রোজার সুস্থতা।। পর্ব ৫।। কব্জি ডুবিয়ে সবজি খান
৮ মে ২০২০ ১১:০০
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দেশব্যাপি চলছে সাধারণ ছুটি. মহামারির কারণে এবারের রোজা অন্যান্য বারের চেয়ে একটু ভিন্ন আমেজে শুরু হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া নিষেধ, তাই আগের মত রোজা পালন করা সম্ভব হবে না। তাই রোজায় সুস্থতার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস।
রোজার মাসজুড়ে সারাবাংলার পাঠকদের জন্য মাসজুড়ে পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ আজমেরি রহমান সিন্থীয়া।
দেহের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে শাক-সবজির বিকল্প কিছু নেই। কিন্তু শাক-সবজি খেতে ছোট-বড় সবাই যেন একটু কমই পছন্দ করি। এর অন্যতম কারণ হলো:
১) পুষ্টি সম্পর্কে কম ধারণা
২) শাকসবজি না চেনা
চলুন আজ আমরা খুব সহজেই চিনে নিই বাজারে পাওয়া যায় এমন কিছু শাক-সবজির ধরণ সম্পর্কে-
প্রকারভেদে সবজি:
১) ফল জাতীয় সবজি- টমেটো, মরিচ, সজনে, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া।
২) পাতা জাতীয় সবজি- পালংশাক, লালশাক, পুঁইশাক, ধনিয়া পাতা, বীট পাতা, লেটুস।
৩) লতা জাতীয় সবজি- কাঁকরোল, বরবটি, চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, পটল, বরবটি।
৪) মূল জাতীয় সবজি- মূলা, গাজর, শালগম, মিষ্টি আলু, আদা।
৫) কপি জাতীয় সবজি- বাঁধাকপি, ওলকপি, ফুলকপি, ব্রকলি।
৬) কান্ড জাতীয় সবজি- গোল আলু, কচু, ওলকচু, আদা, মাশরুম, গ্লোব আর্টিচোখ।
অনেকের ধারণা, সবজি বাদ দিয়ে শুধু ফল দিয়েই প্রয়োজনীয় ভিটামিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব। একদমই ভুল চিন্তা এটি। শরীরের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ হয় সবজির মাধ্যমে। কারণ শাক-সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস, প্রোটিন, ফাইবার, ফলিক এসিড ইত্যাদি।
চলুন দেখে নিই কোন কোন সবজিতে কী পুষ্টিগুণ রয়েছে-
ভিটামিন এ- কচু, সজিনা, টমেটো, গাজর, বেগুন, লালশাক, মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে, কচু, কুমড়া, বেগুন, লাউ।
ভিটামিন বি- মটরশুঁটি, শিম।
ভিটামিন সি- পালংশাক, আমলকি, পেয়ারা, কাঁচামরিচ, শিম, মূলা, টমেটো, বাঁধাকপি, গাজর।
ভিটামিন ডি- সবুজ শাকসবজি।
ভিটামিন ই- লেটুস, বাঁধাকপি।
খনিজ লবণ- পাতা জাতীয় শাকসবজি যেমন- পালংশাক, পুঁইশাক, লাল শাক।
ক্যালসিয়াম- মূলা, বেগুন, মেথিশাক, পালংশাক।
আয়রন- টমেটো, গাজর, কচুশাক, করলা, কাঁচকলা, লালশাক, কাঁকরোল।
প্রোটিন- মটরশুটি, শিম, বরবটি।
তবে যখন শাক খাবেন তা যেন তেলে ভাজা হয় এবং আয়রন যেকল শাকে রয়েছে তা যেন লেবু দিয়ে খাওয়া হয়।
এবার কোন রোগে কোন শাকসবজি উপকারি তা নিয়ে ছোট্টো আলোচনা-
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে- আলু, কচু, ঢেড়স, ঝিঙে, গাজর, মিষ্টিআলু, পালংশাক, মটরশুটি।
আ্যসিডিটি নিয়ন্ত্রণে- লাউ, পেঁপে, পুদিনা, শাক, চিচিংগা, কাঁকরোল।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে- করলা, মেথিশাক, লাউ, কাঁচা পেপে, কলার থোড়, মোচা, ডুমুর, পালংশাক।
চোখের জ্যোতি বাড়াতে- সজনে, গাজর, পালংশাক, টমেটো, মেঁথিশাক, লেটুস, লাল শাক, সরষে শাক।
আরো কিছু সবজির কথা না বললেই নয়-
মাশরুম- ডায়বেটিস, জন্ডিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডেঙ্গুজ্বর, ক্যান্সার, টিউমার এসকল রোগের জন্য মহাঔষধ।
সয়াবিন- ক্যান্সার প্রতিরোধক ও হরমোনজনিত সমস্যায় উপকারী। তাছাড়া গরীবের আমিষ বলা হয় একে।
মিষ্টিআলু- হজম প্রক্রিয়া, হাঁড়, হার্ট ভালো রাখা ছাড়াও লাল এবং সাদা রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে।
মিষ্টিকুমড়া- সারাবছর পাওয়া যায়। এটি চোখের ছানি রোধ, মূত্রথলি সমস্যা রোধ এবং রিউমাটিয়েড আথ্রাইটিস প্রতিরোধে কাজ করে।
আশা করি খুব সহজেই বুঝতে পেরেছেন কোন সবজির গুনাগুন কেমন। তাই আসুন, সুস্থ থাকতে সবজি খাই, সুখী সুন্দর জীবন পাই।