রোজার সুস্থতা।।পর্ব ৪।।খেজুর বাঙ্গির তেলেসমাতি
৫ মে ২০২০ ১৫:৪০
মহামারির কারণে এবছরের রোজা অন্যান্য বারের চেয়ে একটু ভিন্ন আমেজে শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দেশব্যাপি চলছে সাধারণ ছুটি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া মানা। তাই অন্যান্য বছরের মত রোজা পালন করা সম্ভব হবে না। তাই রোজায় সুস্থতার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস।
রোজার মাসজুড়ে সারাবাংলার পাঠকদের জন্য মাসজুড়ে পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ আজমেরি রহমান সিন্থীয়া।
পবিত্র রমজানে ইফতারের মেন্যুতে খেজুর থাকতে হবেই। মুসলমান হিসেবে খেজুরকে আমরা বিশেষ মর্যাদায় গ্রহণ করে থাকি। জেনে রাখুন, খেজুরের রয়েছে বিস্তর পুষ্টিগুণ। খেজুরে আছে পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি, সি, এ, কে ছাড়াও প্রচুর খাদ্যগুণ।
অন্যদিকে, এই গরমে দেশি ফলের মধ্যে সহজলভ্য একটি ফল হলো বাঙ্গি, এই বাঙ্গি আমরা গ্রহণ করি গরমের আরামদায়ক ফল হিসেবে। এতেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম, সোডিয়ামসহ নানা পুষ্টি উপাদান।
চলুন জেনে নেয়া যাক বাঙ্গি ও খেজুরের বেশ কয়েকটি মজার মিল যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রোগ প্রতিরোধ ও চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে
বাঙ্গি ও খেজুরে ভিটামিন এ ও সি বিদ্যমান যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে।
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে
বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর ফলিক এসিড যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। তাই এটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী।
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন যা রক্তশুন্যতা মেটাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে নারীদের আ্যনিমিয়া রোগের সমাধান এই আয়রনেই বিদ্যমান।
পানিশূন্যতা রোধে
বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পানি যা শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
খেজুর পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দূর করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য ও ওজন নিয়ন্ত্রণ
বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমানে খাদ্য আঁশ আছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাছাড়া প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম থাকায় পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
খেজুরেও রয়েছে প্রচুর পরিমান ডায়াটারি ফাইবার যা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিড যা সহজে খাবার হজমে সহায়তা করে। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখতে
বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম থাকায় তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।এছাড়াও এতে থাকা আ্যডিনোসিন রক্তকে পাতলা করে হৃদরোগের ঝুকি কমিয়ে হৃদপিন্ড সুস্থ রাখে।
খেজুরেও রয়েছে পটাশিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া এটি Bad Cholesterol কমিয়ে Good cholesterol বৃদ্ধি করে যা হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে।
পটাশিয়াম ও সোডিয়াম সমতায় খেজুর ও বাঙ্গি উভয়ই সাহায্য করে।
এছাড়া আলাদা করে খেজুরে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা হাঁড় ও দাঁতকে মজবুত করে এবং রয়েছে প্রোটিন যেটি কিনা মাংসপেশি গঠনে সাহায্য করে।
কিছু সচেতনতা
ডায়েবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে বাঙ্গিতে চিনির পরিমান কম থাকায় বেশি পরিমান খেতে পারবে তবে খেজুর মিষ্টি হওয়াতে পরিমান সেক্ষেত্রে কম হতে হবে।
আবার কারো যদি ইউরিক এসিড বেশি থাকে তার ক্ষেত্রেও খেজুর কম খেতে হবে।
তাছাড়া বাঙ্গিতে থাকা High Fibre অতিরিক্ত খেলে তা অনেক ক্ষেত্রে Calcium Absorb এ অসুবিধা তৈরি করতে পারে।
তাই, রোগ অনুযায়ী যেকোনো খাদ্যই পরিমাণমত নিতে হবে, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়, সেক্ষেত্রে একজন দক্ষ ডায়েটিশিয়ান ও পুষ্টিবিদ হতে পারে আপনার সুস্বাস্থ্য গঠনের পরিচালক।
তাই আসুন নিয়মিত খাদ্যাভাস গড়ে তুলি। খাদ্য তালিকাকে সাজাই পুষ্টিসম্পন্ন খাবার দিয়ে। আর গ্রীষ্মের এই রোজায় খেজুর আর বাঙ্গিকে খাবারের তালিকায় বিশেষ গুরুত্ব দেই।