১০ মাসে ২১ কেজি ওজন কমিয়ে তাক লাগালেন ভারতের সমীক্ষা
৫ মে ২০২০ ০০:৫১
বাড়তি ওজন অনেকসময় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এতে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যাও বেড়ে যায়। ওজন কমানোর জন্য দরকার মনোবল ও সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করা।
আজকের গল্পটা ভারতীয় নাগরিক সমীক্ষা নেগির, যিনি ১০ মাসে ২১ কেজি ওজন কমাতে পেরেছেন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি ধারাবহিকভাবে ওজন কমানোর লড়াইটা করে গেছেন। সম্প্রতি ভারতের এক জাতীয় দৈনিকে সমীক্ষা নেগির ওজন কমানোর গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে। আসুন জেনে নেই, এই যুদ্ধে তিনি সফল হলেন যেভাবে-
সমীক্ষা নেগির বয়স ২১ বছর। ছোটবেলায় অবশ্য তিনি হালকা-পাতলা গড়নের ছিলেন। কিন্তু বয়ঃসন্ধি শেষ হতে না হতেই ওজন বাড়তে থাকে। একটা সময় ওজন বেড়ে হয়ে দাঁড়ায় ৭৬ কেজি ৬০০ গ্রাম। এদিকে তার উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। ফলে উচ্চতা অনুযায়ী শারীরিক ওজন নিঃসন্দেহে বেশি।
অতিরিক্ত ওজনের ফলে পছন্দমতো জামা কিনতে পারতেন না। তখন খুব খারাপ লাগতো সমীক্ষার। এমনকি নিজের ব্যবহৃত জামাগুলোও দিন দিন ছোট হতে লাগলো। শুধু তাই নয়, আশেপাশের লোকজনের বিরুপ মন্তব্যগুলো রীতিমতো অপমানজনক মনে হতো সমীক্ষা নেগির।
এদিকে অসুখ বিসুখও পিছু ছাড়তো না তার। একটার পর একটা শারীরিক সমস্যা যেন লেগেই থাকত। হঠাৎ একসময় সমীক্ষার মনে হলো, ঘুরে দাঁড়ালে কেমন হয়! যেই কথা, সেই কাজ। এবার তিনি আদাজল খেয়ে লেগে পড়লেন। স্বাভাবিক ওজন ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা শুরু করলেন। ভাবলেন, এই লড়াইটা কঠিন হতে পারে, তবে অসম্ভব তো না। অবশেষে সফলও হলেন। ১০ মাসে ২১ কেজি ওজন কমিয়েছেন। সমীক্ষা নেগির ওজন এখন ৫৫ কেজি।
সমীক্ষা নেগির খাদ্যাভ্যাস:
সকালের নাস্তা: ডালিয়া (ভাঙা গম দিয়ে তৈরি খিচুড়ি জাতীয় খাবার), বেসন চিল্লা (পাতলা চাপাতি), সেদ্ধ ডিম, অমলেট ও স্যান্ডউইচ (ব্রাউন ব্রেড) ইত্যাদি বদলে বদলে খেতেন।
দুপুরের খাবার: এক বাটি সবজি, ১/২ টি চাপাতি, এক কাপ সালাদ, এক বাটি টকদই।
ব্যায়ামের আগে: ১ টি কলা বা কলার তৈরি মিল্ক শেক। সন্ধ্যায় ব্যায়াম করেন তাই ব্যায়ামের পরেই রাতের খাবার খেয়ে নেন।
রাতের খাবার: ওজন কমানোর শুরুর দিকে টানা এক মাস শুধুই খিচুড়ি খেয়েছেন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ১ টি চাপাতি, এক বাটি সবজি, এক বাটি ডাল ও এক কাপ দুধ খান।
চিট মিল: ওজন কমানোর জার্নিতে প্রতিদিনের কড়া রুটিন ভেঙে একদিন চিট মিল বা ইচ্ছামত খাবার খান অনেকে। সমীক্ষা শুরুর দিকে চিট মিলের জন্য একদিনও রাখেন নি। তবে এখন একদিন করে চিট মিল রাখলেও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চেষ্টা করেন।
নিয়মমাফিক এসব খাবারের পাশাপাশি বাদাম এবং ভুট্টাও রয়েছে তার খাদ্যতালিকায়।
সমীক্ষার পরামর্শ
ওজন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করা কিছুটা কঠিন। তবে এক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছাশক্তিই বড় বলে মনে করেন সমীক্ষা নেগি। তাছাড়া খুব দ্রুত ওজন কমানোর কথা একেবারেই ভাবা যাবে না। ওজন কমানোর জন্য ৪ টি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। আত্মনিবেদন, নিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। শারীরিক পরিশ্রমও করতে হবে। তা হোক ঘরের কিংবা বাইরের কাজ।
ফাস্টফুড ও বাইরের খাবার বাদ
ফাস্টফুড খাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছেন সমীক্ষা নেগি। এমনকি বাইরের কোন খাবারই তিনি খান না। নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করেই তিনি এই খাবারগুলো বাদ দিয়েছেন।
তবে সতর্ক থাকতে হবে…
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক পরিশ্রম করার পরও যখন ওজন কমেনি তখন খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন সমীক্ষা নেগি। কিন্তু তারপরও হাল ছেড়ে দেননি। টানা ১০ মাস ধরে একই ধরনের জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সফল হয়েছেন। এজন্য সমীক্ষার পরামর্শ হলো, অল্প কিছুদিনের ফলাফল দেখে হাল ছাড়া যাবে না।
‘শুরুতে সবকিছুই কঠিন মনে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় আপনি যখন সফলতার মুখ দেখবেন তখন খুশিতে আপনার মনটা ভরে উঠবে’- মন্তব্য সমীক্ষা নেগির।