষ ভোগ। পূজা শেষ হলে যজ্ঞ করেন পুরোহিত। দেবীর উদ্দেশ্যে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে পূজার কাজ শেষ হয়।
শাস্ত্র অনুযায়ী, সরস্বতী পূজা সাধারণ পূজার নিয়মানুসারেই হয়। তবে এই পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপাদান রাখতে হয়। অভ্র-আবীর, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শীষ এই পূজার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। পূজা ও দেবীর মালা হিসেবে হলুদ রঙের গাঁদা ফুল লাগে। সরস্বতী পূজায় লক্ষ্মী, নারায়ণ, দোয়াত-কলম, বই এবং বাদ্যযন্ত্রকেও পূজা করার রীতি আছে।
সরস্বতী পূজার রীতিনীতি প্রাচীনকালেও একইরকম ছিল না। অতীতে সরস্বতী পূজার বদলে বাগেশ্বরী পূজা করা হত। প্রতিমাসের শুক্লা পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে পাঠশালায় পরিষ্কার চৌকির ওপর তালপাতার তাড়ি ও দোয়াত-কলম রেখে পূজা করার রেওয়াজ ছিল।
বিংশ শতাব্দীতে শহরাঞ্চলের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সরস্বতী মূর্তি তৈরি করে পূজা করা শুরু করলেন। গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ সেই পূজা দেখতে যেত। এভাবে সরস্বতী পূজা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখন বাসায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই পূজা করা হয়।
সরস্বতী পূজার খাবারদাবার
সরস্বতী পূজায় সাধারণত নিরামিষ রান্না, ফলমূল ও মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া হয়। নিরামিষ খিচুরি, লাবড়া, পোস্ত তরকারি, চাটনি, পায়েস, সন্দেশ, লুচি, নানারকম ভাজাভুজি এবং এই সময়ে পাওয়া যায় এমন ফলমূল ও বড়ই খাওয়ার রেওয়াজ আছে। তবে একেক জায়গায় পূজার রীতিনীতি একেকরকম। তাই খাবারদাবারের বিষয়টিও দেশ ও এলাকাভেদে ভিন্ন হতে পারে। পূজার পরেরদিন অধিকাংশ বাড়িতে দই, চিড়া খাওয়া হয়।
পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে পরেরদিন মূর্তি বিসর্জন হয়। তবে যারা ঘরে পূজা করেন তারা সরস্বতী মূর্তি সারাবছর ঠাকুরঘরে রাখেন। সরস্বতী দেবীর আশীর্বাদস্বরূপ বেলপাতায় দোয়াত-কলম দিয়ে দেবী সরস্বতীর নাম লিখে বইয়ের ভেতর রেখে দেন ভক্তরা।