Tuesday 15 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোজার সুস্থতা।।পর্ব ৮।।গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও করণীয়


১৭ মে ২০২০ ১৯:৪৯ | আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ১৯:৫১
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহামারির কারণে এবছরের রোজা অন্যান্য বারের চেয়ে একটু ভিন্ন আমেজে শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দেশব্যাপি চলছে সাধারণ ছুটি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া মানা। তাই অন্যান্য বছরের মত রোজা পালন করা সম্ভব হবে না। তাই রোজায় সুস্থতার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস।

রোজার মাসজুড়ে সারাবাংলার পাঠকদের জন্য  মাসজুড়ে পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ আজমেরি রহমান সিন্থীয়া।

গ্যাস্ট্রিক শব্দটি পরিচিত হলেও এর সঠিক নাম হচ্ছে Gastritis। মানুষের মুখে মুখে রোগটির নাম হয়ে গিয়েছে Gastric। সে যাই হোক, এ নিয়ে প্রায়ই নানা রকম বিড়ম্বনা দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

রোজায় এই সমস্যা যাদের দেখা যায় তাদের উদ্দেশ্যে বলবো— আপনাদের খাদ্যাভ্যাসের জন্যই রোজায় গ্যাস নিয়ে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন। কেন তা একটু ব্যাখা করি। ‘অটোফেজি’ নিয়ে সবাই শুনে থাকবেন। এই শব্দটি এসেছেই দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার প্রক্রিয়া থেকে। টোকিওর গবেষক এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান। অটোফেজি প্রক্রিয়াটি আমাদের শরীরকে কার্যক্ষম রাখে, দুর্বল অঙ্গাণু থেকে মুক্তি দেয় এবং ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে। এককথায় বলা যায়, অটোফেজি রোগ প্রতিরোধ করে এবং আমাদের যৌবন ধরে রাখতে সহায়তা করে। তাহলে আমরা যে ১ মাস সিয়াম সাধনা করছি, সেক্ষেত্রে আমাদের উল্টো  ভালো থাকার কথা। তার মানে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আমাদের অত্যন্ত জরুরী। ছোট ছোট পদক্ষেপ কিন্তু খুব সহজ। কিছু খাদ্য আপনার নিত্যদিনের খাবারের টেবিলে রাখলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব।

এ রোগটি হতে পারে নির্দিষ্ট কোন ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় যেমন- পেইন কিলার, স্ট্রেস, স্মোকিং, চর্বি ও মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া এবং কখনো কখনো ইনফেকশনের কারণেও হয় যেমন— H-Pylori ইনফেকশনের জন্য।

কীভাবে বুঝবেন আপনি Gastritis রোগে আক্রান্ত:

  • পেটে ব্যাথা
  • বদ্ধ অনুভূতি
  • পেট ফুলে যাওয়া
  • খাওয়ার ইচ্ছা লোপ
  • ঢেকুরের সঙ্গে টক বা অম্ল জাতীয় পানি বের হওয়া

 খাদ্যাভ্যাসে খুব সামান্য পরিবর্তনে এ সমস্যা থেকে স্বস্তি পাওয়া সম্ভব-

  • প্রথমেই লেবুর শরবত দিয়ে ইফতার শুরু করবেন না। শুরুতে পানি দিয়ে শুরু করুন। তারপর চিনি ছাড়া অথবা খুবই অল্প পরিমাণ চিনিযুক্ত শরবত, বাঙ্গি, তরমুজ বা বেলের শরবত খেতে পারেন। তাছাড়া পানি ও সাদা মুড়ি দিয়েও শুরু করতে পারেন।
  • বেশি করে খোসাসহ শসা খাবেন, কারণ শসার ৯৫ ভাগ পানি যা সারাদিনের শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে শরীরকে শীতল করতে সাহায্য করে। সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
  • খাবারের তালিকায় পেঁপে রাখতে পারেন। কারণ, পেঁপের ভেতর রয়েছে পাপায়া নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়িয়ে দেয়।
  • দই-চিড়া-কলা গাস্ট্রিকের সমস্যা নিরসনে এক অসাধারণ খাবার।  দই ও কলা হজমে সাহায্য করে।
  • তরমুজে রয়েছে পটাশিয়াম যা গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সঙ্গে তরমুজে থাকা ৯২ শতাংশ পানি দেহের পানিশূন্যতা দূর করতে দারুণ ভূমিকা রাখে।
  • ইফতারের শুরুতেই একবারে বেশি পানি না খেয়ে, একটু গলা ভিজিয়ে ২টি খেজুর খান- নামাজ পড়ে বাকি খাবার গ্রহণ করুন। এতে করে অস্থিরতা কাজ করবে না, গ্যাসও থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
  • আঁশ জাতীয় ফল আর সবজি বেশি করে খান। আঁশ রয়েছে যেমন –

