করোনায় মানসিক শক্তি ধরে রেখে নিজেকে ঠিক রাখা
৫ জুন ২০২০ ১১:৫০
যেকোনো মহামারীতে মানুষের শরীরের পাশাপাশি তার মনোজগত, সামাজিক আচরণ, অর্থনৈতিক অবস্থা; সবকিছু বিপন্ন হয়। কোভিড-১৯ রোগটি প্রায় অজানা। এই নতুন প্রায় অজানা রোগ নিয়ে ভীতি স্বাভাবিক। করোনা সহজেই সংক্রমিত হয়, আর সংক্রমিতদের একটা অংশ মৃত্যুবরণ করেন। তাই সংক্রমণ আর মৃত্যুর ভয়, কাজ বা চাকরি হারানোর ভয়, সংক্রমিত হলে চিকিৎসা না পাওয়ার শঙ্কা, সবকিছু আমাদের উদ্বিগ্ন আর আতঙ্কিত করে। তার উপর সত্য-মিথ্যা নানা তথ্য মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
করোনার এই সময়ে আতঙ্কিত হওয়া, উদ্বিগ্ন হওয়া, বিষন্ন হওয়া, রেগে যাওয়াই স্বাভাবিক। মনে আতঙ্ক থাকার কারণে মানুষের চিন্তা, আবেগ আর সেই সঙ্গে আচরণের পরিবর্তন হয়।
উদ্বিগ্নতা আর আতঙ্ক আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সাধারণ ভীতি বা রোগ নিয়ে চিন্তা করা ভালো- সেটি আমাদের সচেতন করে, সতর্ক করে। কিন্তু সাধারণ ভীতি বা চিন্তার বদলে যদি আতঙ্ক বা উদ্বিগ্নতা তৈরি হয় সেটি খারাপ। এসময় চিন্তাশক্তি বিকল হয়ে যায়। সে কারণে সব কাজকর্ম এলোমেলো হয়ে যায়। ফলে মাথা ঠান্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে প্রায়ই ভুল হয়।
ফেসবুকে দেখে বা প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ভয়াবহতা
মনোবল ধরে রাখতে যা যা করা উচিৎ তা হলো-
- কোনাভাবেই বিভ্রান্তির শিকার হওয়া যাবে না। কিভাবে এই রোগ ছড়ায়, কথিত চিকিৎসা কী কী আছে; এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ‘অমুকে বলে’ ‘আমি শুনেছি’ সেসবের উপর মোটেও আস্থা রাখবেন না। কেবলমাত্র উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের উপর বিশ্বাস রাখুন। সেখানেও গড়বড় থাকতে পারে, কিন্তু একেবারে অবৈজ্ঞানিক তথ্য সেখান থেকে পাবেন না।
- দৈনন্দিন রুটিন ঠিকমতো মেনে চলতে হবে। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাবেন। রাতের ঘুম ঠিকঠাক হলে দিনে সক্রিয় থাকতে পারবেন।
- অফিসে বা কাজের জায়গায় নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব মেনে চলবেন। বাসায় ফিরে যথেষ্ট নিরাপত্তা মেনে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করবেন।
- মনের জোর বাড়াতে মাথায় রাখুন যে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীকেই হাসপাতালে যেতে হয় না। বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েই ভালো করা সম্ভব।
- কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরা মানুষের কাহিনী শুনুন। সেগুলো শুনে-জেনে নিজের মনে সাহস বাড়ান।
- দিনে দুইবারের বেশি কোভিড-১৯ এর সংবাদ দেখবেন না।
- সারাদিন ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ত থাকবেন না। মনে রাখবেন উদ্বিগ্নতা আর আতঙ্ক আপনার হৃদস্পন্দনের গতি বাড়ায় যা আপনার শরীরে অক্সিজেনের স্যাচুরেশন কমিয়ে দিতে পারে।
- মনোবল অটুট রেখে শান্ত, স্থির হয়ে কোভিড-১৯ মোকাবিলার বিজ্ঞানসম্মত উপায়গুলো মেনে চলুন। আর মানসিকভাবে বেশি বিপন্নতা বোধ করলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে ইতস্তত করবেন না।
লেখক- সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট