আত্মহত্যা: অবহেলা নয়, চাই মনের যত্ন
১৫ জুন ২০২০ ১৪:১৩
হতাশা, গ্লানি, ব্যর্থতা কিংবা তীব্র অপমানের কারণে মানুষের মনে জন্ম নেয় একরাশ অভিমান। এমন পরিস্থিতিতে একসময় নিজেকে মূল্যহীন ভাবতে থাকে কেউ কেউ। বেঁচে থাকার উৎসাহ হারিয়ে শেষপর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতও একই পথ বেছে নিলেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরম হতাশায় থাকা ব্যক্তির প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। অনেকসময় আমাদের একটু প্রচেষ্টাই একটি প্রাণকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে নতুন জীবন উপহার দিতে পারে। আত্মহত্যাকারীরা যখন নতুন জীবনে ফিরে আসেন তখন তারা বুঝতে পারেন জীবন আসলেই কতটা সুন্দর- এমনটাই উঠে এসেছে নানা গবেষণার ফলাফলে।
মৃত্যুর পরে আফসোস করলেও সেই মানুষটি আর ফিরে আসে না। তাই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে আগে থেকেই। আত্মহত্যা সম্পর্কে আমাদের সমাজে কিছু মিথ বা প্রচলিত ভুল ধারণা আছে। এই মিথগুলো সম্পর্কে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে ভারতের স্বনামধন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সৌমিত্র পাথারের কিছু পরামর্শ উঠে আসে। সারাবাংলার পাঠকদের জন্য তা অনুবাদ করা হলো-
আলোচনা করতেই হবে
আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনা মানে এই নয় যে অন্যকে আত্মহত্যায় উৎসাহিত করা। বরং এই সম্পর্কিত সচেতনতামূলক আলোচনার মাধ্যমেই কঠিন পরিস্থিতিতে মনোবল ধরে রাখার উপায় সম্পর্কে মানুষ জানতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যা সম্পর্কে সচেতনতামূলক আলোচনা যত বাড়ে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ততটাই কমে যায়।
নিবিড় ভালোবাসা প্রয়োজন
নিজেকে ভালোবাসে না এমন মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া যায় না। নিজের জীবনটা শেষ হয়ে যাক এটা কেউ চায় না। কিন্তু হঠাৎ কোন খারাপ পরিস্থিতিতে মানুষ ভাবতে থাকে তার জীবনের আর কোন মূ্ল্য নেই। তাকে দিয়ে কারো উপকার হবে না। তখন আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন উপায় খুঁজে পায় না।
এইরকম পরিস্থিতিতে সেই ব্যক্তিকে নিবিড় ভালোবাসা দিতে হবে। তার গুণগুলো তুলে ধরতে হবে। পরিবার ও কাছের মানুষের প্রতি তার দায়িত্বগুলো বোঝাতে হবে। তার কোন কাজ নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা যাবে না।
মনের যত্ন দরকার
গভীর হতাশা থেকেই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আত্মহত্যার আগে হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তির মনের ভাব প্রকাশ পায়। ব্যক্তির কথা, আচরণ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে সেই হতাশার কথা কিছুটা হলেও বোঝা যায়। অনেকসময় পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের কাছে বেঁচে থাকার অনিচ্ছার কথাও প্রকাশ করেন সেই ব্যক্তি।
এসব ব্যাপারকে কখনই অবহেলা করা ঠিক না। হতাশার কোন লক্ষণ প্রকাশ পেলেই বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে। তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে পরিবার ও কাছের মানুষদের জানিয়ে রাখতে হবে। সবার ভালোবাসায় একজন মানুষ হতাশা থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে পারে।
মন খারাপকে অবহেলা না
অনেকসময় অন্যের মন খারাপকে আমরা পাত্তা দেই না। ভাবি, সামান্য ব্যাপার হয়তো। আজ মন খারাপ, কাল ভালো হয়ে যাবে। এভাবে চিন্তা করা মোটেও ঠিক না।
চিকিৎসক সৌমিত্র পাথেরে বলেন, যে ব্যক্তির মন খারাপ তিনি কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তা আমরা জানি না। এজন্য কারো মন খারাপ দেখে অবহেলা করা ঠিক না। যদি সম্ভব হয়, তার পাশে দাঁড়ান। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তাকে নিয়ে যান।
ক্ষণস্থায়ী ভাবনা
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ সাময়িকভাবেই আত্মহত্যার কথা ভাবে। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে হঠাৎ করে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। আত্মহত্যা দীর্ঘদিনের ভাবনা থেকে হয় না।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, আমরা যদি সেই ব্যক্তির পাশে সঠিক সময়ে দাঁড়াতে পারি এবং তাকে বোঝাতে পারি সবাই তাকে সহযোগিতা করবে তাহলে তিনি মানসিকভাবে কিছুটা শক্তি পাবেন। পরিবার, বন্ধু ও চিকিৎসকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে হতাশাগ্রস্ত মানুষকেও নতুন জীবন ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব।
মানসিক অসুস্থতা দায়ী
যেকোন মানসিক অসুস্থতা আত্মহত্যার জন্য দায়ী বলে মনে করেন ডা. সৌমিত্র পাথেরে। তিনি বলেন, ভারতের শতকরা ৫০ ভাগ আত্মহত্যার ঘটনার পেছনে কারণ ছিল মানসিক নানা ধরনের রোগ।
মনে রাখা ভালো…
গবেষণায় দেখা গেছে, এক তৃতীয়াংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে পারিবারিক সহিংসতা, ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন ও মাদকাসক্ত হয়ে। এই বিষয়গুলোতে আরো সচেতন হওয়া দরকার। তাহলে আত্মহত্যার মতো ঘটনা কমে যাবে।
শরীরের মতো মনের যত্নও খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনের সুস্থতা বজায় রাখতে প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করলে হতাশা কাটিয়ে নতুন জীবনে ফিরে আসা সম্ভব।
আত্মহত্যা নয় আত্মহত্যা সংক্রান্ত মিথ আত্মহত্যার কারণ চাই সচেতনতা