পেয়ারা- প্রতি ১০০ গ্রামে ৫.৪ গ্রাম
আমড়া- প্রতি ১০০ গ্রামে ৫.৭ গ্রাম.ঢেড়স- প্রতি ১০০ গ্রামে আশ ৩.২ গ্রাম
বেগুন- প্রতি ১০০ গ্রামে ৩গ্রাম
সজনে- প্রতি ১০০ গ্রামে ৪.৮ গ্রাম ।

  • ডিম, ডিমের সাদা অংশ বা ডিমের বিকল্প খাবার রাখতে পারেন (ভাজা নয়)।
  • মধু, কম অ্যাসিডযুক্ত শাকসবজি (সাদা আলু, গাজর)
  • কম চিনি, কম অ্যাসিডযুক্ত ফল (কুমড়ো, ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, আপেল) তালিকায় রাখতে পারেন। বিদেশী ফলের সামর্থ্য না থাকলে দেশি ফল খাবেন। আমাদের দেশি ফলেও গুনাগুনের অভাব নেই।
  • ইফতারিতে স্যুপ নুডুলস, ভাত-সবজি-মাছ-সালাদ, গমের রুটি এবং ঘরে বানানো পাস্তা ইত্যাদি খাবার রাখতে পারেন।
  • হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন, তাতে করে পেট পরিষ্কার থাকবে।
  • ভেষজ খাবার যেমন- আ্যলোভেরা, পুদিনা পাতা, রসুন ইত্যাদি হজম ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে গ্যাস বৃদ্ধি রোধ করবে।

ইমিউনিটির কাছে ভাইরাসের হার

এসিডিটি নিয়ন্ত্রণ কীভাবে এবং কী নিয়মে করবেন তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

  • একদম খালিপেটে ফল খাবেন না।
  • যাদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তারা সালাদে টমেটো দেবেন না। তাছাড়া টমেটো সসও এড়িয়ে যাবেন। কারণ টমেটোতে ম্যালিক অ্যাসিড ও সাইট্রিক অ্যাসিড আছে, যা পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি করে।
  • সাইট্রাস জাতীয় ফল যেমন- কমলা, লেবু, জাম্বুরা ইত্যাদি খালি পেটে খাবেন না।
  • চকলেট, আইসক্রিম, কোক, পাউরুটি, লাল মাংস, আলুর চিপস, প্রক্রিয়াজাত মাংস, ফাস্ট ফুড, প্যাস্ট্রি, বেকড পণ্য, মেরিনেডস, সালসা, মেয়নেজ, ক্রিমি সস খাবেন না।
  • বাদাম খেতে পারেন, তবে ৫-৬টি। ইফতারিতে নয়, বাদাম খাবেন রাতে।
  • পেঁয়াজের ভুনা তরকারি এড়িয়ে চলুন।
  • ঝাল ও অতিরিক্ত তেলে ভাজা এবং মশলাযুক্ত খাবার খাবেন না।
  • নিয়মিত শরীরচর্চা করবেন।
  • অবস্থা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ। দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খেলে তাদের ভবিষ্যতে আয়রন, ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়ামের অভাব দেখা দেবে। এমনকি হাড় ক্ষয়, অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা সেই সঙ্গে শরীরে কিছু রোগজীবাণু প্রবেশের সক্ষমতা বেড়ে যায়। এমনকি কিডনিতে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সঠিক খাদ্যাভাস ও সাথে শরীরচর্চা আপনাকে Gastritis থেকে দেবে স্বস্তি।

গ্যাস্ট্রিক গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান রোজায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রোজায় সুস্থতার টিপস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর