রোজার সুস্থতা।। পর্ব ৬।। ইমিউনিটি বাড়ান, ভাইরাস তাড়ান
১১ মে ২০২০ ১২:০০
মহামারির চলার ফলে এবছরের রোজা অন্যবারের চেয়ে কিছুটা ভিন্নতায় শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দেশব্যাপি চলছে সাধারণ ছুটি। জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া মানা। তাই অন্যান্য বছরের মত রোজা পালন সম্ভব হবে না। তাই রোজায় সুস্থতার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস।
রোজার মাসজুড়ে সারাবাংলার পাঠকদের জন্য মাসজুড়ে পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ আজমেরি রহমান সিন্থীয়া।
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে ঘরে থাকা স্বত্ত্বেও করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। ঘরেই থেকে যদি আক্রান্ত হবো তাহলে বাঁচার উপায় কি! ঘাবড়াবেন না, এই অবস্থার একমাত্র কারণ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্বল্পতা! আমরা ধরেই নেই এখন যেহেতু বাইরের পরিশ্রম বন্ধ তাই শুধু শক্তি দেয় খাবার কম খেতে হবে। কিন্তু না এটি সম্পূর্ন ভুল ধারণা। সুস্থ থাকতে নিয়মিত শরীরচর্চাও করতে হবে। কারণ, শরীরচর্চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আর শরীরচর্চার পাশাপাশি ভিটামিন সি, ডি, এ, জিংক ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এই কাজগুলো আপনাকে কোভিড-১৯ সহ যেকোনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করবে।
চলুন আজকের এই পর্বে শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি ও ডি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ভিটামিন সি কে বলা হয় ‘রোগ প্রতিরোধের রাজা’। এর অন্য নাম এসকরবিক এসিড। অনেকেই ভিটামিন সি মানেই লেবু বা কমলা বোঝেন। এ ধারণাটি নিতান্ত ভুল। শুধুমাত্র টক মানেই ভিটামিন সি নয়, নানারকম সবজিতেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
ফলমূল
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল যেমন, আমড়া, আমলকি, আম, জাম্বুরা, কমলা, জাম, বরই, পাকা পেঁপে, লেবু ইত্যাদি। মজার ব্যপার এই ফলগুলোর মধ্যে লেবুতে সবচেয়ে কম ভিটামিন সি রয়েছে, আর আমলকিতে সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম লেবুতে ৪৬ মিলিগ্রাম ও আমলকিতে ১০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়!
সবজি
শাকসবজির মধ্যে করলা, কাঁচা মরিচ, কাকরোল, সজনে পাতা, মিষ্টি আলু, পাটশাক, কালো কচুশাক, পুঁইশাক, আলু ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে।
প্রাণিজ প্রোটিন
প্রাণিজ খাবার যেমন, কলিজা, মাছ, ডিমের কুসুম, দুধ ইত্যাদি ভিটামিন সি এর উৎস।
ভিটামিন সি এর কাজ
- এটি একটি আ্যন্টিঅক্সিড্যান্ট যা দেহের অন্যান্য আ্যন্টিঅক্সিড্যান্টকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে এবং শরীরের ফ্রি রেডিক্যালগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসায় সহায়তা করে।
- ইমিউনিটি সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) সুরক্ষার পাশাপাশি এলার্জির তীব্রতা হ্রাস করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে।
- সর্দি কাশিতে এর তুলনা নেই।
- স্বাস্থ্যকর মাড়ি বজায় রাখে।
- রক্তচাপের স্তর নিয়ন্ত্রণ করে।
- সঠিক ডোজ প্রদান করে বাত প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং হাড়ের জয়েন্টগুলো স্বাস্থ্যকর রাখে।
- স্ট্রোকে বাঁধা দেয়।
- চোখের ছানি পড়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি থেকে সুরক্ষিত রাখে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- হাসপাতাল ভর্তি রোগীদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন সি মন মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে।
আমেরিকান ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশানের সুপারিশ অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে ভিটামিন সি’র দৈনিক গ্রহণমাত্রা যথাক্রমে ৯০ ও ১০০ মিলিগ্রাম। তবে যারা মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা, দূষিত পরিবেশ ও ফ্রি র্যাডিক্যাল এক্সপোজারে থাকেন ও অসংক্রামক দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়বেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদিতে ভোগেন তারা দৈনিক ৫০০ মিলিগ্রাম থেকে ২০০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ভিটামিন সি খেতে পারবেন। এছাড়াও চিকিৎসার প্রয়োজনে এর চেয়ে বেশি ডোজেও শুধুমাত্র চিকিৎসক/পুষ্টিবিদের পরামর্শক্রমে ভিটামিন সি ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়াও RDA অনুযায়ী কোন বয়সের মানুষ কী পরিমাণ ভিটামিন সি গ্রহণ করবে তা আলোচনা করা হলো (যদিও এর পরিমাণ রোগভেদে বাড়তে পারে)-
- গর্ভবতী নারী: ৮৫-১২০ মিলিগ্রাম
- শিশু (১-৩ বছর): ১৫ মিলিগ্রাম
- শিশু (৪-৮ বছর): ২৫ মিলিগ্রাম
- শিশু(৯-১৩বছর): ৪৫ মিলিগ্রাম
- কিশোর কিশোরী (১৪-১৮ বছর): মেয়ে ও ছেলে যথাক্রমে, ৬০ ও ৭৫ মিলিগ্রাম
আমাদের দেশের জনগনের ৯০ শতাংশই ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে মেয়েরা। এর কারণ রোদে কম যাওয়া, বায়ু দূষণ, সূর্যালোকহীন বাসা ইত্যাদি। প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি সাধারণত সূর্যালোক থেকেই পাওয়া যায়।
কিন্তু যারা রোদে কম যান তারা সম্ভব হলে ভিটামিন ডি৩ সাপ্লিমেন্টস নিতে পারেন, তবে তা শরীরের ঘাটতি অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে। ভিটামিন ডি পেতে কিছু খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। যেমন, কড লিভার অয়েল, মাছের তেল, জায়ফল, লবঙ্গ, এলাচি, পোস্তদানা, গাজর, গোলমরিচ, হলুদ, জিরা, আদা, কাঁচামরিচ, রসুন, ডিমের কুসুম, দুধ, আখরোট, কাজু বাদাম ইত্যাদি।
ভিটামিন ডি এর কাজ
- ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে হাড়ের গঠনে সহায়তা করে।
- পেশী সংক্রান্ত সমস্যার অবসান ঘটায়।
- কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা এমনকি মেয়েদের অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
- হার্টের সমস্যা সমাধান ছাড়াও দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
মনে রাখবেন, সাবধানতা অবলম্বন রোগ নিরাময়ের চেয়ে ভালো! তাই আসুন নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলি, সুস্থতাকে নিজের বশে আনি। চোখ রাখুন পরের পর্বে যেখানে থাকবে জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন এ নিয়ে আলোচনা।