Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনার পরে কি প্রকৃতিবান্ধব হবে ফ্যাশন বিশ্ব?


২৬ এপ্রিল ২০২০ ১০:০০

ঢাকা: যে কোনো উপলক্ষে নিত্যনতুন পোশাক পরে বাহবা নেওয়ার প্রবণতা নতুন কিছু নয়। শুধু এদেশে নয়, সারাবিশ্বের ফ্যাশনপ্রেমীদের চোখ থাকে নতুন ডিজাইনের পোশাকের ওপর। আর এতে সবচেয়ে বেশি খেসারত দিতে হয় পরিবেশকে। পোশাক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনের ফলে যে বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয় তা পানি, মাটি ও বাতাসের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি তাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিবেশ দূষণের কারণ।

বিজ্ঞাপন

এনভায়রনমেন্ট প্রোটেনশন এজেন্সির ২০১৩ সালের একটি হিসাব অনুযায়ী, সেই বছর একমাত্র টেক্সটাইল শিল্প থেকেই এক কোটি ৫১ লাখ টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। পাশাপাশি কাপড়ে ব্যবহৃত কৃত্রিম রং মাটিতে মিশে একে দূষিত করছে ভয়াবহ মাত্রায়।

১৯৬০ সালের পর আমেরিকানদের নতুন পোশাক কেনার পরিমাণ বেড়ে যায় উল্লেখযোগ্যহারে। বর্তমানে সারা বিশ্বের মানুষ বছরে আট হাজার কোটি পিস পোশাক কেনে, যার অধিকাংশই পরার পর ফেলে দেওয়া হয়। ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ অর্থাৎ দ্রুত পরিবর্তনশীল ফ্যাশনের যুগে ঋতুভেদে বদলে যাচ্ছে পোশাকের ট্রেন্ড। ডিজাইন, ক্রিয়েশন ও মার্কেটিং যুক্ত হয়ে এটি মানুষের কাছে দ্রুত এবং কম খরচে পৌঁছে যাচ্ছে। নতুন ট্রেন্ডের পোশাক পরতে পারাটাই আজকালকার যুগের সাফল্যের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে বাড়ছে পোশাক বর্জ্য।

আবার অন্যদিকে অবিক্রিত কাপড় পুড়িয়ে ফেলার ফলে উৎপন্ন হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইন্সটিটিউটের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ফাস্ট ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির কারণে প্রতি বছর ১২০ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন হয়।

এভাবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি প্রচুর পরিমাণে গ্রিন হাউজ গ্যাস উৎপন্ন করে। আমাদের দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস হলো পোশাকশিল্প। দেশে প্রচুর পোশাক কারখানা আছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বোঝা যায়, আমাদের পরিবেশও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির দ্বারা কতটা ক্ষতিগ্রস্থ।

উন্নত দেশগুলোও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে পরিবেশকে যথেষ্ট দূষিত করছে। নিত্যনতুন ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যস্ত সবাই। পরিবেশ নিয়ে ক’জন ভাবে! উন্নত দেশগুলোতে অবলীলায় পোশাকের অপচয় করা হয়। ফ্যাশনপ্রেমীরা একবার পরেই সেই পোশাক ফেলে দেন ময়লার ভাগাড়ে। ফলে পোশাকের চাহিদা বাড়ে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে পোশাক উৎপাদন।

বিজ্ঞাপন

ব্রিটেনে হাউজ অফ কমন্সের পরিবেশ বিষয়ক একটি কমিটি ঘোষণা দেয়, ২০৫০ সাল নাগাদ ব্রিটেনের জলবায়ুতে যে প্রভাব পড়বে তার তিন ভাগের ১ ভাগেরও বেশি দায় থাকবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির। এজন্য কাপড় ফেলে দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরামর্শ দিয়েছে এই কমিটি।

এদিকে বিশ্বজুড়ে চলছে করোনাভাইরাসের মহামারি, বেড়েছে মানুষের হাহাকার। মহামারি উতরে যারা নতুন পৃথিবীতে বাস করবে তাদের জন্য একটি শিক্ষা হলো- ‘প্রকৃতির ভাষা বুঝতে হবে’। প্রাণ, প্রকৃতি তথা পরিবেশের ক্ষতি করে মানুষ যে শ্রেষ্ঠ হতে পারে না- এই বার্তাই দিয়ে যাচ্ছে মরণব্যাধি করোনাভাইরাস।

বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগের প্রধান সম্পাদক অ্যানা উইনটার করোনাভাইরাসের পর ফ্যাশন ট্রেন্ড সম্পর্কে কথা বলেছেন ব্রিটিশ মডেল নাওমি ক্যাম্পবেলের সঙ্গে। ফ্যাশনপ্রেমীদের জন্য অ্যানা উইনটারের দেয়া পরামর্শগুলো উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলে।

অ্যানা উইনটার বলেন, করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাব মানুষের মূল্যবোধে একটা বিরাট পরিবর্তন আনতে বাধ্য। ‘অপচয়’ মানে কী- তা অন্তত মানুষকে বুঝতে পারবে। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা নিয়ে পুনরায় মানুষকে ভাবতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পোশাকে সৃজনশীলতার ছাপ রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাশনকে আরও কতটা ‘শিল্পের’ জায়গায় উন্নীত করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে।

করোনাভাইরাসের কারণে পোশাক শিল্পের কাজ একেবারেই বন্ধ আছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই শিল্পে যুক্ত থাকা অগণিত সাধারণ মানুষ। তারা যেন অন্তত বেঁচে থাকে এজন্য আলাদা ফান্ড গঠন করতে হবে। তাদের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন অ্যানা উইনটার।

টেকসই ফ্যাশন ট্রেন্ড চালু করার পরামর্শ দিয়ে অ্যানা বলেন, ফ্যাশনে অতিমাত্রায় গুরুত্ব দিতে গিয়ে যারা পোশাকের অপচয় করেন তারা পরিবেশের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলছেন। পোশাক অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে, তবে তা প্রয়োজন বুঝে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক ব্যবহার মানেই অপচয়।

অ্যানা উইনটারের পরামর্শ নানা মহলে বেশ প্রসংশিত হয়েছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের মহামারির এই সময়ে তার পরামর্শ অনেককে সাহস জুগিয়েছে।

অ্যানা উইনটার করোনা পরবর্তী ফ্যাশন ট্রেন্ড নাওমি ক্যাম্পবেল পরিবেশবান্ধব ফ্যাশন ভোগ ভোগ ম্যাগাজিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর