Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভিন্নভাবে দেখা এক ঈদ


২৪ মে ২০২০ ১৮:৫২

ঢাকা: ‘এবারের ঈদ দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে, এও কী সম্ভব? নাটক সিনেমায় হয়তো এমন ঘটনা দেখলে বিশ্বাস করা যেত। কিন্তু আমাদের জীবনে ঈদ এভাবে আসবে তা কখনো কল্পনাও করিনি’— কথাগুলো বলছিলেন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী আজমেরী হক বাঁধন।

অনিশ্চয়তা, ভয়, দুশ্চিন্তা, হতাশা— সবমিলিয়ে এক অপরিচিত ঈদের অভিজ্ঞতা নিচ্ছি আমরা। করোনার কারণে থমকে যাওয়া বিশ্ব আমাদের ভিন্নরকম এক ঈদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। যে ঈদে বাবা-মা তার দূরে থাকা সন্তানকে কাছে পাবে না, কারও সঙ্গে কোলাকুলি হবে না, ভুলেও কারও বাসায় যাওয়ার কথা ভাবা যাবে না, বন্ধু-আত্মীয়-পরিজন সবার কাছ থেকে বঞ্চিত হয়ে শুধুই ঘরবন্দী হয়ে থাকাই নিয়ম। যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঈদের উৎসব- আনন্দ- আতিথেয়তা- আড্ডা- ঘোরাঘুরি সবকিছুই এবারের ঈদে নিষিদ্ধ তালিকায়।

বিজ্ঞাপন

‘২০২০’ সাল যেন খাপছাড়া একটি বছর। বছরের শুরু থেকেই সারাবিশ্ব করোনা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। আমাদের দেশের অবস্থা আরও করুণ। করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আম্পান জনজীবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। যাকে বলে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। উপকূল এলাকার হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

এবারের ঈদ নিয়ে কোন উচ্ছ্বাস নেই— জানালেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আঁখি আলমগীর। তিনি বলেন— এবার ঈদ ও মেয়ের জন্মদিন একইদিনে হওয়ায় কিছুটা ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে ঠিকই, তবে উদযাপন করবেন একেবারেই ঘরোয়াভাবে।

ঈদের দিন কী করবেন জানতে চাইলে আঁখি আলমগীর বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে মন এত খারাপ যে কোনকিছু পালন করার ইচ্ছা নেই। মেয়ের জন্মদিন বলে কেক বানাবো। আর হালকা কিছু খাবার বানিয়ে একেবারে ঘরোয়াভাবে পালন করবো দিনটি।’

বিজ্ঞাপন

নিতান্ত প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যান না এই শিল্পী। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে বাইরে গেলেও ভয় লাগে। গ্লাভস, মাস্ক পরে যে প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে হয় তাতে বিরক্তির চেয়ে আতঙ্ক থাকে দ্বিগুণ।’

ঘরে বসে ঈদ উদযাপন অবশ্য নতুন নয় প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের কাছে। ঈদের দিন সাধারণত ঘরেই থাকেন। তবে প্রতিবার ঈদে বাসায় মেহমান আসে, এবার তা হবে না— এজন্য খারাপ লাগছে তার। তিনি বলেন, ‘ঈদের এই সময়কে কোনভাবেই আপন ভাবতে পারছি না। পর্যুদস্ত অবস্থা থেকে বিষণ্ণ ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে।’

এবার ঈদের আনন্দ অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার সুযোগ না থাকলেও কিছুটা ভিন্নরকম বার্তা দিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তিনি বলেন, ‘অভুক্ত বা সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যদি ঈদের দিন আমার বাসায় আসে তাহলে আমি তাদেরকে মন ভরে আপ্যায়ন করবো বলে ভেবেছি।’

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছে এদেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন থেকে রোজগার বন্ধ থাকায় জীবনের ভার বয়ে চলাই যেখানে কঠিন, সেখানে ঈদের আনন্দ মনকে কতটুকুই বা ছুঁতে পারে? কেউ জীবিকা হারিয়েছে, কেউ চাকরি থাকলেও পায় না বেতন। প্রত্যেকবার ঈদে যে বোনাস পেয়ে অনেক সাদ-আহ্লাদ পূরণ করার পরিকল্পনা থাকে এবার তারও জো নেই।  বোনাস তো দূরের কথা বেতনও ঠিকমতো না পেয়ে চরম অনিশ্চয়তার আঁধারে দিন কাটাচ্ছে  অসংখ্য চাকরিজীবী। তাই এবারের ঈদ সবার কাছেই অচেনা-অজানা।

অভিনয়শিল্পী আজমেরী হক বাঁধনও শোনালেন একই কথা। অন্যবারের মতো এবার ঈদে পোশাক কেনার আনন্দ নেই, কোথাও ঘুরতে যাওয়ার নেই পরিকল্পনা, এমনকি বাসায়ও কাউকে ডাকেননি।

তবে ঘরে থাকাই এখন আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করেন আজমেরী হক বাঁধন। তিনি বলেন, ‘যারা অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। আর ঘরে থেকে নিজেকে ও পরিবারের সকলকে সুস্থ রাখা।’

‘ঈদের দিন মায়ের হাতের রান্না খাব। আমি রোস্ট ও ডেজার্ট বানাবো। আমরা ঈদের পোশাক কিনিনি। বাইরেও যাব না। আনন্দের চেয়ে নিরাপদ ও সুস্থ থাকাই এখন সবচেয়ে জরুরি’ —মন্তব্য আজমেরী হক বাঁধনের।

ঈদ উদযাপন ঈদের আনন্দ করোনাকালে ঈদ

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর