বিষণ্ণতার ৭ লক্ষণ
২০ জুন ২০২০ ১০:৩০
প্রায়ই বিভিন্ন কারণে আমাদের মন খারাপ হতে পারে। কিন্তু সেই মন খারাপকে কখন বিষণ্ণতা বলা যাবে? কিছু লক্ষণ দেখলেই বোঝা যাবে কেউ বিষণ্ণতায় ভুগছেন কিনা। নিজে বা পরিচিত কেউ বিষণ্ণতায় ভুগলে একজন মনোবিদের শরনাপন্ন হতে ভুলবেন না। আসুন দেখে নেই বিষণ্ণতার ৭ লক্ষণ।
১. সহজেই বিরক্ত হয়ে যাওয়া
অনেকেই ভাবেন, বিষন্নতা মানেই বুঝি অত্যন্ত মন খারাপ থাকা। কখনো কখনো বিষণ্ণতায় ভুগছেন এমন কেউ আশাহীনতা ও দুঃখ বোধ না করে অত্যন্ত রাগ ও বিরক্তি অনুভব করতে পারেন। নিজের বা পরিচিত কারও বিরক্তিবোধ যদি দিন দিন বাড়তেই থাকে তবে তা অবহেলা করবেন না। নিজের ক্ষেত্রে যদি এমনটা হয় তবে নিজের অধৈর্য স্বভাব, স্ট্রেস আর কাজের চাপকে দোষারোপ করবেন না। কিছুটা সময় দিন এবং ভেবে দেখুন আপনি ডিপ্রেশনে বা বিষণ্ণতায় ভুগছেন কিনা। যদি হয়, তবে মনোবিদের পরামর্শ নিন। আর পরিচিত কারও এমন হলে তাকে ভুল না বুঝে তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করুন।
২. ঘুম না হওয়া বা অতিরিক্ত ঘুম
এক বা দুই রাত ঘুম ঠিকঠাক না হলে তা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নাই। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ইনসমনিয়া বা ঘুমহীনতায় ভুগলে সেটি নিয়ে সতর্ক হন। বিশেষ করে সারাদিন ক্লান্ত থাকার পরেও যদি রাতে ঘুম না আসে তবে তা বিষণ্ণতার লক্ষণ হতে পারে।
এদিকে বিষণ্ণতায় ভুগলে যেমন ঘুমের সমস্যা হতে পারে, তেমনি অতিরিক্ত ঘুমও পেতে পারে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারে না, আবার রাতে খুব দ্রুত ঘুম চলে আসে। এমনকি পর্যাপ্ত ঘুমের পরও দিনের বেলায় কয়েকবার ঘুম পায়।
মোটকথা আপনার ঘুমের অভ্যাস বদলে গেলে এবং সেটা সহজে ঠিক না হলে সেটির জন্য দায়ী কারণগুলো খুঁজে বের করুন ও সমাধান করুন। নিজে বা কারও সাহায্যে না পারলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৩. শরীরের নানা জায়গায় ব্যাথা
কথায় বলে মন ও শরীরের সুস্থতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মনের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে শুরীরের স্বাস্থ্যও ঠিক থাকবে না। বিষণ্ণতায় ভুগছেন এমন অনেক রোগীই বলে বোঝাতে পারেন না এমন সব ব্যাথার কথা বলেন। যদিও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাথা বাড়তে পারে কিন্তু একজন সুস্থ সবল মানুষের হঠাত করে পিঠে বা কোমরে ব্যাথা, মাথাব্যাথা, পেশিতে ব্যাথা বা টান লাগা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে তা বিষন্নতার লক্ষণ হতে পারে।
৪. প্রচণ্ড দুর্বল বোধ করা
বিষণ্ণতায় ভুগলে হঠাত করে ভীষণ দুর্বল লাগতে পারে। দিনের অধিকাংশ সময় কাজ করার শক্তি না পাওয়া ও অবসন্ন লাগলে সেটি নিয়ে সচেতন হতে হবে। এমন হলে অনেকেই ভাবেন, হয়ত ঘুম কম হওয়ার কারণে কাজের অতিরিক্ত চাপে এমনটা হচ্ছে।
কিন্তু আগের তুলনায় আপনার কাজের গতি পরীক্ষা করে দেখুন। যদি সামান্য কোন কাজ করতেও আগের তুলনায় দীর্ঘ সময় লাগে অথবা আপনি ক্লান্ত হয়ে যান তবে সেটি হতে পারে বিষন্নতার লক্ষণ। দীর্ঘদিন ধরে এমন হলে একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন।
৫. তুচ্ছ কারণে অপরাধবোধ
জীবনের সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করা কোন সুস্থ অভ্যাস নয়। যদি ছোট খাট প্রতিটি ঘটনা অথবা দুর্ঘটনার জন্য নিজেকে দায়ী করতে থাকেন তবে আপনি হয়ত বিষন্নতায় ভুগছেন।
অনেক বিষন্নতার রোগী আবার নিজেকে অযোগ্য ভাবেন। নিজেকে নিজেই বিচার করুন। নিজের সঙ্গে নিজেই কথা বলুন। যদি সেই কথোপকথনে নিজের প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ ও সমালোচনাপ্রবন হন, তবে সেটি হয়ত বিষণ্ণতার লক্ষণ। সতর্ক হন ও সাহায্য নিন।
৬. বেপরোয়াভাব
যাদের দেখলে খুব বেপরোয়া লাগে, তারাই হয়ত ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। জুয়াখেলা, বিপদজনক যৌনাচার, যখন তখন যার তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ইত্যাদি আচরণ অনেকসময় অন্য কিছু নির্দেশ করতে পারেন। হতে পারে এটা অপ্রীতিকর কোন আবেগ ঢেকে রাখার আচরণ।
আপনি নিজে বা আপনার পরিচিত কেউ যদি সম্প্রতি হঠাত করেই বিপদজনক কোন কাজে নিজেকে জড়িত করে ফেলে তবে সেটি হতে পারে তার ভেতরে বয়ে চলা কোন ঝড়ের কারণে। দুঃখজনক ব্যাপার হল এইসব মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা খুবই সাময়িক এবং তা শুধুমাত্র স্বল্প সময়ের জন্য উপশম করবে। এবং সময়মত চিকিৎসা না হলে তা ভবিষ্যতে খারাপ ফল বয়ে আনতে পারে।
৭. মনোযোগে সমস্যা
যদি অনেকদিন ধরে এমন হয় যে আপনি মনোযোগ দিতে পারছেন না বা কিছু করতে গেলে আপনার মন শূন্য হয়ে যাচ্ছে তবে সতর্ক হন। একইসঙ্গে বিষন্নতার রোগীরা অনেকটা ভুলোমনা হন। অনেকসময় তারা ঘরের চাবি, কাগজপত্র বা জরুরি এমন জিনিস কোথায় রেখেছেন তা মনে করতে পারেন না বা ভুলভাল জায়গায় রেখে দেন।
যদিও আজকের ডিজিটাল বিশ্বে আমরা নানাভাবেই অমনোযোগী হতে পারি কিন্তু মনোযোগ হারানর কাজটি নিয়মিত এবং দীর্ঘসময় ধরে ঘটতে থাকলে সতর্ক হন। অনেকসময় এর সঙ্গে যোগ হতে পারে হঠাত করে মুড অর্থাৎ মানসিকতার পরিবর্তন। নিয়মিত কাজ করতে সমস্যা অনুভব করলে একজন মনোবিদের সাহায্য নিন।