জ্বলে উঠুন হীরার আলোয়
৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ১২:৪৬
জান্নাতুল মাওয়া
এখন পর্যন্ত মানুষের হাতে আসা সবচেয়ে দামী রত্নটি হল হীরা। হীরা তাই আভিজাত্য আর ক্ষমতার প্রতীক। শুধুমাত্র কার্বন থেকে তৈরি হতে এই রত্নটি সময় নেয় প্রায় এক থেকে সাড়ে তিন বিলিয়ন বছর! একটি মাত্র উপদান থেকে তৈরি বলে একে বিশুদ্ধ রত্নও বলে। অর্থাৎ আভিজাত্য আর ক্ষমতার সাথে সাথে এটি বিশুদ্ধতারও ধারক।
সকলেই চায় সবচেয়ে মূল্যবান এই রত্নটি ধারণ করতে। আর সকলের কথা ভেবেই ব্যবসায়ীরা এই রত্নে খচিত গহনাগুলো সকলের ক্রয়সীমার মধ্যে নিয়ে এসেছেন। এখন হীরার গয়নার দাম শুরু হয় সাধারণত তিন হাজার টাকা থেকে।
আগে বেলজিয়াম কাটের হীরা পাওয়া গেলেও এখন দেশের বাজারের প্রায় সব হীরাই বোম্বে কাটের। বেলজিয়াম কাটের হীরার দাম বোম্বে কাটের প্রায় তিনগুণ। হিরার গয়না এখন সব ধরণের ক্রেতার হাতের নাগালে আসার এটি একটি অন্যতম কারন। দেশের প্রায় সব বড় স্বর্ণের দোকানেই হীরা পাওয়া গেলেও কার্বন ক্র্যাফট, রয়্যাল ডায়মন্ড, ডায়মন্ড গ্যালারি- এই দোকানগুলোতে শুধুমাত্র হীরার গয়না পাওয়া যায়। তাই দেশ থেকে হীরার গয়না কিনতে গেলে প্রথমেই ক্রেতারা এই দোকানগুলোতেই ঢুঁ মারেন।
বিয়ের গয়নায় একটি হিরার আংটি কিংবা নাকফুল প্রায় সব স্তরের ক্রেতারাই কিনতে চান। পানচিনি কিংবা এনগেজমেন্টে হিরার আংটি তো এখন প্রায় সবারই প্রথম পছন্দ। বিশেষত প্লাটিনাম বা হোয়াইট গোল্ডের ওপরে হিরে বসানো আংটি সবচেয়ে জনপ্রিয়। তাই বিয়ের মৌসুমে হীরার বাজার বেশ চাঙ্গা থাকা।
এই প্রসঙ্গে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের একজন বিক্রয়কর্মী জানান, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সময় কাটান তারা। তিনি আরো বলেন, হীরার গয়নার মধ্যে তাদের দোকানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় হীরার আংটি আর নাকফুল। নাকফুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলে সেভেন স্টোন স্টার নোজপিন। এছাড়াও রয়েছে এক পাথর, তিন পাথর আর ফ্লোরাল ডিজাইনের নাকফুল। কোন নির্দিষ্ট ডিজাইনের গয়না বেশি চলে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের সব ডিজাইনই এক্সক্লুসিভ এবং খুব বেশি পিস সাধারণত রাখা হয়না। এছাড়া ক্রেতারা চাইলে নিজেদের পছন্দের ডিজাইন অর্ডার করে যেতে পারেন। এসব হীরার দোকানে ক্রেতারা সব ধরণের ডিজাইনই পেতে পারেন।বাংলাদেশের ডায়মন্ডের ব্যাপারে অনেক ক্রেতা নেতিবাচক ধারণা পোষন করলেও এই হীরার দোকানগুলো বেশ জনপ্রিয় এবং এদের একাধিক শো-রুমও রয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির হিসেব অনুযায়ী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন শহরে বিশেষায়িত হীরা বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা এখন সহস্রাধিক।
হীরার একটি অন্যতম সুবিধা হল এই গয়না দোকান থেকে একবার কিনলে সারা জীবন ফ্রি-তে এর সার্ভিসিং করে নেয়া যাবে। হীরার গয়না পরতে পছন্দ করেন এমন একজন ক্রেতার সাথে আলাপকালে জানা গেল তিনিও সবচেয়ে বেশি কিনেন নোজপিন। আর দেশের হীরার দোকানগুলোর মধ্যে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড থেকেই বেশি গয়না কেনা হয় তার।
আরো বেশি এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের জন্যে ক্রেতারা দেশের বাইরে থেকেও হীরার গয়না কিনে আনেন। অনলাইনেও দেশের ক্রেতাদের হীরা কেনার সুযোগ করে দিয়েছে ভারতভিত্তিক হীরার গয়নার দোকান মি সলিটেয়্যার। www.mesolitaire.com এই ওয়েবসাইটটিতে গেলে ক্রেতারা নানান ডিজাইনের হীরার গয়না কিনতে পারবেন। চাহিদা জানানোর দশ থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে ক্রেতার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে হীরার গয়না।
হীরার গয়না একটু যত্ন নিয়ে পরলেই সারা জীবন নতুনের মত থাকে। যেমন, ঘষামাজা জাতীয় কাজের সময় হাতের হীরার আংটিটি খুলে রাখাই ভালো। এছাড়াও গোসলের আগে হিরার গয়না খুলে রাখা দরকার। অন্য গহনার সাথে হীরার গয়না না রেখে একে আলাদা বক্সে ট্যিসু দিয়ে পেঁচিয়ে রাখলে সবসময় উজ্জ্বল থাকবে। কখনো যদি অনুজ্জ্বল মনে হয় তাহলে ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়ে গয়না পালিশ করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে একদম নতুনের মত হয়ে যাবে। আর গয়না কেনার পরে মেমো এবং গ্যারান্টি কার্ডটি সযত্নে রেখে দিতে হবে; তাহলে যে কোন সময়ে সার্ভিসিং করানো যাবে।
হীরার ইংরেজি শব্দ ডায়মন্ড এসেছে গ্রীক শব্দ আদামাও থেকে, যার অর্থ কঠিন পদার্থ। তাই এই কঠিনেরে সহজে নিজের কাছে বাঁধার আগে একটু যাচাই বাছাই করে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
ছবি – ইন্টারনেট
সারাবাংলা/জেএম/এসএস