হার্ড ইমিউনিটি দূর অস্ত: গবেষণা
৭ জুলাই ২০২০ ০১:৫৩
স্পেনে বড় পরিসরে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়েছে। ফলে কথিত হার্ড ইমিউনিটি অর্জন আদৌ সম্ভব কি না সে প্রশ্ন আবারও জোরদার হয়েছে। খবর সিএনএন।
সোমবার (৭ জুলাই) বিখ্যাত চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল লেনসেটে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে স্পেনের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে দেখানো হয়, দেশটির ৯৫ শতাংশ নাগরিক এখনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন এবং তারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। অর্থাৎ তাদের শরীরে ভাইরাসটি প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়নি। উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে অন্যতম ভুক্তভোগী দেশ স্পেন। দেশটিতে এ পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া স্পেনে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৩ লাখ মানুষ।
ওই গবেষণায় উঠে আসে, স্পেনে ভাইরাসটির ব্যাপক প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও এখনও ৯৫ ভাগ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। উল্লেখ্য, হার্ড ইমিউনিটি অর্জন তখনই সম্ভব হয় যখন কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ায় একটি জনগোষ্ঠীর বড় অংশ আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে গণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেও হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা হয়।
করোনাভাইরাসের এখনও কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। ফলে প্রাকৃতিক সংক্রমণের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের পথে হাঁটছে কিছু কিছু দেশ। তবে দেহে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি থাকার কারণে কেউ আবার সংক্রামিত হতে পারে কি না বা এটি কতক্ষণ ভাইরাস থেকে মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারে তা এখনও পরিষ্কার নয়।
ওই গবেষণায় দেখা গেছে স্পেনে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা দেশটির রাজধানী মাদ্রিদে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনের হার প্রায় ১০ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে স্পেনের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ নগরী বার্সেলোনায় এ হার প্রায় ৭ শতাংশ। তবে উপকূল অঞ্চলের বেশিরভাগ প্রদেশেই এ হার ৫ শতাংশেরও কম।
দ্য ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল স্পেনের ওই গবেষণাটি সম্পর্কে জানায়, দেশব্যাপী ৬১ হাজার নমুনা সংগ্রহ করে এ গবেষণাটি করা হয়। এটি এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ইউরোপে সর্ববৃহৎ গবেষণা।
দুই প্রধান গবেষক ইসাবেলা একেরলে ও বেঞ্জামিন মেয়ের বলেন, ‘গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে আমরা বলতে পারি, প্রাকৃতিক সংক্রমণের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের চেষ্টা শুধুমাত্র উচ্চমাত্রায় অনৈতিকই নয় বরং এটি অর্জনযোগ্যও নয়’। ইসাবেলা ও বেঞ্জামিন যথাক্রমে দ্য জেনেভা সেন্টার ফর ইমার্জিং ভাইরাল ডিজিজ- এর প্রধান এবং ইউনিভারসিটি অব জেনেভার ভাইরোলজিস্ট।
গবেষণাটির অন্যতম গবেষক মারিনা পল্যান বলেন, ‘কিছু বিশেষজ্ঞ ঠিক করেছেন কোনো জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০ শতাংশ সেরোপ্রেভ্যালেন্স নিশ্চিত হলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন হয়েছে বলা যেতে পারে। তবে আমরা এ সংখ্যা থেকে এখনও অনেক দূরে’।